সুলতান’স ডাইনের ভাগ্য নির্ধারণ সোমবার

সুলতান’স ডাইনের ভাগ্য নির্ধারণ সোমবার

ফাইল ছবি

রাজধানীর অভিজাত রেস্তোরাঁ সুলতান ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে মাংস দেওয়া নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার শুনানি আগামী সোমবার (১৩ মার্চ) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। এ ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে ওইদিন সকাল ৯টায় ভোক্তা অধিকারের কাওরান বাজার অফিসে মাংস সরবরাহকারীসহ সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

শুনানির দিনই রায় দেওয়া হবে বলে জানান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মঞ্জুর শাহরিয়ার।

গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) রাজধানীর গুলশানে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সাত প্যাকেট সুলতান ডাইনের গুলশান শাখা থেকে কাচ্চি বিরিয়ানি কিনে আনেন। সেই বিরিয়ানি খাওয়ার এক পর্যায়ে খাসির মাংস নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হলে তারা ওই শাখার নাম্বারে কল করে। পরবর্তীতে দুজন লোক নতুন খাবারের প্যাকেট নিয়ে আসে।

ওই কাস্টমাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজে এসে অভিযোগ করে বলেন, ‘মাংসগুলো খাসি বাদ দিয়ে কোনো জন্তু জানোয়ারের মনে করে তাদের ফোন করা হয়। কারণ মাংসের হাড়গুলো ছিল অতিরিক্ত চিকন। যা কুকুর কিংবা বিড়ালের হতে পারে। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়।’

তারা অভিযোগ করে বলেন, এক পর্যায়ে তারা টাকা অফার করেন। না পেরে তারা একটি পত্রিকার ‘কথিত সাংবাদিকের’ ভয় দেখান। ওই সাংবাদিক ফোন করে থ্রেটও করেন- যা ভুক্তভোগীরা ফেসবুকে লেখেন। এছাড়া কাস্টমাররা বিরিয়ানি, মাংস, হাড় এবং কথোপকথনের ছবি ও ভিডিও ফেসবুক পেজে ছাড়েন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

এ ঘটনার পর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মঞ্জুর শাহরিয়ারের নেতৃত্বে একটি দল সুলতান ডাইনের গুলশান শাখায় অভিযানে যায় বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ)।

ভোক্তা অধিকারের টিমকে বলা হয়েছিল, সুলতান ডাইনে গেলে তারা খাসি জবাই করে দেখাবেন। সেখানে যাওয়ার পর তা তারা দেখাতে পারেনি। তাদের জিজ্ঞেস করা হয়, আপনারা কোনো ভেন্ডরের মাধ্যমে মাংস নেন কিনা? জবাবে তারা জানায়, না আমাদের কোনো ভেন্ডর নেই। আমরা নিজেরাই খাসি জবাই করি। পরবর্তীতে সুলতান ডাইন জানায়, আমরা ভেন্ডরের মাধ্যমে কাপ্তান বাজার থেকে মাংস নিয়ে থাকি।

ভোক্তা অধিকার টিম প্রশ্ন করে, আজকে কত কেজি মাংস এনেছেন? তার স্লিপ দেন। তারা কোনো স্লিপ দিতে পারেনি। উত্তরে সহকারী মহাব্যবস্থাপক আশরাফ জানায়, ১৫০ কেজি মাংস এসেছে।

এরপর মা বাবার দোয়া গোসত বিতানের মালিককে ফোন করে মঞ্জুর শাহরিয়ার। ফোনে গোসত বিতানের বলেন, ১২৫ কেজি মাংস নিয়ে গেছে তারা। খাসি জবাইয়ের সময় সুলতান ডাইনের পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত থাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন থাকে না। মাঝেমধ্যে থাকেন। অথচ সুলতান ডাইনের মালিক বলেছেন, প্রতিদিন তারা উপস্থিত থাকেন।

সুলতান ডাইনের ম্যানেজার রুবায়েত আলমকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি গোসত নিয়ে এসেছেন? নাকি ওনারা দিয়ে গেছে। তখন তিনি বলেন, আমি দেখে মাংস রেখে আসি। পরে তারা দিয়ে গেছে। এরপর গোসত দোকানদার বলেন, না ওনারা গোসত নিয়ে গেছেন।

এরপর মঞ্জুর শাহরিয়ার বলেন, গোসতের দোকানদার বললেন ১২৫ কেজি। আপনারা বলছেন ১৫০ কেজি। তাহলে বাকি ২৫ কেজি মাংস কোথা থেকে এনেছেন। জবাবে সুলতান ডাইন কর্তৃপক্ষ কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

এরপর ফ্রিজ দেখতে যায় টিম। ফ্রিজে কোনো মাংস ছিল না। তারা জানায়, সব মাংস রান্না হয়ে গেছে। তখন টিম জানায়, আমরা আসার আগেই সব মাংস চালাকি করে রান্না করে ফেলেছেন! সেদিনের ভিডিওতে যে চিকন চিকন হাড় দেখা গেছে সেগুলো কই? রান্না করা মাংস নিয়ে আসেন দেখি? রান্না করা মাংস নিয়ে আসলে মঞ্জুর শাহরিয়ার বলেন, সেদিনের হাড়ের সঙ্গে আজকের হাড়ের কোনো মিল নেই। সেদিনের হাড়ের চেয়ে আজকের হার অনেক মোটা ও খাটো।

সুলতান ডাইন কর্তৃপক্ষ জানায়, আমরা একদিনের খাবার আরেকদিন বিক্রি করি না। যেদিনেরটা সেদিনই শেষ হয়ে যায়।

জবাবে মঞ্জুর শাহরিয়ার বলেন, তাহলে ফ্রিজে চিকেন থাকল কিভাবে। আবার চিকেন বিরিয়ানি রয়েছে কিভাবে। তখন তারা কোনো জবাব দিতে পারেননি।

পরে মঞ্জুর শাহরিয়ার বলেন, আপনাদের কথার কোনো মিল নেই। কখন কি বলছেন তার মিল নেই। আপনাদের কথা যে কেউ শুনলে সন্দেহ পোষণ করবে। সেদিনের ভিডিওতেও সন্দেহজনক আচরণ ছিল। আজকে যা যা বলেছেন সব রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ১৩ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টায় উপস্থিত হয়ে শুনানিতে অংশ নেবেন। ওইদিনই আপনাদের রায় দেওয়া হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপপরিচালক মঞ্জুর শাহরিয়ার বলেন, ‘আমরা মাংস ল্যাবে পাঠিয়ে টেস্ট করব। আপনারাই দেখেছেন তাদের কথার সঙ্গে তথ্যের মিল নেই। সবকিছু তদন্ত হচ্ছে।’

একই দিন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একটি টিম অভিযান চালায় সুলতান ডাইনের গুলশান শাখায়। তারা মূলত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপদ খাদ্যের প্রতিবিধান মেনে চলছে কিনা তা দেখতেই এই অভিযান চালায়।

অভিযান শেষে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক কাওছারুল ইসলাম সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুলতান ডাইনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মান এতটাই নীচে যে বর্ণনা করা যাবে না। বাথরুম আর কিচেন পাশাপাশি। বাথরুম থেকে পানি এনে রান্নার কাজ করছে। বাসনকোসন মাজছে। থালাবাসন মাজার স্থান কালো দুর্গন্ধময় হয়ে গেছে। প্লেটসহ অন্যান্য বাসনকোসন অনেক পুরনো হয়ে গেছে। বাথরুম থেকে যে দুর্গন্ধ আসছে তাতে কিচেনে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। আমরা ১০ দিন সময় দিয়েছি। আগামী ২০ মার্চ আবারও তদারকি করতে আসব। সেদিন তারা মানে উন্নীত হতে না পারলে ব্যবস্থা নেব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুলতান ডাইনের গুলশান শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক আশরাফুল হক আশরাফ বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যা যা করতে বলেছেন আমরা তা প্রতিপালন করব। এছাড়া ভোক্তা অধিকার এসেছিল। সবকিছু দেখেছেন। আগামী সোমবার শুনানি আছে সেখানে থাকতে বলেছেন। আমরা থাকব।’