বিড়ি শ্রমিকদের বাজেট আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন, চার দফা দাবি

বিড়ি শ্রমিকদের বাজেট আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন, চার দফা দাবি

ছবি- নিউজজোন বিডি

বহুজাতিক কোম্পানীর নিম্নস্তরের সিগারেট বন্ধসহ চার দফা দাবিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা সভা করেছে বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন। রবিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রমিকদের দাবিগুলো হলো, ২০২৩-২৪ অর্থরছরের বাজেটে বিড়ির শুল্ক ১৮ টাকা থেকে ২ টাকা কমিয়ে ১৬ টাকা করা, বিড়ি শ্রমিকদের মজুরী পূর্ণঃনির্ধারণ, সিগারেট ও বিড়ির অগ্রীম আয়করের বৈষম্য দূর করা এবং বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর নিম্নস্তরের সিগারেট বন্ধ করা। এ সময় শ্রমিক নেতারা প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়িতে শুল্ক বৃদ্ধি না করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। একইসাথে তারা প্রত্যয় বক্ত করেন, দেশের বিড়ি শ্রমিকেরা অতীতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষতেও থাকবে।

আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম-সম্পাদক মো: হারিক হোসেন। ফেডারেশনের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। এসময় বক্তব্য রাখেন বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল গফুর, সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান, প্রচার সম্পাদক মো: শামীম ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসনাত লাভলু, সদস্য আনোয়ার হোসেন প্রমূখ।

সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিড়ি শিল্পের অবদান অপরিসীম। অথচ বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর ষড়যন্ত্রে এ শিল্পটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। বিড়ির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলো নিম্নস্তরের সিগারেট। বর্তমানে সিগারেট বাজারের ৭৭ শতাংশই নিম্নস্তরের। এসব নিম্নস্তরের সিগারেটের সিংহভাগই বিদেশি কোম্পানির দখলে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্নস্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরামূল্য ৪০ টাকা থেকে মাত্র ৫ টাকা বাড়িয়ে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি শলাকার দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র পঞ্চাশ পয়সা (১২.৫০ শতাংশ), যা খুবই সামান্য। এই স্তরের সম্পূরক শুল্ক প্রায় অপরিবর্তিত রেখে কেবল মূল্য বাড়ানোর কারণে বর্ধিতমূল্যের প্রায় সব অংশ সিগারেট কোম্পানির পকেটে চলে যাবে। তাই এ বছরের বাজেটে নিম্নস্তরের সিগারেটের মূল্য ও সম্পূরক শুল্ক আরো বৃদ্ধি না করা হয় তাহলে বিড়ি শিল্প টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। এদেশে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীর কার্যক্রম আরো তরান্বিত হবে। সুতরাং বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর নিম্নস্তরের সিগারেট বন্ধ করতে হবে।

বক্তরা আরো বলেন, বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানী দেশীয় টোব্যাকো কোম্পানীর মার্কেট শোষণ করছে। তারা এদেশের মানুষের ফুসফুস পুড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ডলারে পরিনত করে বিদেশে পাচার করে আমেরিকায় ব্রিটেনে বড় বড় অট্টলিকা বানায় আর নাম হয় বেগম পাড়ার। দেশের ১৬২ জন মাননীয় সংসদ সদস্য বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর নিম্নস্তরের সিগারেটের মূল্য ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সুপারিশ করেন। কিন্তু সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা মাননীয় সংসদ সদস্যদের সুপারিশকে উপেক্ষা করে প্রস্তাবিত বাজেটে এই স্তরের সিগারেটের মূল্য সামান্য পরিমান বৃদ্ধি করেছে। নিম্নস্তরের সিগারেটের মূল্যস্তর ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা করা হলে প্রতি বছর আরো প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতো। যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ )এর ঋণ পরিশোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করতো।

লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম-সম্পাদক মো: হারিক হোসেন জানান, বিড়ি উপহাদেশের একটি আদি ও পুরাতন শিল্প। এই উপমাহাদেশে বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের যখন কোন সুযোগ ছিল না বিড়ি শিল্পই ছিল কর্মসংস্থানের একমাত্র উপলক্ষ। আজও দেশে এমন অঞ্চল রয়েছে যেখানে বিড়ি শিল্পই কর্মসংস্থানের একমাত্র অবলম্বন। এই বিড়ি শিল্প নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। এ শিল্পকে নানান অজুহাতে বার বার বন্ধ করা হয়েছে। ১৯৬৫ সালে আইয়ুব খান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আইন করে বিড়ি নিষিদ্ধ করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোগিতায় বিড়ি শ্রমিকরা দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত তালা বিড়ি কারখানা পুনরায় চালু করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো দেশের প্রাচীন শ্রমঘন বিড়ি শিল্পকে ধ্বংস করতে নানাভাবে পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ব্রিটিশ আমেরিকা আমাদের দেশের শত্রু, জনগনের শত্রু ও সরকারের শত্রু। তারা আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতা করে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর সপ্তম নৌবহর ও কয়েকটি জাহাজ নিয়ে বঙ্গপোসাগরে যাত্রা করেছিল। ওই জাহাজে ৭৫ টি জঙ্গি বিমান, ২৫ টি হেলিকপ্টার ও নিউক্লিয়ার বোমা (পারমানবিক বোমা) ছিল।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ দেশ থেকে সিগারেট বন্ধ করে দিলে, শ্রমিক ও শিল্প রক্ষা পেত। সিগারেটের যে পরিমাণে শুল্ক দেয় আমাদের দেশীয় শিল্পের সুযোগ করে দিলে আমরা সেই পরিমানে শুল্ক দিতে পারব কথা দিলাম। মানুষেরা সিগারেট খায় কিন্তু সিগারেটের প্যাকেট খায় না। আর এই এক একটা সিগারেটের প্যাকেট তৈরী করতে ৫০-৬০ টাকা অবচয় হয়। এই প্যাকেটের জন্য আলাদা শুল্ক ধার্য করা উচিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছু অসাধু রাজস্ব কর্মকর্তার জন্য সিগারেটের উপর বেশি শুল্ক ধার্য করা যায় না। আমেরিকা যে কোন সময় আমাদের দেশের গার্মেন্টস শিল্প বন্ধ করে দিতে পারে, তা যদি দেয় তাহলে এ ব্যবসায় ভারত ও ভিয়েতনামে চলে যাবে। গার্মেন্টস শিল্পের এ শ্রমিক বেকার হয়ে গ্রামে চলে যাবে। গ্রামে চলে আসলে বেকারত্ব দেখা দিবে। তাই এই শ্রমকিদের রক্ষার্থে দেশীয় শিল্পকে সুযোগ করে দিতে হবে। সিগারেটের নিম্নস্তরটি বন্ধ করে দিতে হবে।

শ্রমিক নেতারা জানান, বিড়ি শিল্প একটি শ্রমিকবান্ধব শিল্প। সমাজের লক্ষ লক্ষ অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত শ্রমিকদের অন্নসংস্থানের একমাত্র মাধ্যম এই বিড়ি শিল্প। বিড়ি শিল্পকে রক্ষায় আমরা বার বার সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দারাস্থ হয়েছি। বিড়ির উপর শুল্ক কমানোর দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করে আসছি। বিড়ি শ্রমিকদের দাবি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়ির শুল্ক ১৮ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করা। কিন্তু আমাদের দাবি পূরণ করা হয়নি। তারপরেও সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়ি শিল্পে শুল্কারোপ না করায় আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। বিড়ির শুল্ক পূর্বের ন্যায় অপরিবর্তিত রাখায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। একইসাথে বিড়ির শুল্ক ১৮ টাকা থেকে ২ টাকা কমিয়ে ১৬ টাকা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।