সংকট-অর্জন নিয়ে ১৫ বছরে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সংকট-অর্জন নিয়ে ১৫ বছরে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সংকট-অর্জন নিয়ে ১৫ বছরে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সংকট-অর্জন নিয়ে ১৫ বছরে পা দিয়েছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) । দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে ২০০৮ সালের ৫ জুন যাত্রা শুরু করে উত্তরাঞ্চলের উচ্চতর শিক্ষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠ । প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (৫ জুন) সকাল সাড়ে ১০ টায় শহীদ মিনার চত্বরে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ আফতাব আলী শেখ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন ।

পতাকা উত্তোলন শেষে শহীদ মিনার চত্বরে শান্তি ও আনন্দের প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ এবং আনন্দ শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, এ সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহউদ্দিনসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী অংশ নেন।

সংকট ও অর্জনের গল্প: পাবনা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্ব দিকে রাজাপুর নামক স্থানে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে ৩০ একর জমির উপর ২০০৮ সালের ৫ জুন আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পাঁচটি অনুষদে ২১টি বিভাগে ৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এবং প্রায় দুইশত শিক্ষক রয়েছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা সংকটে আটকা এই বিশ্ববিদ্যালয়। ১৪ বছর পার করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পান না পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। সেশনজট, আবাসন সংকট, র‌্যাগিং সমস্যা, শিক্ষক-শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা, পরিবহনের অপ্রতুলতা, গবেষণায় অনগ্রসরতা, একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজের ধীরগতি, অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিভাগে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংকট ইত্যাদির কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়টি। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।

এছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত সমাবর্তনের মুখ দেখেনি পাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসন, পরিবহন, শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকট। এ ছাড়া বেশিরভাগ বিভাগে রয়েছে সেশনজট। অবকাঠামো নির্মাণ ব্যতিরেকই নতুন বিভাগ খোলার কারণে অনেক বিভাগ পায়নি নিজস্ব শ্রেণিকক্ষসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। ছাত্র এবং ছাত্রীদের জন্য পৃথক ২টি আবাসিক হলে শিক্ষার্থী বাস করছেন মাত্র ৭ শত জনের মতো । ফলে আবাসন সংকট রয়েছে চরম পর্যায়ে। ফলে পরিবহন নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে।

তবে সংকটের সঙ্গে দিনের পরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ঝুলিতে অর্জনেরও কমতি নেই। মুক্তিযুদ্ধের উপর বিস্তর জ্ঞান অর্জনে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার এবং বঙ্গবন্ধু কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেশনজটের গ্লানি দুর করতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে সকল বিভাগের কেন্দ্রীয় ক্যালেন্ডারে পরিক্ষা হওয়াতে কমতে শুরু করেছে সেশনজট। এছাড়া পেপারলেস বিশ্ববিদ্যালয়, ই- লাইব্রেরি, স্মার্ট ক্লাসরুমের কাজ চলমান। প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রত্যাশার কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে জানতে চাইলে এক শিক্ষার্থী বলেন , আমাদের আবাসিক সংকট রয়েছে। হলে ডাইনিং চলে না। পরিবহন সংকট রয়েছে এই গরমে অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়। তবে বর্তমান প্রশাসনের সময় অনেক কাজ চলমান রয়েছে দেখা যাক এগুলো শেষ হলে আমরা কতোটুকু সুযোগ সুবিধা পাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজ খাতুন বলেন, আশা করছি সামনের বছর রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আমার আমাদের প্রথম সমাবর্তন করবো। দুইটি ১০ তলা একাডেমি বিল্ডিংয়ের কাজ শেষের দিকে যা শেষ হলে ক্লাসরুম সংকট সমাধান হবে। এছাড়াও আমরা পরীক্ষা নেওয়ার জন্য একটি এক্সামিনেশন হল বানিয়েছি যার ফলে সকল বিভাগে সেখানে তাদের পরিক্ষা নিতে পারবে পাশাপাশি ক্লাসরুমে ক্লাস নিবে এতেকরে সেশনজট কমবে। তিনি আরও বলেন, আবাসিক সংকট সমাধানে নতুন ২টি আবাসিক হল হচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গায় বৃদ্ধির জন্য ৮০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।