পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফের ফজিলত

পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফের ফজিলত

ফাইল ছবি।

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম আমল হলো পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফ। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এই পবিত্র ঘরের তাওয়াফ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন—সুরা হজের একটি আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাদের মানত পূর্ণ করে ও তাওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ২৯)

এখানে প্রাচীন ঘর বলতে পবিত্র কাবাঘরের কথা বলা হয়েছে।

কাবাঘরের তাওয়াফ এতটাই ফজিলতপূর্ণ ইবাদত যে পবিত্র কোরআনে এর তাওয়াফকে সেখানে নামাজের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে তোমারা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৫)

এই আয়াতে মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম তাওয়াফকারীদের কথা উল্লেখ করেছেন। একইভাবে সুরা হজেও মহান আল্লাহ তাওয়াফকারীদের কথা সর্বপ্রথম উল্লেখ করেছেন।

ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে তাওয়াফকারী, নামাজ কায়েমকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ২৬)

এগুলো দ্বারা বোঝা যায়, পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফ করা নফল নামাজের চেয়েও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফ ছাড়া হজ-ওমরাহ শুদ্ধ হয় না। কোনো কোনো হাদিসে পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফকে নামাজের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, বাইতুল্লাহর চারদিকে তাওয়াফ করা নামাজ আদায়ের অনুরূপ। তবে তোমরা এতে (তাওয়াফকালে) কথা বলতে পারো। সুতরাং তাওয়াফকালে যে ব্যক্তি কথা বলে সে যেন ভালো কথা বলে। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬০)

অর্থাৎ পবিত্র বাইতুল্লাহর তাওয়াফ নামাজের মতোই মর্যাদাপূর্ণ। তাওয়াফরত অবস্থায় কোনো অনর্থক কথা বলা যাবে না।

একান্ত বলতেই হলে ভালো কথা বলার সুযোগ রয়েছে, অর্থাৎ দোয়া ইত্যাদির বাক্য বলার সুযোগ রয়েছে। এ জন্যই অন্য বর্ণনায় তাওয়াফ অবস্থায় কম কথা বলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাউস (রহ.) থেকে বর্ণিত, এমন এক ব্যক্তির সূত্রে বর্ণনা করেন যে, যিনি নবী (সা.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন, তিনি বলেন, বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করাও সালাতের মতো। অতএব কথা কমই বলবে। (নাসায়ি, হাদিস : ২৯২২)

সঠিকভাবে পবিত্র বাইতুল্লাহর তাওয়াফে দাস মুক্ত করার সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ বিন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করল এবং দুই রাকাত নামাজ পড়ল, তা একটি ক্রীতদাসকে দাসত্বমুক্ত করার সমতুল্য।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯৫৬)

অন্য হাদিসে তাওয়াফকারীর প্রতিটি কদমে কদমে গুনাহ মাফ ও সওয়াব লেখার কথা বলা হয়েছে। উমাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত, ভিড় ঠেলে হলেও ইবনে উমার (রা.) হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানির কাছে যেতেন (তা স্পর্শ করার জন্য)। রাসুল (সা.)-এর অন্য কোনো সাহাবিকে আমি এরূপ করতে দেখি নাই। আমি বললাম, হে আবু আব্দুর রহমান! আপনি ভিড় ঠেলে হলেও এই দুই রুকনে গিয়ে পৌঁছেন, কিন্তু আমি তো ভিড় ঠেলে রাসুল (সা.)-এর অন্য কোনো সাহাবিকে সেখানে যেতে দেখিনি। তিনি বলেন, আমি এরূপ কেন করব না? রাসুল (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, এই দুটি রুকন স্পর্শ করলে গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যায়। (সহিহ, তালিকুল রাগিব : ২/১২০)

আমি তাঁকে আরো বলতে শুনেছি, সঠিকভাবে যদি কোনো লোক বাইতুল্লাহ সাতবার তাওয়াফ করে তাহলে তার একটি দাস আজাদ করার সমান সওয়াব হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯৫৬)

তাঁকে আমি আরো বলতে শুনেছি, যখনই কোনো ব্যক্তি তাওয়াফ করতে গিয়ে এক পা রাখে এবং অপর পা তোলে আল্লাহ তখন তার একটি করে গুনাহ মাফ করে দেন এবং একটি করে সওয়াব লিখে দেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৫৯)

তাই মহান আল্লাহ যাদের বাইতুল্লাহর মেহমান হিসেবে কবুল করেন, তাদের উচিত যত বেশি বেশি সম্ভব তাওয়াফের মাধ্যমে এই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার চেষ্টা করা। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বারবার পবিত্র মক্কা-মদিনা জিয়ারতের তাওফিক দান করুন। আমিন।