মৃত্যুগামী ব্যক্তির জন্য স্বজনের করণীয়

মৃত্যুগামী ব্যক্তির জন্য স্বজনের করণীয়

প্রতীকি ছবি

মৃত্যু অনিবার্য। অনিবার্য এই মৃত্যুর ডাকে সবাই সাড়া দেবে। পাড়ি জমাবে দুনিয়ার ওপারে। সাড়া না দিয়ে কেউ পার পাবে না।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কিয়ামত দিবসে তোমাদের দেওয়া হবে তোমাদের কর্মের পরিপূর্ণ প্রতিদান। যে ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হলো আর জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো সে সফলতা লাভ করল।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)
কোনো কিছু ভালো বলে বিবেচিত হওয়ার জন্য সুন্দর সমাপ্তি জরুরি। এ বিষয়ে বাংলায় একটি প্রসিদ্ধ প্রবাদও আছে। প্রবাদটি হলো, ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার।’ রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমল তো শেষ অবস্থা অনুসারেই বিবেচিত হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬০৭)

যে ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে, তার পরকালের জীবনটাও সুন্দর হবে। ফুলে-ফলে ভরে উঠবে তার পরকালীন জীবন। তাই সুন্দর মৃত্যু হওয়াটা পরম সৌভাগ্যের বিষয়।

সহজ ও সুন্দর মৃত্যুর জন্য আপনজনদের করণীয়

এ জন্য একজন মৃত্যুপথযাত্রীর আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের উচিত তার সুন্দর মৃত্যুর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। কোরআন-হাদিসের আলোকে একজন মৃত্যুগামী ব্যক্তির সহজ ও সুন্দর মৃত্যুর জন্য তার আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের কিছু করণীয় আছে। সেগুলো হলো—

১. তার জন্য দোয়া করা

দোয়া দূরের-কাছের সবাই করতে পারেন। মৃত্যুমুখী ব্যক্তির মৃত্যু যেন ঈমানের সঙ্গে হয় এবং সহজ হয়—এই দোয়া করা। এ দোয়ার জন্য পাশে বা কাছে থাকার প্রয়োজন হয় না। যারা সংবাদ পেয়েছে—সবাই এ দোয়া করতে পারে। সুন্দর মৃত্যুর জন্য এ দোয়া খুবই জরুরি। আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের এ দোয়ার কল্যাণে যদি মৃত্যুগামী ব্যক্তির মৃত্যু সুন্দর হয়, তাহলে তো সে চিরসফল। মহা সৌভাগ্যবান। তাই এখন সুন্দর মৃত্যুর জন্য দোয়াটাই তার বেশি দরকার। এই দোয়াতে শুধু মৃত্যুগামী ব্যক্তির উপকার হবে—ব্যাপারটি এমন কিন্তু নয়; বরং দোয়াকারীরও এতে ব্যাপক উপকার হয়। এক হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য দূর থেকে দোয়া করে, তাহলে ফেরেশতারা বলেন, দোয়াকারীকেও যেন দোয়াকৃত বিষয়গুলো দান করা হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৭৩২-২৭৩৩)

তাই কোনো আপনজন মৃত্যুগামী ব্যক্তির সুন্দর মৃত্যু, সহজ মৃত্যু ও ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুর জন্য দোয়া করলে, আশা করা যায়, দোয়াকারীরও মৃত্যু হবে সুন্দর, সহজ ও ঈমানের সঙ্গে হবে।

২. কলেমার তালকিন করা

দ্বিতীয় করণীয় হলো, মাইয়িতকে কলেমার তালকিন করা। এ ব্যাপারে সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি (রা.)-এর বাচনিক মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের মৃত্যুপথযাত্রীদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র তালকিন করো। (মুসলিম, হাদিস : ৯১৬-৯১৭)

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র তালকিনের অর্থ হলো, মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে বসে মৃদু আওয়াজে (এমন আওয়াজ যেন কালিমার আওয়াজ মুমূর্ষ ব্যক্তি শুনতে পায়) কালেমা পড়তে থাকা। তবে মনে রাখতে হবে যে মৃত্যু অবস্থায় পতিত ব্যক্তিকে কিছুতেই মুখে উচ্চারণ করে কলেমা পড়ার আদেশ করা যাবে না। কোনো ধরনের জোরাজুরি করা যাবে না। শুধু তার কানে আওয়াজ পৌঁছে দেবে। কেননা যার শেষ কথা হবে এই কলেমা, হাদিসের ভাষ্যমতে তিনি জান্নাতি। মুআজ ইবনে জাবাল (রা.)-এর বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার দুনিয়ার জীবনের শেষ কথা হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১৬)

৩. মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে থেকে সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করতে থাকা।

মুমূর্ষু ব্যক্তির জন্য তৃতীয় আরেকটি আমলের কথা হাদিসে পাওয়া যায়। সেটি হলো, মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে থেকে সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করতে থাকা। মাকাল ইবনে ইয়াসার (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুপথযাত্রীদের পাশে বসে সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করো।’  (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩১২১; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩০০২)

আপনজনদের উচিত, মুমূর্ষু ব্যক্তির সুন্দর ও সহজ মৃত্যুর জন্য উপরোক্ত আমলগুলো গুরুত্ব দিয়ে করা।