ভূমিকম্প কিয়ামতের পূর্বাভাস

ভূমিকম্প কিয়ামতের পূর্বাভাস

প্রতীকী ছবি

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময় ভূমিকম্প হয়, যার মাত্রা কখনো বেশি, কখনো কম থাকে। ভূমিকম্পের যে দৃশ্য আমাদের চোখে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে দৃষ্ট হয় আসলে তা মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শেষ বিচার দিবসের পূর্বাভাস। সে দিনের প্রকম্পন এতটাই প্রকট হবে, যা মানুষের ইন্দ্রিয় দিয়ে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। সূরা ইনফিতার (১-৪)-এ সে মহা প্রকম্পন সম্পর্কে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যখন আকাশ ফেটে যাবে, যখন নক্ষত্রগুলো ঝরে পড়বে, সমুদ্র যখন উদ্বেলিত হবে; তখন প্রত্যেকে জেনে নেবে সে কী অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কী পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে।

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত এই মহা প্রকম্পনের তুলনায় বর্তমানের এই ভূমিকম্প অতি নগণ্য। এটি শুধু সুনিশ্চিত মহাপ্রলয়ের সতর্কবাণী মাত্র।
ভূমিকম্পের কারণ : ভূ-তত্ত্ব¡বিদদের ভাষ্য অনুযায়ী, ভূ-অভ্যন্তরের শিলায় পীড়নের ফলে যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এই আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে। কম্পন-তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয় তা ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই তরঙ্গ ভূ-গর্ভের কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন হয় এবং উৎসস্থল থেকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে এটি শুধু থিওরিটিক্যাল। কিন্তু হাদিসের ভাষা ভিন্ন কিছু বলে।

প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ বা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো মানুষের দ্বারা সংঘটিত পাপ, অন্যায় বা সৃষ্টিকর্তার নাফরমানি। এগুলোর পথ ধরেই মানুষ কিয়ামতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সতর্ক করে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ সা: বলেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে; কিন্তু তা আত্মসাৎ করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না), জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সাথে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে, মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে শোরগোল (কথাবার্ত) হবে, যখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে- সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (এসিড বৃষ্টি), ভূ-কম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টির এবং (সুতো ছেঁড়া তাসবিহ দানার মতো) একটির পর একটি নিদর্শনগুলোর জন্য। (তিরমিজি-১৪৪৭)

অসৎপথে সম্পদ উপার্জন, আমানতের খিয়ানত, জাকাতকে জোরপূর্বক মনে করা, ধর্মীয় মনোভাব বৈরী করে শিক্ষা অর্জন করা, মাতা-পিতার সাথে অসদাচরণ করা হাদিসের ভাষায় এগুলো সবই ভূমিকম্পের কারণ। সমাজের যে প্রান্তেই দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় সেখানেই এসব অপকর্ম বিদ্যমান, আমরা এখনো যে সমূলে ধ্বংস হচ্ছি না এটি শুধু দয়ার নবীজী সা:-এর দোয়ার বরকত ও আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমত।
আমাদের করণীয়-

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে মুক্তির জন্য দরিদ্র ও মিসকিনদের প্রতি দয়া প্রদর্শন এবং দান-সদকার প্রতি উদ্বুদ্ধ হওয়া উচিত। কেননা রাসূল সা: বলেছেন, ‘দয়া প্রদর্শন করো, তোমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে’। (মুসনাদে আহমাদ)

রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে প্রত্যেক কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন, সব দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করবেন, এমন স্থান থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।’ (আবু দাউদ-১৫১৮)

বর্তমানে যেসব ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটছে তা মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রেরিত সতর্ককারী নিদর্শনগুলোর একটি। সুতরাং এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং আমরা যেন বিনীতভাবে তাওবাহ করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করি, নিজেদের আচার-আচরণগুলো শুধরে নিই, সার্বিক নিরাপত্তার জন্য দোয়া করি, আল্লাহকে অনেক বেশি স্মরণ করি এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিচার দিবসের আগেই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। এ জন্য দান-সদকা, দোয়া-ইস্তিগফার দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কাজের অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত কাম্য।

লেখক : ইমদাদুল হক শেখ

 সিনিয়র শিক্ষক, ডক্টর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ: প্রতিষ্ঠিত, জামেয়াতুস সুন্নাহ, ঝিনাইদহ সদর