আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ ইবাদত ইতিকাফ

আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ ইবাদত ইতিকাফ

প্রতীকি ছবি

শুরু হয়েছে রমজানের শেষ দশক। রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিনের বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করতেন।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, ‘রমজান মাসের শেষ দশক শুরু হলেই নবি করিম (সা.) তাঁর কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন।

এ সময়ের রাতগুলোতে তিনি জেগে থাকতেন এবং ঘরের লোকদের সজাগ করতেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাসুল (সা.) রমজান মাসের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগির কাজে এতই কষ্ট স্বীকার করেছেন, যা অন্য সময় করতেন না।’

এ দশকের কিছু বিশেষ আমল হলো ইতিকাফ। আমাদের প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ইতিকাফ করেছেন, সাহাবায়ে কেরামও করেছেন, তাই আমাদের জন্যও ইতিকাফ করা সুন্নাত।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন : ‘ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, এরপর তাঁর স্ত্রীরা ইতিকাফ করেছেন।’ (বুখারি : ১৮৬৮; মুসলিম : ২০০৬)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান।’ (বুখারি : ১৯০৩)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। অতঃপর ওহি পাঠিয়ে আমাকে জানানো হলো যে, তা শেষ ১০ দিনে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইতিকাফ পছন্দ করে, সে যেন ইতিকাফে বসে।’ (মুসলিম : ১৯৯৪)।

এ দশকে ইতিকাফ ও শবে কদর অঙ্গাঙ্গি জড়িত। রমজানের বিদায়ি দশক হিসাবে এ দিনগুলোতে কোনোভাবেই হেলায়-ফেলায় কাটানো উচিত নয়। ইতিকাফ ও শবেকদর দুটিই পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আমল। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মতোই নাজাতের দশককে আমল, দোয়া-দরুদ ও মুক্তি প্রার্থনার মাধ্যমে কাটানো উচিত। ইমাম আবু হানিফার মতে যে মসজিদে জামাত সহকারে নামাজ হয় না, সে মসজিদে ইতিকাফ বৈধ নয়। ইতিকাফ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো-মুসলমান হওয়া, পাগল না হওয়া, বালেগ হওয়া, নিয়ত করা, ফরজ গোসলসহ হায়েজ-নেফাজ থেকে পবিত্র হওয়া, রোজা রাখা। মসজিদে ইতিকাফ করা।

ওয়াজিব ইতিকাফ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা যেন তাদের মানত পূর্ণ করে।’ (সুরা হজ : ২৯)। মান্নতের ইতিকাফ পূর্ণ করা ওয়াজিব। তাতে কোনো শর্ত থাকুক বা না থাকুক। যেমন-কেউ যদি বলে, ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইতিকাফ করব’, এ অবস্থায়ও ইতিকাফ করা ওয়াজিব বলে সাব্যস্ত হবে।

সুন্নত ইতিকাফ : রমজানের ২১ তারিখের রাত থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত সুন্নত ইতিকাফের সময়। কারণ রাসুল (সা.) প্রত্যেক বছর এ দিনগুলোতেই ইতিকাফ করতেন। এ কারণে এটাকে সুন্নত ইতিকাফ বলা হয়। রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ সুন্নতে মোয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। অর্থাৎ মহল্লার যে কোনো একজন ইতিকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ইতিকাফ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লার একজন ব্যক্তিও যদি ইতিকাফ না করে তবে মহল্লার সবার সুন্নত পরিত্যাগের গুনাহগার হবে।

নফল ইতিকাফ : সুন্নত ও ওয়াজিব ইতিকাফ ছাড়া বাকি সব ইতিকাফ নফল। এ নফল ইতিকাফ যে কোনো সময় করা। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য ইতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা যতক্ষণ চায় করতে পারে। এমনকি যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে নফল ইতিকাফের নিয়ত করা সুন্নত। রোজারও প্রয়োজন নেই।

উত্তম ইতিকাফ : ইতিকাফের সর্বোত্তম স্থান মসজিদুল হারাম, এরপর মসজিদে নববি, এরপর মসজিদে আকসা। এরপর জুমআ মসজিদ। যাদের সামর্থ্য আছে তারা যেন মসজিদে হারামে ইতিকাফ আদায় করে। এটি সওয়াব ও জামাতের দিক থেকে সর্বোত্তম। মহান আল্লাহ আমাদের ইতিকাফ করে তাঁর সান্নিধ্য অর্জনের সুযোগ দিন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম নতুনবাগ, রামপুরা, ঢাকা