কুরআন ও হাদীসে মধু ও কালোজিরা প্রসঙ্গ

কুরআন ও হাদীসে মধু ও কালোজিরা প্রসঙ্গ

প্রফেসর ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান

প্রফেসর ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান।

মধু ও কালো জিরা কুরআন ও হাদীসে আলোচিত মহৌষধ। মহান আল্লাহ তায়ালার অপরূপ সৃষ্টির মধ্যে মৌমাছি একটি। মৌমাছির পেট থেকেই নির্গত হয় বিভিন্ন রঙ এর পানীয় যা মধু হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। যাতে আল্লাহ তা‘আলা  মানুষের জন্য আরোগ্য তথা শেফার কথা বলেছেন। এই মৌমাছিকে নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞান এখন যা বলছে মহান আল্লাহ তায়ালা প্রায় ১৫০০ বছর আগেই বলে দিয়েছেন। এ  ছাড়া হাদীসেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মধূর উপকারীতা ও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এর কার্যকরীতা ও এর প্রয়োগে উৎসাহ দিয়েছেন।

অনুরুপভাবে কালোজিরাও হাদীসে আলোচিত একটি মহাঔষধ। আবু হুরায়রাহ (রা.), থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ কালিজিরায় মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের নিরাময় আছে। ‘আস-সাম’  অর্থ মৃত্যু, হাব্বাতুস সাওদা অর্থ কালিজিরা। (ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৮) 

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগ থেকেই মুসলমানগণ কালোজিরা বিভিন্ন রোগের চিৎিসায় ব্যবহার করে আসছেন।

আলোচ্য নিবন্ধে মধু ও কালোজিরা বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে যে সব আলোচনা এসেছে তা উপস্থাপন করা হবে।

আল কুরআনে মধু প্রসঙ্গঃ

মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন দুটি জিনিষকে মানবজাতির জন্য শেফা হিসেবে সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। একটি হলো কুরআন অপরটি হলো মধু। কুরআন হলো মানুষের আধ্যাত্নিক শেফার একমাত্র ঔষধ। আল্লাহ বলেন,

وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآَنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ

“আর আমরা নাযিল করি কুরআন, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত।”-(সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৮২)

এটি যে অন্তরের ঔষধ এবং শিরক, কুচরিত্র ও আত্নিক রোগসমূহ  থেকে মনের মুক্তিদাতা, এটা সর্বজন স্বীকৃত। যারা এটাকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে গ্রহণ করবে তারা  এর দ্বারা উপকৃত হয় আর যারা গ্রহণ করবেনা তারা এর দ্বারা উপকৃত হতে পারবেনা। আর মধু দৈহিক রোগের মহা ঔষধ। আল্লাহ বলেন,

 يَخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ إنَّ فِي ذَلِكَ لآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

“তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।”  –(সূরা আন-নাহল, আয়াতঃ ৬৯)

আল কুরআনের ১৬তম সূরার নাম সূরা আন-নাহল। নাহল শব্দটির অর্থ মৌমাছি। মৌমাছির পেট থেকেই নির্গত হয় বিভিন্ন রঙ এর পানীয় যা মধু হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। মূলত এ সূরার ৬৮ ও ৬৯ নং আয়াতে মৌমাছি ও মধু সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা‘আলা একটি সংক্ষিপ্ত অথচ মূল্যবান আলোচনা উপস্থাপন করেছেন।

এ সূরায় আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হলেও আন-নাহল শব্দ থেকেএ সূরার নামকরণ করে মহান আল্লাহ মধুর প্রতি মানবের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন মৌমাছির জীবনাচার, বাসা বানানোর প্রক্রিয়া ও স্থান এবং বিভিন্ন ফুল ও ফল থেকে রস সংগ্রহ করার আদেশ প্রদান করে বলেন, 

وَأَوْحَى رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ (68) ثُمَّ كُلِي مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا يَخْرُجُ مِنْ بُطُونِهَا شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

 “আর আপনার রব মৌমাছিকে তার অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দিয়েছেন ‘ঘর তৈরী কর পাহাড়েগাছে ও মানুষ যে মাচান তৈরী করে তাতেএরপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু খাওঅতঃপর তোমার রবের সহজ পথ অনুসরণ কর  তার পেট থেকে নির্গত হয় বিভিন্ন রঙ এর পানীয় যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য নিশ্চয় এতে রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন “ (সূরা আন-নাহল, আয়াতঃ ৬৮- ৬৯)

আলোচ্য আয়াতদ্বয়ে মৌমাছিকে আল্লাহ যে  বিষয়ে  নির্দেশনা দিয়েছেন তা হতে পারে-

এক: অনুগত হয়ে সে পথে চল যে পথ তোমার রব তোমাকে শিখিয়েছেন এবং বুঝিয়েছেন। রবের রাস্তা বলা হয়েছে এজন্যে যে, যে রব তাকে সৃষ্টি করেছে সে পথে চলার আদেশ দিয়েছেন, এবং রবের শিখিয়ে দেয়া পথগুলোতে বিভিন্ন স্থানে রিযিকের খোঁজে বেরিয়ে পড়া প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। পাহাড়ে, গাছের ফাঁকে ফাঁকে। অথবা আয়াতের অর্থ, হে মৌমাছি! তুমি যা খেয়েছ তা তোমার রবের নির্দেশক্রমে ও তাঁর শক্তিতে তোমার শরীরের মধ্য দিয়ে মধু তৈরীর প্রক্রিয়া পরিণত কর। অথবা আয়াতের অর্থ, হে মৌমাছি! যখন তুমি দূরে কোনো স্থানে মধু আহরণের জন্য যাবে, তখন সেটা সংগ্রহ করে আবার তোমার গৃহে ফিরে আস, তোমার প্রভুর শিখিয়ে দেয়া পথসমূহ অবলম্বন করে। পথ হারিয়ে ফেলো না। (ফাতহুল কাদীর) মূলত; তিনটি উদ্দেশ্য হওয়া সম্ভব। এখানে ওহীর মাধ্যমে প্রদত্ত এই নির্দেশের যথাযথ ফলশ্রুতি বর্ণনা করা হয়েছে, বলা হয়েছে যে, তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় বের হয়। এতে মানুষের জন্য রোগের প্রতিষেধক রয়েছে। খাদ্য ও ঋতুর বিভিন্নতার কারণে মধুর রঙ বিভিন্ন হয়ে থাকে। এ কারণেই কোনো বিশেষ অঞ্চলে কোনো বিশেষ ফল-ফুলের প্রাচুর্য থাকলে সেই এলাকার মধুতে তার প্রভাব ও স্বাদ অবশ্যই পরিলক্ষিত হয়।

দুই: মধু সাধারণতঃ তরল আকারে থাকে, তাই একে পানীয় বলা হয়েছে। এ বাক্যেও আল্লাহর একত্ব ও অপার শক্তির অকাট্য প্রমাণ বিদ্যমান। একটি ছোট্ট প্রাণীর পেট থেকে কেমন উপাদেয় ও সুস্বাদু পানীয় বের হয়। এরপর সর্বশক্তিমানের আশ্চর্যজনক কারিগরি দেখুন, অন্যান্য দুধের জন্তুর দুধ, ঋতু ও খাদ্যের পরিবর্তনে লাল ও হলদে হয় না, কিন্তু মৌমাছির মধু সাদা, হলুদ, লাল ইত্যাদি বহু রঙের হয়ে থাকে। (ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর)

তিন: মৌমাছি এক বিস্ময়কর প্রাণী। এরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল সামাজিক জীব। ৬ কোণাকৃতির মৌচাক গঠনের শৈলী দেখে যে কোনো বড় প্রকৌশলী স্বীকার করবেন যে মৌমাছি অত্যন্ত বড় মাপের প্রকৌশলী। মৌমাছির কাজ নির্ভুল ও নিখুঁত। কখনও পাহাড়ের সুউচ্চ শৃঙ্গে আবার কখনও বা কারো বাড়ির ছাদে এবং কখনও বা গাছের ডালে এরা মৌচাক বানায়। মৌমাছিরা সকাল বেলায় মৌচাক থেকে বের হয়ে ফুলের সন্ধান করে। তারা রহস্যময় পদ্ধতিতে অন্য মৌমাছিদের জানিয়ে দেয় যে, অমুক এলাকায় বা স্থানে প্রচুর ফুল পাওয়া যায় এবং তাদের মৌচাক থেকে ওই ফুল গাছগুলোর অবস্থান কোন দিকে ও কত দূরে তাও তারা জানিয়ে দেয় সহকর্মীদেরকে! এরপর তারা নানা ফুলের মধু খেতে থাকে। ফলে মৌমাছি থেকে যে সুপেয় পানিয় বের হয় তা আসলে নানা বর্ণের ফুল ও ফলেরই নির্যাস। এই পবিত্র পানীয় মানুষের অনেক রোগের মহৌষধ। মধু উৎপাদন সহ মৌমাছির সার্বিক তৎপরতা মহান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতা ও মহত্ত্বের নিদর্শন।

আল-হাদীসে মধু প্রসঙ্গঃ

হাদীস থেকে প্রমান পাওয়া যায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন রোগ ও প্রতিষেধকের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন এবং সাহাবীগণকে চিকিৎসাও দিয়েছেন। তম্মধ্যে মধু ও কালোজিরার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযেগ্য। ব্যক্তিগতভাবে তিনি মধুকে পছন্দ করতেন।

 حَدَّثَنِي الْحُسَيْنُ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ حَدَّثَنَا مَرْوَانُ بْنُ شُجَاعٍ حَدَّثَنَا سَالِمٌ الْأَفْطَسُ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ الشِّفَاءُ فِي ثَلَاثَةٍ شَرْبَةِ عَسَلٍ وَشَرْطَةِ مِحْجَمٍ وَكَيَّةِ نَارٍ وَأَنْهَى أُمَّتِي عَنْ الْكَيِّ

 “ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেছেন, তিনটি জিনিসের মধ্যে রোগমুক্তি আছে। মধু পানে, শিঙ্গা লাগানোতে এবং আগুন দিয়ে দাগ লাগানোতে। আমার উম্মাতকে আগুন দিয়ে দাগ দিতে নিষেধ করছি। হাদীসটি ‘মারফূ’।” (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৬৮১) আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৫)

(শিঙ্গা লাগানো হলো একটি ছোট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দেহ হতে দূষিত রক্ত বের করে দেয়া। বর্তমান যুগে এই চিকিৎসা খুব একটা হয়না। কিছু দিন আগেও বেদের মেয়েরা শিঙ্গা লাগাতেন। তবে চীনে এই চিকিৎসা যৎসামান্য পরিবর্তন করে করা হয় যা আকুপাংচার নামে পরিচিত।) হাদীসে এসছে-

 حَدَّثَنِي الْحُسَيْنُ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ حَدَّثَنَا مَرْوَانُ بْنُ شُجَاعٍ حَدَّثَنَا سَالِمٌ الْأَفْطَسُ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ الشِّفَاءُ فِي ثَلَاثَةٍ شَرْبَةِ عَسَلٍ وَشَرْطَةِ مِحْجَمٍ وَكَيَّةِ نَارٍ وَأَنْهَى أُمَّتِي عَنْ الْكَيِّ

“ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)–এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রোগমুক্তি আছে তিনটি জিনিসে। শিঙ্গা লাগানোতে, মধু পানে এবং আগুন দিয়ে দাগ দেয়াতে। আমার উম্মাতকে আগুন দিয়ে দাগ দিতে নিষেধ করছি।” (সহীহুল বুখারী (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৬) অন্য হাদীসে এসেছে-

 حَدَّثَنَا فَرْوَةُ بْنُ أَبِي الْمَغْرَاءِ حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ  كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ الْعَسَلَ وَالْحَلْوَاءَ

“আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিষ্টান্ন দ্রব্য ও মধু অধিক পছন্দ করতেন।” (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৬৮২, আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৭)

حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ الْغَسِيلِ عَنْ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ قَتَادَةَ قَالَ سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنْ كَانَ فِي شَيْءٍ مِنْ أَدْوِيَتِكُمْ أَوْ يَكُونُ فِي شَيْءٍ مِنْ أَدْوِيَتِكُمْ خَيْرٌ فَفِي شَرْطَةِ مِحْجَمٍ أَوْ شَرْبَةِ عَسَلٍ أَوْ لَذْعَةٍ بِنَارٍ تُوَافِقُ الدَّاءَ وَمَا أُحِبُّ أَنْ أَكْتَوِيَ

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ “তোমাদের ঔষধসমূহের কোনটির মধ্যে যদি কল্যাণ থাকে তাহলে তা আছে শিঙ্গাদানের মধ্যে কিংবা মধু পানের মধ্যে কিংবা আগুন দিয়ে ঝলসানোর মধ্যে। রোগ অনুসারে। আমি আগুন দিয়ে দাগ দেওয়া পছন্দ করি না।” (মুসলিম, খণ্ড-৩৯, হাদীস নং ২২০৫, আহমাদ, হাদীস নং ৪৬০৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৮) অন্য হাদীসে এসেছে-

حَدَّثَنَا عَيَّاشُ بْنُ الْوَلِيدِ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْأَعْلَى حَدَّثَنَا سَعِيدٌ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَبِي الْمُتَوَكِّلِ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَخِي يَشْتَكِي بَطْنَهُ فَقَالَ اسْقِهِ عَسَلًا ثُمَّ أَتَى الثَّانِيَةَ فَقَالَ اسْقِهِ عَسَلًا ثُمَّ أَتَاهُ الثَّالِثَةَ فَقَالَ اسْقِهِ عَسَلًا ثُمَّ أَتَاهُ فَقَالَ قَدْ فَعَلْتُ فَقَالَ صَدَقَ اللَّهُ وَكَذَبَ بَطْنُ أَخِيكَ اسْقِهِ عَسَلًا فَسَقَاهُ فَبَرَأَ

“আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট এসে বললঃ আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি দ্বিতীয়বার আসলে তিনি বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। অতঃপর তৃতীয়বার আসলে তিনি বললেন তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি এসে বললঃ আমি অনুরূপই করেছি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ্‌ সত্য বলেছেন, কিন্তু তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা বলছে। তাকে মধু পান করাও। অতঃপর সে তাকে পান করাল। এবার সে রোগমুক্ত হল।” (ইবন মাজাহ, হাদীস নং  ৫৬৮৪৫৭১৬; মুসলিম, খণ্ড-৩৯, হাদীস নং ২২৬৭, আহমাদ, হাদীস নং  ১১১৪৬) আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৯)

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ سَلَمَةَ حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ أَبِي إِسْحَقَ عَنْ أَبِي الْأَحْوَصِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْكُمْ بِالشِّفَاءَيْنِ الْعَسَلِ وَالْقُرْآنِ

আবদুল্লাহ (বিন মাসঊদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “দু’ আরোগ্য দানকারী বস্তুকে অবশ্যই তোমাদের গ্রহণ করা উচিতঃ মধু ও কুরআন মজীদ।” (ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৫২) অন্য হাদীসে এসেছে-

حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ خِدَاشٍ حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ زَكَرِيَّاءَ الْقُرَشِيُّ حَدَّثَنَا الزُّبَيْرُ بْنُ سَعِيدٍ الْهَاشِمِيُّ عَنْ عَبْدِ الْحَمِيدِ بْنِ سَالِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ لَعِقَ الْعَسَلَ ثَلَاثَ غَدَوَاتٍ كُلَّ شَهْرٍ لَمْ يُصِبْهُ عَظِيمٌ مِنْ الْبَلَاءِ

আবু হুরায়রাহ (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কোনো ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন ভোরবেলা মধু চেটে চেটে খেলে সে মারাত্মক কোনো বিপদে আক্রান্ত হবে না। (ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৫০)

মধু যেমন বলকারক খাদ্য এবং রসনার জন্য আনন্দ এবং তৃপ্তিদায়ক, তেমনি রোগ-ব্যাধির জন্যও ফলদায়ক ব্যবস্থাপত্র। কোনো কোনো আলেম বলেনঃ মধু সর্বরোগের প্রতিষেধক। তারা মহান পালনকর্তার উক্তির বাহ্যিক অর্থেই এমন প্রবল ও অটল বিশ্বাস রাখেন যে, তারা ফোঁড়া ও চোখের চিকিৎসাও মধুর মাধ্যমে করেন এবং দেহের অন্যান্য রোগেরও । এ কারণেই হয়তঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও মধু পছন্দ করতেন।” (বুখারী, হাদীস নং ৫৪৩১, ৫৬১৪, মুসলিম, হাদীস নং ১৪৭৪, আবুদাউদ, হাদীস নং  ৩৭৫১, তিরমিযী, হাদীস নং  ১৮৩২, ইবনে মাজাহ, হাদীস নং  ৩৩২৩, মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৬, পৃ. ৫৯)

ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তার শরীরে ফোঁড়া বের হলেও তিনি তাতে মধুর প্রলেপ দিয়ে চিকিৎসা করতেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আজ এটাই প্রমাণ করেছে, মধু অগণিত রোগের ওষুধ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন। তবে হ্যাঁ, মধু কোন রোগে কতটুকু ব্যবহার প্রয়োজন সে বিষয়ে গবেষণা করার দায়িত্ব চিকিৎসকদেরই।

কালোজিরা প্রসঙ্গে হাদীসে রাসূলঃ

কালোজিরা এটি খুব পরিচিত একটি নাম। ছোট ছোট কালো দানাগুলোর মধ্যে সৃষ্টিকর্তা যে কী বিশাল ক্ষমতা নিহিত রেখেছেন তা সত্যি বিস্ময়কর। প্রাচীনকাল থেকে কালোজিরা মানবদেহের নানা রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এজন্য একে সকল রোগের মহৌষধও বলা হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কালোজিরাকে মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের মহাঔষধ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এবং বিভিন্ন রোগের চিকিৎিসায় তিনি এটি প্রয়োগেরও অসংখ্য প্রমান হাদীস থেকে পাওয়া যায়। অনুরুপভাবে সাহাবায়ে কিরামকেও কালোজিরার মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহনের পরামর্শ দিয়েছেন।

এ সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হল:

عن أَبُي سَلَمَةَ وَسَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ أَخْبَرَهُمَا أَنَّه“ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلميَقُوْلُ فِي الْحَبَّةِ السَّوْدَاءِ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلاَّ السَّامَ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَالسَّامُ الْمَوْتُ وَالْحَبَّةُ السَّوْدَاءُ الشُّونِيزُ.

“আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেনঃ কালোজিরা ‘সাম’ ছাড়া যাবতীয় রোগের ঔষধ। ইবনু শিহাব বলেছেনঃ আর ‘সাম’ অর্থ হল মৃত্যু এবং কালোজিরাকে ‘শুনীয’ও বলা হয়।” (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৬৮৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭৩) 

অন্য এক হাদীসে এসেছে-

عَنْ خَالِدِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ خَرَجْن وَمَعَنَا غَالِبُ بْنُ أَبْجَرَ فَمَرِضَ فِي الطَّرِيقِ فَقَدِمْنَا الْمَدِينَةَ وَهُوَ مَرِيضٌ فَعَادَهُ ابْنُ أَبِي عَتِيقٍ فَقَالَ لَنَا عَلَيْكُمْ بِهٰذِهِ الْحُبَيْبَةِ السَّوْدَاءِ فَخُذُوا مِنْهَا خَمْسًا أَوْ سَبْعًا فَاسْحَقُوهَا ثُمَّ اقْطُرُوهَا فِي أَنْفِه„ بِقَطَرَاتِ زَيْتٍ فِي هٰذَا الْجَانِبِ وَفِي هٰذَا الْجَانِبِ فَإِنَّ عَائِشَةَ حَدَّثَتْنِي أَنَّهَا سَمِعَتْ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلميَقُوْلُ إِنَّ هٰذِهِ الْحَبَّةَ السَّوْدَاءَ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلاَّ مِنْ السَّامِ قُلْتُ وَمَا السَّامُ قَالَ الْمَوْتُ. 

“খালিদ ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা (যুদ্ধের অভিযানে) বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন গালিব ইবনু আবজার। তিনি পথে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর আমরা মদীনায় ফিরলাম তখনও তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে দেখাশুনা করতে আসেন ইবনু আবূ ‘আতীক। তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা এ কালোজিরা সাথে রেখ। এত্থেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তন্মধ্যে যাইতুনের কয়েক ফোঁটা তৈল ঢেলে দিয়ে তার নাকের এ দিক-ওদিকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবিষ্ট করাবে। কেননা, ‘আয়িশাহ (রাঃ) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেনঃ এই কালো জিরা ‘সাম’ ছাড়া সব রোগের ঔষধ। আমি বললামঃ ‘সাম’ কী? তিনি বললেনঃ মৃত্যু।” (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৬৮৭ আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭) 

অন্য এক হাদীসে এসেছে-

أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَسَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، أَخْبَرَهُمَا أَنَّهُ، سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏ "‏ إِنَّ فِي الْحَبَّةِ السَّوْدَاءِ شِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلاَّ السَّامَ ‏"‏ ‏.‏ وَالسَّامُ الْمَوْتُ ‏.‏ وَالْحَبَّةُ السَّوْدَاءُ الشُّونِيزُ ‏.‏

“আবু হুরায়রাহ (রাঃ), থেকে বর্ণিত  সূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ কালিজিরায় মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের নিরাময় আছে। ‘আস-সাম’ অর্থ মৃত্যু, হাব্বাতুস সাওদা অর্থ কালিজিরা।” (ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৭, তাহকীক আলবানীঃ সহীহ) অন্য এক হাদীসে এসেছে-

حَدَّثَنَا أَبُو سَلَمَةَ يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَبْدِ  الْمَلِكِ قَالَ سَمِعْتُ سَالِمَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ عَلَيْكُمْ بِهَذِهِ الْحَبَّةِ السَّوْدَاءِ فَإِنَّ فِيهَا شِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلَّا السَّامَ

“আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অবশ্যই তোমারা এই কালো দানা ব্যবহার করবে কেননা তাতে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের নিরাময় রয়েছে।”

(ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৮, তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।) অন্য এক হাদীসে এসেছে-

عَنْ خَالِدِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ خَرَجْنَا وَمَعَنَا غَالِبُ بْنُ أَبْجَرَ فَمَرِضَ فِي الطَّرِيقِ فَقَدِمْنَا الْمَدِينَةَ وَهُوَ مَرِيضٌ فَعَادَهُ ابْنُ أَبِي عَتِيقٍ وَقَالَ لَنَا عَلَيْكُمْ بِهَذِهِ الْحَبَّةِ السَّوْدَاءِ فَخُذُوا مِنْهَا خَمْسًا أَوْ سَبْعًا فَاسْحَقُوهَا ثُمَّ اقْطُرُوهَا فِي أَنْفِهِ بِقَطَرَاتِ زَيْتٍ فِي هَذَا الْجَانِبِ وَفِي هَذَا الْجَانِبِ فَإِنَّ عَائِشَةَ حَدَّثَتْهُمْ أَنَّهَا سَمِعَتْ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏"‏ إِنَّ هَذِهِ الْحَبَّةَ السَّوْدَاءَ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلاَّ أَنْ يَكُونَ السَّامُ ‏"‏ ‏.‏ قُلْتُ وَمَا السَّامُ قَالَ ‏"‏ الْمَوْتُ ‏"‏ ‏.‏

খালিদ বিন সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমরা রওয়ানা হলাম এবং গালিব বিন আবজারও আমাদের সাথে ছিলেন। পথিমধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি অসুস্থ থাকতেই আমরা মদিনায় পৌছে গেলাম। ইবনু আবু আতীক (রাঃ) তাকে দেখতে এলেন। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা এই কালো দানাগুলো ব্যবহার করবে। তা থেকে পাঁচটি বা সাতটি দানা নিয়ে সেগুলো পিষে তেলের সাথে মিশিয়ে নাকের এপাশে ওপাশে অর্থাৎ উভয় ছিদ্রপথে ফোঁটা ফোঁটা করে দাও। কেননা আয়েশা (রাঃ) তাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ এই কালো দানা ‘সাম’ ব্যতীত সব রোগের ঔষধ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘সাম’ কী? তিনি বলেনঃ মৃত্যু। (ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৯, তাহকীক আলবানীঃ সহীহ)

অন্য এক হাদীসে এসেছে- বুরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إِنَّ هَذِهِ الْحَبَّةَ السَّوْدَاءَ فِيهَا شِفَاءٌ ، قَالَ وَفِي لَفْظٍ : قِيلَ وَمَا الْحَبَّةُ السَّوْدَاءُ ؟ قَالَ الشُّونِيزُ قَالَوَكَيْفَ أَصْنَعُ بِهَا ؟ قَالَ : تَأْخُذُ إِحْدَى وَعِشْرِينَ حَبَّةً فَتَصُرُّهَا فِي خِرْقَةٍ ، ثُمَّ تَضَعُهَا فِي مَاءٍ لَيْلَةً فَإِذَا أَصْبَحْتَ قَطَرْتَ فِي الْمَنْخِرِ الْأَيْمَنِ وَاحِدَةً وَفِي الْأَيْسَرِ اثْنَتَيْنِ ، فَإِذَا كَانَ مِنَ الْغَدِ قَطَرْتَ فِي الْمَنْخِرِ الْأَيْمَنِ اثْنَتَيْنِ وَفِي الْأَيْسَرِ وَاحِدَةً ، فَإِذَا كَانَ فِي الْيَوْمِ الثَّالِثِ قَطَرْتَ فِي الْأَيْمَنِ وَاحِدَةً وَفِي الْأَيْسَرِ اثْنَتَيْنِ

“নিশ্চয় এই কালোজিরায় আরোগ্য রয়েছে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কালোজিরা কী? তিনি বললে, শুনীয। প্রশ্ন করলেন: কিভাবে তা ব্যবহার করবো? তিনি বললেন: “২১টি কালোজিরার ১টি পুটলি তৈরি করে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখবে এবং সকালে (পুটলির পানির ফোঁটা এ নিয়মে নাসারন্ধ্রে ব্যবহার করবে) “প্রথমবার ডান নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা এবং বাম নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা। পরের দিন বাম নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা এবং ডান নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা। তৃতীয় দিন ডান নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা ও বাম নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা।” (আবু নুআইম-কিতাবুত ত্বিব, মুস্তাগফিরী-কিতাবুত ত্বিব-সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারী থেকে নেয়া)

কালোজিরা সম্পর্কে একাধিক বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই হাদিসগুলো অবশ্যই সত্য। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নাই। কারণ তিনি, যা বলতেন আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমে বলতেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ- إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ
এবং তিনি মনগড়া কথা বলেন না। এটি (আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নিকট) প্রেরিত ওহী ছাড়া অন্য কিছু নয়। (সূরা নজম, আয়াত: ৩ ও ৪)

মধু ও কালোজিরা থেকে উপকৃত হতে হলে কী করণীয়?

মধু ও কালোজিরা থেকে প্রকৃত উপকার পেতে হলে অবশ্যই তার ব্যবহার পদ্ধতি জেনে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। এ বিষয়গুলো গবেষণা এবং অভিজ্ঞতার আলোকে বিশেষজ্ঞদের নিকট থেকে জানতে হবে। তাহলে আশা করা যায়, মধু ও কালোজিরা ব্যবহার করে সকল প্রকার রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। ইচ্ছে মত ব্যবহার করলেই সকল রোগের ক্ষেত্রে সমানভাবে সাফল্য নাও পাওয়া যেতে পারে।

তবে মনে রাখতে হবে, রোগ থেকে আরোগ্য দানকারী একমাত্র আল্লাহ। ঔষধ কেবল মাধ্যম। সুতরাং আল্লাহ যদি না চান তাহলে কোনো ওষুধই কাজ করে না। কারণ আল্লাহ হয়তো বান্দাকে রোগব্যাধি দিয়ে পরীক্ষা করেন অথবা এর মাধ্যমে তার গুনাহ মোচন করেন, আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং সেখানে তাকে এর চেয়েও বড় পুরস্কারে ভূষিত করেন যা দুনিয়ার সকল কল্যাণ এর থেকেও অধিক উত্তম। আল্লাহ চাইলে অবশ্যই সুস্থতা অর্জিত হবে। অন্যথায় তিনি অন্যভাবে বান্দাকে এর বিনিময় দান করবেন। এ বিশ্বাস রাখাই মুমিনের কর্তব্য।

বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞান মধু কালোজিরা গবেষণা করে এর মাধ্যমে অনেক রোগের চিকিৎসায় বিস্ময়কর ফলাফল অর্জন করেছে। আশা করি, সময়ের ব্যবধানে এর আরও ওষধি গুণ মানবজাতির সামনে প্রতিভাত হবে ইনশাআল্লাহ।


লেখকঃ 
প্রফেসর, আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, 
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, 
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ, বাংলাদেশ।

ইমেইলঃ abuzabir@gmail.com