ফরিদপুরে জাল সনদধারী ১০ শিক্ষককে চাকরিচ্যুত

ফরিদপুরে জাল সনদধারী ১০ শিক্ষককে চাকরিচ্যুত

মাউশি

ফরিদপুরে জাল সনদে নিয়োগ হওয়ায় ১০ বেসরকারি স্কুল-কলেজ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া জমা দিতে হবে বেতন বাবদ নেয়া টাকা। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে মাউশিকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে তিনজন কলেজ ও সাতজন স্কুলের শিক্ষক রয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরে যে দশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দশ শিক্ষকের জাল সনদের প্রমাণ পাওয়া গেছে এর মধ্যে সাতজন শিক্ষক সরকারি বেতন তুলেছেন। বাকি তিন শিক্ষক এমপিওভুক্ত না হওয়ায় তারা সরকারি কোনও আর্থিক সুবিধা পাননি।

এমপিও না হওয়া ওই তিন শিক্ষক হলেন- জেলার মধুখালীর আখচাষী মহিলা ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক মো. আবুল হাসান মিয়া, আলহাজ্ব এম এ আজিজ হাইস্কুলের কম্পিউটার বিভাগের সহকারি শিক্ষক মো. জাকির হোসেন ও চরভদ্রাসনের হরিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মো. সোহেল রানা। ভুয়া সনদে এমপিও ভুক্ত হওয়া ওই সাত শিক্ষক বিভিন্ন অঙ্কে বেতন বাবদ সরকারি তহবিল থেকে ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৩২৮ টাকা গ্রহণ করেছেন।

এরমধ্যে সালথা কলেজের শরীরচর্চা বিষয়ের শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস দুই লাখ ৫৬ হাজার ২৫৫, বোয়ালমারীর হাসামদিয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র সাহা এক লাখ ৩৫ হাজার একশত, ফরিদপুর সদরের বাখুন্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষা বিভাগের সহকারী শিক্ষক আকলিমা খানম ১১ লাখ ২৪ হাজার ৬৪০, ফরিদপুর মহাবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক নরেশ চন্দ্র মন্ডল তিন লাখ ৪১ হাজার ২৫০, নগরকান্দার এম এন একাডেমির সমাজ বিভাগের সহকারী শিক্ষক জেসমিন খানম পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৫১৫, সালথার ফুলবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের সহকারী শিক্ষক গীতা বিশ্বাস ছয় লাখ ৩ হাজার ৫৩ টাকা ও নগরকান্দার চাঁদহাট বাজার উচ্চবিদ্যালয়ের কম্পিউটারের শিক্ষক কামরুন নাহার পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৫ শত ১৫ টাকা তুলেছেন।

মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, জাল সনদে নিয়োগ পাওয়া এসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব শিক্ষক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতেও চিঠি দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি)।

চিঠিতে ওই জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে সাত ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অবৈধভাবে গ্রহণ করা বেতন সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া, যারা অবসরে গেছেন তাদের অবসর সুবিধা বাতিল করা, স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের আপত্তির টাকা প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের মাধ্যমে আদায় করা, জাল সনদধারীদের নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রভৃতি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) যাচাই-বাছাইয়ে এসব জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারী চিহ্নিত করা হয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে সনদ প্রদানকারী দপ্তর প্রধান বা প্রতিনিধির সমন্বয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সনদ যাচাই করে জাল সনদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।

ফরিদপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বিমল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক নরেশ চন্দ্রের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের অডিটে কাগজপত্র জালের প্রমাণ পাওয়া যায়। সনদ জাল হওয়ার কারণে তারও চাকুরি গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে পরবর্তী উদ্যোগ নেয়া হবে।

সালথা কলেজের অধ্যক্ষ কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, আমাদের কলেজের শিক্ষক স্বপন কুমারের ব্যাপারে ২০১৪ সালে যাচাই-বাছাই (অডিট) করা হয়। সেই আলোকে তার সনদপত্র জাল হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে মৌখিকভাবে জেনেছি। এব্যাপারে কাগজপত্র পাওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশমত ব্যবস্থা নেয়া হবে।