আওয়ামী লীগের কাজই ভোট চুরি করা : মির্জা ফখরুল

আওয়ামী লীগের কাজই ভোট চুরি করা : মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের কাজই ভোট চুরি করা। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারে নাই। আগামীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে। আমরা সন্ত্রাস পছন্দ করি না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে। এ সরকারকে হঠাতে হবে।

শুক্রবার সিরাজগঞ্জে ইসলামিয়া সরকারি কলেজ মাঠে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া’র মুক্তি, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন মামলার ফরমায়েশি রায়ের প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে ইসলামিয়া সরকারি কলেজ মাঠে এই গণ-জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদের সভাপতিত্বে গণ-জনসমাবেশে প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, আমার-আপনার প্রিয় নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণভাবে সাজা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশটা একা এ সরকারের নয়। এ দেশ জনগণের। জনগণ এবার জেগে উঠেছে।

মির্জা ফখরুলের বক্তব্য শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় কিছু লোককে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে দেখে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদেরকে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আওয়ামী লীগ বিগত দিনে বিএনপির ৪০ হাজার নেতা-কর্মীকে গুম ও খুন করেছে। র‌্যাবের যে সব অফিসার গুমের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দিয়েছে।

তিনি বলেন, আগামীতে তত্ত্বাবধাক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে এ সরকারকে বাধ্য করা হবে। তার আগে বেগম খালেদা জিয়াসহ সব নেতার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমান উল্লাহ আমানসহ যে সব নেতা কারাগারে রয়েছেন তাদের মুক্তি দিতে হবে।

তিনি উপস্থিতজনতার উদ্দেশে বলেন, আমরা সন্ত্রাস পছন্দ করি না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। ভোট চোর ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে।

গণ-সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, টুকু ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাজার রায় আমরা মানি না। মিথ্যা মামলা দিয়ে এ সরকার বাংলাদেশকে কারাগার বানিয়েছে। যারা অত্যাচার করেছে, বিএনপি নেতা-কর্মীদের রক্ত ঝরিয়েছে, তাদেরকে পালাতে দেয়া যাবে না। তারা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য পাহারা দিতে হবে। জনতার আদালতে তাদের বিচার হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বলেন, গত ১৭ বছরে অনেক অন্যায় করেছেন, এমন কোনো অত্যাচার নেই যা বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর করা হয় নাই। আপনাদের দিন ফুরিয়ে এসেছে।

তিনি বলেন, কোনো মামলার রায়ে একবার খালাস পেলে আবারো ওই মামলার সাজা হওয়ার নজীর পৃথিবীর কোথাও নেই। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে যাচ্ছি।

রুমিন ফারহানা আরো বলেন, এত বিদ্যুৎ। আপনারা ফেরি করেছেন। এখন বিদ্যুৎ কোথায়? আপনারা জনগণের পয়সায় বেগম পাড়ায় বাড়ি বানিয়েছেন পালাবেন বলে কিন্তু পালাতে দেয়া হবে না। বিচার আপনাদের হবেই।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতি করে না। কিন্তু যে জুলুম করা হয়েছে তার জবাব দিতে হবে।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে রুমিন ফারহানা বলেন, আমরা ঘরে থাকলেও মামলা হয়, বাইরে থাকলেও মামলা হয়। মামলা যখন হবেই এবার ঘরে ফিরে যাব না। আওয়ামী লীগের কবর রচনা না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছাইদুর রহমান বাচ্চুর সঞ্চালনায় গণ-জনসমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম। এছাড়া জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ গণ-জনসমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

এদিকে বিকেল ৩টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১২টার আগেই মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। সিরাজগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। জেলার উপজেলাগুলো থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যোগ দিতে পেরে তাদের মধ্যে এক ধরনের খুশির আমেজ দেখা গেছে।