সেন্ট মার্টিনে বড় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা

সেন্ট মার্টিনে বড় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা

সংগৃহীত

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশ আঘাত করতে যাচ্ছে - এটি এখন মোটামুটি নিশ্চিত। এজন্য স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত দুই নম্বর থেকে চার নম্বরে উন্নীত করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যাবে, তাই ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর ফলে কোন এলাকাগুলোতে বেশি প্রভাব পড়বে, তা আরো পরে জানা যাবে।’

ঘূর্ণিঝড় মোখা রোববার দুপুর নাগাদ যখন বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত করবে, তখন সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ার কথা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরের ওপর অবস্থিত সেন্ট মার্টিন দ্বীপে।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলীয় অঞ্চলের কাছে দিয়ে যাওয়ার সময় ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু ঢেউ আঘাত করতে পারে।

সেন্ট মার্টিনে এই ঢেউয়ের উচ্চতা আরেকটু বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে। সেন্ট মার্টিনের ক্ষেত্রে এই ঢেউয়ের উচ্চতা হয়তো আরেকটু বেশি হতে পারে।’

আবহাওয়া অধিদফতর অবশ্য বলছে, জলোচ্ছ্বাসের প্রকৃত উচ্চতা কতটা হবে তা ঘূর্ণিঝড় আঘাত করার ২৪ ঘণ্টা আগে জানানো সম্ভব হবে।

সেন্ট মার্টিনে বসবাস করা মানুষ এবং সেখানকার বিভিন্ন ধরণের স্থাপনার বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। সেই আশঙ্কায় দ্বীপটির অনেকেই দ্বীপ ছেড়ে টেকনাফে চলে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

সেন্ট মার্টিনের একজন বাসিন্দা এবং ইউনিয়ন পরিষদের একজন প্যানেল চেয়ারম্যান আখতার কামাল জানান, গতকাল (বৃহস্পতিবার) ও আজ দুই দিনই সেন্ট মার্টিন থেকে প্রায় দুই হাজার মানুষ টেকনাফে চলে গেছেন।

আখতার কামাল বলছিলেন, ‘সেন্ট মার্টিনে সাইক্লোন সেন্টার খুবই কম। তাই অনেকেই কালকে আর আজকে টেকনাফে চলে গেছে।’

‘যারা গেছেন তারা দামী জিনিসপত্র, স্বর্ণালঙ্কার, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে গেছেন। এছাড়া ঘরের অন্যান্য জিনিসপত্র এখানেই রেখে গেছেন।’

আখতার কামাল জানান, শুক্রবার দুপুরের আগেই সেন্ট মার্টিন্সের সব মাছ ধরা ট্রলার ও যাত্রী চলাচলের জন্য ব্যবহৃত নৌকা টেকনাফে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

যেভাবে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে সেন্ট মার্টিনে
ঘূর্ণিঝড় মোখাকে এরই মধ্যে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর। এটি সুপার সাইক্লোনে রূপান্তরিত হবে কিনা, সে বিষয়ে সুনিশ্চিতভাবে কিছু না বললেও সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহাওয়াবিদরা।

তাই ঘূর্ণিঝড়ে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সেন্ট মার্টিনসহ উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সব ধরনের প্রস্তুতিই নেয়া হচ্ছে।

আজ শুক্রবার দুপুরে যখন সেন্ট মার্টিনের প্যানেল চেয়ারম্যান আখতার কামালের সাথে কথা হচ্ছিল, তখন তিনি জানাচ্ছিলেন যে আপাতত স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা দ্বীপে থাকা মানুষকে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক করছেন।

‘এই মুহূর্তে প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা মাইকিং করে দ্বীপের বাসিন্দাদের সতর্ক করছি যেন তারা সবার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ সুপেয় পানি রাখেন। তাদেরকে ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র বেঁধে রাখারও অনুরোধ করা হয়েছে।’

দ্বীপে সাইক্লোন সেন্টার খুবই কম থাকায় এখনই দ্বীপের বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে বলছেন না তারা। আবহাওয়ার পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে যেন তারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসেন, সে রকম অনুরোধ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

‘আমরা শুনেছি যে রোববার নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত করবে। কাজেই পরিস্থিতি খারাপ হলে শনিবার যেন তারা আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যান, সেবিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে’, বলছিলেন আখতার কামাল।

যথেষ্ট পরিমাণ আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় সেন্ট মার্টিনের বহুতল হোটেল ও রিসোর্টগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলে জানান তিনি।

টেকনাফ উপজেলার ইউএনও মোহাম্মদ কামরুজ্জামান অবশ্য বলেছেন, সেন্ট মার্টিনে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

তিনি বলেন, ‘পুরো টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে, যার মধ্যে শুধু সেন্ট মার্টিনেই ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে।’

সেন্ট মার্টিনের এসব আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ থাকার ব্যবস্থা আছে বলে জানান ইউএনও কামরুজ্জামান।

‘সেন্ট মার্টিনের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর জন্য আলাদাভাবে শুকনো খাবার, পানি, জরুরি স্বাস্থ্য সেবার পণ্য পাঠানো হয়েছে।’

এছাড়া সাইক্লোন প্রস্তুতি কর্মসূচির প্রায় দেড় হাজার কর্মীও সেন্ট মার্টিনে জরুরি সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত বলে জানা যায়।

তবে এত প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও মানুষ কেন সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফ চলে আসছে, সে বিষয়ে আলোকপাত করেননি কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে এরকম খবর নেই যে সেন্ট মার্টিন থেকে মানুষ বের হয়ে যাচ্ছে। অনেকে হয়তো ভয়ে বের হয়ে যাচ্ছে, নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের বাসায় গিয়ে উঠছে।’

সেন্ট মার্টিন বাদে পুরো টেকনাফ উপজেলায় ৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি বেশ কিছু হোটেল, রিসোর্টকেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

একইসাথে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, সেনাবাহিনী, বিজিবির সদস্যদের সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হয় বলে জানা গেছে।

এছাড়া জরুরি সেবার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবীসহ ১৬০০’র বেশি জরুরি কর্মী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা যায়।

সূত্র : বিবিসি