গ্রেফতারের পর কারাগারে ডয়চে ভেলে-কে সাক্ষাৎকার দেয়া নাফিজ

গ্রেফতারের পর কারাগারে ডয়চে ভেলে-কে সাক্ষাৎকার দেয়া নাফিজ

গ্রেফতারের পর কারাগারে ডয়চে ভেলে-কে সাক্ষাৎকার দেয়া নাফিজ

জার্মানির সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলে-কে র‍্যাবের নির্যাতনের বিষয়ে দেয়া এক সাক্ষাৎকারের পর আলোচিত নাফিজ মোহাম্মদ আলমকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।সোমবার তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করে পুলিশ।

এর আগে আদালতের তোলার পর ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক মো. শামীম হোসেন সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন।সম্প্রতি জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে-তে প্রচারিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে র্যাবের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেন মি. আলম।

তাকে গ্রেপ্তারের ডিএমপির মিডিয়া উইং একটি বিবৃতি দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে যে, সোমবার সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে দেশি-বিদেশি মাদকসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়।বিবৃতিতে বলা হয়, “অবৈধভাবে বিদেশি মদ ও বিয়ার বিক্রির উদেশ্যে নিজ হেফাজতে রেখেছিলেন নাফিজ মোহাম্মদ।”রাজধানীর ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ বি এম আসাদুজ্জামান অবশ্য বলেছেন, রবিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর আদালতে হাজিরের উদ্দেশ্যে সকাল আটটায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে তারা কোন রিমান্ড আবেদন করেননি।পুলিশ বলছে, মি. আলমের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে করা পর্ণোগ্রাফির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল।এছাড়া নতুন করে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।এ বি এম আসাদুজ্জামান বলেন, “পর্নোগ্রাফিরটাতে ওয়ারেন্ট আছে, আরেকটা মামলা নতুন হইছে।”

গত ৩রা এপ্রিল জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলে র‍্যাবের হেফাজতে নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে ‘বাংলাদেশের ডেথ স্কোয়াডের ভেতরের কথা’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রচার করে।এই তথ্যচিত্রে একটি সাক্ষাৎকার দেন নাফিজ মোহাম্মদ আলম। তিনি তার সাক্ষাৎকারে র‍্যাবের বিরুদ্ধে তাকে ২০২১ সালে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পর নানা ধরণের নির্যাতনের অভিযোগ করেন।যেখানে তিনি র‍্যাবের একটি 'টর্চার সেল'-এরও বর্ণনা দেন।২০২১ সালেও তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অ্যালকোহল বিক্রির অভিযোগ তোলা হয়েছিল।

বাংলাদেশের 'ডেথ স্কোয়াডের' ভেতরের কথা তথ্যচিত্র

ডয়চে ভেলে এবং নেত্র নিউজের যৌথ ঐ অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রটিতে নাফিজ মোহাম্মদ আলমকে নির্যাতনের অভিযোগ ছাড়াও টেকনাফে কথিত বন্দুকযুদ্ধে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও স্থানীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হকের নিহত হওয়ার ঘটনাটি তুলে ধরা হয়েছে।মাদকবিরোধী অভিযানে কক্সবাজারের টেকনাফে ২০১৮ সালের ২৬শে মে তারিখে মি. হক নিহত হন।ঐ তথ্যচিত্রে পরিচয় গোপন করে র্যাবের সাবেক দুজন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার প্রাচার করা হয়, যারা তাদের সাবেক বাহিনীর দ্বারা হত্যা, নির্যাতনসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বর্নণা দেন। ডয়চে ভেলে বলছে, তারা ঐ দুজনের প্রকৃত পরিচয় যাচাই করেছে।

তাঁকে বাসা থেকে র‍্যাব এবং ডিজিএফআই-র কর্মকর্তারা ডেকে নেওয়ার পর হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করে।এছাড়া ২০২১ সালে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে র‍্যাব এবং এই সংঘঠনটির ছয় জন কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে ডয়চে ভেলের তথ্যচিত্রে।তথ্যচিত্রে র্যাবের বিরুদ্ধতে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে সেগুলো 'সঠিক প্রতীয়মান হচ্ছে না' বলে সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

র‍্যাবে' যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা

মার্কিন অর্থ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে যে ছয় জন র‍্যাব সদস্যর উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয় তারা হচ্ছেন,

১. চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক, বর্তমানে পুলিশের মহাপরিদর্শক),

২. বেনজির আহমেদ (সাবেক র‍্যাব মহাপরিচালক,)

৩. খান মোহাম্মদ আজাদ (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, বর্তমানে সেনাবাহিনীতে কর্মরত),

৪. তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, সেনাবাহিনীতে কর্মরত)

৫. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, বর্তমানে সেনাবাহিনীতে কর্মরত) এবং

৬. মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, বর্তমানে বিজিবিতে কর্মরত)।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, গুরুতর মানবাধিকার লংঘনে জড়িত থাকার জন্য বেনজির আহমেদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর - যার ফলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হবেন।ওই বিজ্ঞপ্তিটিতে আরো বলা হয়েছিলে যে, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে যে র‍্যাব এবং অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ৬০০-রও বেশি লোকের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, এবং নির্যাতনের জন্য দায়ী।

সূত্র : বিবিসি