বেলারুশে রুশ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে পশ্চিমাদের ‘মৌনতায়’ ক্ষুব্ধ বিরোধী নেত্রী

বেলারুশে রুশ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে পশ্চিমাদের ‘মৌনতায়’ ক্ষুব্ধ বিরোধী নেত্রী

বেলারুশে রুশ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে পশ্চিমাদের ‘মৌনতায়’ ক্ষুব্ধ বিরোধী নেত্রী

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেংকো মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছেন রাশিয়া থেকে পারমাণবিক ‘বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র’ তার দেশের মাটিতে এসে পৌঁছতে শুরু করেছে। রুশ এক টিভির সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি একথা প্রকাশ করেন।পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারস থেকে বিবিসির সংবাদদাতা সারাহ রেইন্সফোর্ড বলছেন, রুশ পারমাণবিক অস্ত্র যে বেলারুশে মোতায়েন শুরু হয়ে গেছে, তা জানান দিতেই সম্ভবত ওই সাক্ষাৎকারের আয়োজন করা হয়।

প্রেসিডেন্ট পুতিন মার্চে বলেছিলেন, রাশিয়া ১ জুলাইয়ের মধ্যে বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য স্থাপনা নির্মাণের কাজ শেষ করবে। ওই সময় পুতিন আরো বলেন, অল্প সংখ্যক ইস্কান্দার ট্যাকটিকাল মিসাইল সিস্টেম- যা দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করা যায়- ইতোমধ্যেই বেলারুশে স্থানান্তর করা হয়েছে।ধারণা করা হচ্ছিল, রুশ পারমাণবিক অস্ত্র বেলারুশে মোতায়েনে কিছুটা হয়ত সময় লাগবে।কিন্তু বেলারুশের প্রেসিডেন্ট এখন বললেন, পারমাণবিক অস্ত্র ইতোমধ্যেই তার দেশের মাটিতে।

রুশ টিভির সাথে সাক্ষাৎকারের সময় সাংবাদিক যখন লুকাশেংকোকে প্রশ্ন করেন, তিনি কি এরই মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের চালান পেয়ে গেছেন?উত্তরে হেসে তিনি জবাব দেন, ‘সবগুলো নয়, ধীরে ধীরে।’বেলারুশের প্রেসিডেন্টের কথা সত্যি হলে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর এই প্রথম রাশিয়া তার সীমানার বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করল।

বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন নিয়ে তার উদ্বেগ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই দেশের বিরোধী নেত্রী সোয়েতলেনা তিখানোভস্কায়া, যিনি ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারসতে বিবিসির সারাহ রেইন্সফোর্ডের সাথে এক সাক্ষাৎকারে মিজ তিখানোভস্কায়া বলেন, প্রেসিডেন্ট লুকাশেংকোর মতো ‘একজন উন্মাদ একনায়কের’ হাতে রুশ পারমাণবিক অস্ত্র পড়লে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

তিনি এ নিয়ে পশ্চিমা রাজনীতিকদের সমালোচনা করে বলেন তারা ‘চুপ করে রয়েছেন।’মিজ তিখানোভস্কায়া বলেন, ‘নেটো দেশগুলোর জন্য এই অস্ত্র মোতায়েন নতুন কোনো হুমকি তৈরি করছে না। সুতরাং তারা এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। কিন্তু বেলারুশ আমাদের দেশ, আমরা সেখানে পারমাণবিক অস্ত্র চাই না। আমাদের স্বাধীনতা ধরে রাখার জন্য এটি ছিল সর্বশেষ উপায়। কিন্তু তারা (পশ্চিমারা) এ নিয়ে চুপ।’

কত শক্তিধর পারমাণবিক বোমা এসেছে বেলারুশে
রুশ টিভির সাথে সাক্ষাৎকারে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট বলেন যে যেসব বোমা রাশিয়া থেকে আসছে, তা হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে ফেলা আমেরিকান বোমার চেয়ে ‘তিনগুণ শক্তিধর’।বেলারুশের প্রেসিডেন্ট বলেন, তার ভাষায়, বিদেশীদের আগ্রাসন থেকে সুরক্ষার জন্য এখন পারমাণবিক অস্ত্র তার দেশের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। আমি রাশিয়ার কাছে দাবি করেছি পারমাণবিক অস্ত্র ফেরত পাঠাতে।’

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাখস্তানে মোতায়েন সমস্ত পারমাণবিক অস্ত্র রাশিয়ার কাছে স্থানান্তর করা হয়েছিল। ওই প্রক্রিয়া শেষ হয় ১৯৯৬ সালে।রাশিয়া বলছে, বেলারুশে মোতায়েন পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ মস্কোর হাতে থাকবে।লুকাশেংকো বলেছেন, শুধু প্রতিরক্ষার কথা মাথায় রেখে এই অস্ত্র মোতায়েন করা হচ্ছে। আমি আমেরিকার সাথে যুদ্ধ করার পরিকল্পনা করছি না। টেকনিক্যাল অস্ত্র নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। ইস্কান্দার (রকেট) ৫০০ কিলোমিটার বা তার কিছু বেশি দূরত্বে যায়।’

সূত্র : বিবিসি