বাংলাদেশের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত অর্থায়ন বৃদ্ধি করেছে গ্যাভি

বাংলাদেশের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত অর্থায়ন বৃদ্ধি করেছে গ্যাভি

বাংলাদেশের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত অর্থায়ন বৃদ্ধি করেছে গ্যাভি

বাংলাদেশের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচীকে বেগবান করার লক্ষ্যে এবং দেশের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচিতে অর্থায়ন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার বৈশ্বিক জোট গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ (গ্যাভি)।আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে বাংলাদেশ সফররত গ্যাভি মিশনের সদস্যবৃন্দ এবং ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং (BPFHW)Õ এর মধ্যে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা জানানো হয়।  

গ্যাভির সিনিয়র কান্ট্রি ম্যানেজার নিলগান আয়দোগান বলেন, ‘আমরা ২০০১ সাল থেকে জাতীয় টিকাদান কার্যক্রমে বাংলাদেশকে সহায়তা করে আসছি। আমাদের সহায়তার মধ্যে রয়েছে দক্ষতা বৃদ্ধি, কারিগরি সহায়তা, কোভিড-১৯ টিকা সহায়তা। বাংলাদেশে এ বছরই শুরু হতে যাচ্ছে এইচপিভি টিকা কার্যক্রম যা জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে টিসিভি এবং জেই টিকাও চালু করা হবে। আমরা টিকাদান কর্মসূচি চলমান রাখতে সংসদ সদস্যদের অ্যাডভোকেসি কার্যক্রমের সত্যিই প্রশংসা করি।’

বাংলাদেশের টিকাদান কার্যক্রমে গ্যাভির অর্থায়ন ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিং’এর অনুরোধে তা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। জানুয়ারিতে ফোরামের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে অর্থায়ন সময়সীমা বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করে গ্যাভি। 

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা আগামী ২০৪১ সাল পর্যন্ত জাতীয় টিকাদান কার্যক্রমে অর্থায়নের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য গ্যাভিকে অনুরোধ করেন। ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত এমপি'র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সংসদ সদস্যরা দেশের স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধি, টিকার প্রযুক্তি সরবরাহ করা, স্থানীয়ভাবে টিকা প্রস্তুতকরণ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের লোকবল সংকট নিরসন, তামাকের ব্যবহার কমাতে তামাকপণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধি, এবং জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি রক্ষায় অবিলম্বে তামাক আইন সংশোধনের বিষয়গুলো সভায় তুলে ধরেন।

সভায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরামের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, টিকাদানে আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে, দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি নিশ্চিত করতে আমাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের টিকার জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত তহবিল অব্যাহত রাখার জন্য আমি গ্যাভিকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের শক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনি আমাদের জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি বলেন, তামাক দেশের জন্য একটি বড় হুমকি যা একসাথে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি দুইটারই ক্ষতি করে।তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় তামাকপণ্যের ব্যবহার কমে আসবে বলে আশা করি। তবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী দ্রুত পাশ করলে দেশের অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার পথ সুগম হবে। ফোরামের উপদেষ্টা আ স ম ফিরোজ বলেন, আমি আশা করি আমরা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় চলমান টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবো। বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হার কমেছে। টিকাদানে বাংলাদেশের সাফল্য রয়েছে। টিকাদান কর্মসূচির জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং গ্যাভির মধ্যে অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।সভায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফোরামের নানান সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরামের চেয়ারম্যান হাবিবে মিল্লাত।

তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় টিকাদান কার্যক্রমে অর্থায়নের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য গ্যাভিকে অনুরোধ করেছিলাম এবং তারা আমাদের অনুরোধ গ্রহণ করে ২০৩০ সাল পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রমে অর্থায়নের মেয়াদ বৃদ্ধি করায় আমরা গ্যাভিকে ধন্যবাদ জানাই। গাভি আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং এদেশে টিকাদানের সাফল্য তাদেরও অর্জন। হাবিবে মিল্লাত বলেন, আমাদের সবাইকে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি পুষ্টির জন্য কাজ করতে হবে। আমরা গ্যাভিকে সাথে রাখতে চাই এবং আমরা ভবিষ্যতের জন্য তাদের সমর্থন আশা করি।

তিনি বলেন, তামাকের উপর যুক্তিযুক্ত কর ও মূল্য বৃদ্ধির ফলে প্রায় ১০ লাখ তরুণকে ধূমপান শুরু করা থেকে বিরত রাখা যাবে এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়াও বাড়তি ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে যা বর্তমানে প্রাপ্ত রাজস্বের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি।সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম (টিটু) বলেন, “গ্যাভি আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু। তাদের সহায়তায় আমাদের স্বাস্থ্যসেবা অতীতে অনেক উন্নতি করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। বিশেষ করে বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের অবদান মনে রাখার মতো। 

এর আগে টিকাদান কার্যক্রম জোরদারকরণে সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহন, বাংলাদেশের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আর্থিক ও কর্মসূচি স্থায়িত্ব এবং জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে পৃথক পৃথক তিনটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়।  স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও গ্যাভি সিএসও স্টিয়ারিং কমিটির ভাইস-চেয়ার ডাঃ নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর (EPI) ​​​​​​​ পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর ডাঃ মোঃ নিজাম উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম।

সূত্র : বাসস