'শেখ আকিজ উদ্দিন: জীবন ও সময়' গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

'শেখ আকিজ উদ্দিন: জীবন ও সময়' গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

ছবি: প্রতিনিধি

বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা মরহুম শেখ আকিজ উদ্দিনের জীবন ও সময়ের ওপর লেখা ‘শেখ আকিজ উদ্দিন: জীবন ও সময়’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। রবিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সাবেক পরিচালক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শেখ আকিজ উদ্দিনের জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ ও আদ্-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যালস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ড. জামালুন্নেসা, শেখ আকিজ উদ্দিনের সন্তান শেখ আমিন উদ্দিন, আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন, আবদুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মাইনুদ্দীন মোনেম ও আকিজ বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।

প্রধান অতিথি ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘সব ব্যবসারই একটা বড় ভিত্তি হলো বিশ্বাস। এ বিশ্বাসটা যেখানে দুর্বল, সেখানেই আইন প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। কর্মীদের প্রতি দায়বোধ, সমাজের প্রতি দায়বোধ—এগুলো থাকা দরকার এবং এ বিষয়গুলো শেখ আকিজ উদ্দিনের মধ্যে ছিল। আমরা উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে যেটা জানি, সেটা বাংলাদেশ হোক, উপমহাদেশ হোক বা তার বাইরে যেখানেই হোক, তাদের ভেতরে এ গুণগুলো ছিল। তারা কখনো শ্রমিকের প্রতি দায়বদ্ধতা ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা অস্বীকার করেননি। এখন পৃথিবীর যেসব দেশ উন্নত, তারা কিন্তু শুরু থেকেই উন্নত ছিল না। তাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কতগুলো বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। সঞ্চয়, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, দায়বোধসহ নানা বিষয় তাদের উন্নতির পথে নিয়ে গেছে। যখন বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের ভাগ্য নিজেদের হাতে আনতে পেরেছে, তখন থেকেই এখানে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যারা এ সুযোগের সুষ্ঠু ব্যবহার করেছেন, তারা দেশ ও সমাজের কল্যাণ করেছেন। শেখ আকিজ উদ্দিন ছিলেন ঠিক এমনই একজন।’

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘আমরা যদি নতুন প্রজন্মের কাছে এ ধরনের নিরলস, নিরহংকারী, পরিশ্রমী ও সফল উদ্যোক্তার কাহিনী না জানাই, তাহলে পুরো জাতির জন্য একটি ক্ষতির কারণ হবে। আজকে বাংলাদেশের ৫২ বছরের যে বিশাল অর্থনীতি, এর পেছনে যাদের অবদান তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। আর শেখ আকিজ উদ্দিন তাদের মধ্যে অন্যতম।’

শেখ আকিজ উদ্দিনের জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ অধ্যাপক ড. জামালুন্নেসা বলেন, ‘যখন আকিজ পরিবারে আসি তখনো আমি এসএসসি পরীক্ষা দিইনি। এর পর থেকে বাবার তত্ত্বাবধানে ও তার উৎসাহে আমি এতদূর পড়াশোনা করতে পেরেছি। তিনি লেখাপড়ার মূল্য বুঝতেন। ১৯৯৭ সালে ইংল্যান্ডে যখন পিএইচডির স্কলারশিপ পেয়েছি তখন আমার মনে ভয় ছিল যে বাবা যেতে দেবেন কিনা, কিন্তু উনি আমাকে শুধু যেতেই দেননি, সেই সঙ্গে প্রায় সময় দেখতে যেতেন আমাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আমি পড়ি তখন বাবা তার গাড়িতে মাঝেমধ্যে নামিয়ে দিতেন। অন্যান্য সময় রিকশা বা বাসে যাতায়াত করেছি। তার ছেলেমেয়েরাও বাসে যাতায়াত করত। কখনো বলার সাহস হয়নি যে বাবা আমাদের গাড়ি কিনে দেন। আমাদের কোম্পানির অফিসারদের তিনি গাড়ি দিয়েছেন কিন্তু আমাদের গাড়ি দেননি। আমরা ভাড়া বাসায় থেকেছি। বাবা কখনো রাতে বাইরে খাবার খেতেন না। বাড়ির সবাইকে নিয়ে খেতেন। বাবা খুব নিয়ম মেনে চলতেন। অন্যরাও তার কারণে নিয়ম মানতে হতো। বাবা আমাদের কৃচ্ছ্রসাধন করতে শিখিয়েছেন।’

বাবার স্মৃতিচারণ করে শেখ আকিজ উদ্দিনের সন্তান ও আকিজ বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘বাবা সবসময় সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করতেন। তিনি মনে করতেন, তিনি যে পণ্যটি বানাবেন সেটি যেন দামের চেয়ে দামি হয়। পারিবারিকভাবে একে অন্যের প্রতি সম্মান অনেক বেশি ছিল। এখনো আমি আমার বড় ভাইয়ের সামনে মাথা উঁচু করে কথা বলি না। আবার আমার ছোট ভাই আমার সামনে মাথা উঁচু করে কথা বলবে না। এটা আমার বাবাই আমাদের মধ্যে তৈরি করেছেন। আমার বাবা নিজে ভোগ্যপণ্য বানাতেন, কিন্তু তিনি কখনো ভোগে বিশ্বাস করেননি। তিনি মিতব্যয়ী ছিলেন, কিন্তু কৃপণ ছিলেন না।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকজয়ী অনুবাদক আলম খোরশেদ, একুশে পদকজয়ী গবেষক-প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ড. মাসুদুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহিদুল হাসান, লেখক হোসাইন মোহাম্মদ জাকি, এসবিএসি ব্যাংকের এমডি ও সিইও হাবিবুর রহমান, রাজা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি মো. নজরুল ইসলাম রাজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. কেএম আজম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) প্রেসিডেন্ট ও জি‌পিএইচ ইস্পাত লি‌মি‌টেডের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর ক‌বির, শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান, বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান ও আইআইডিএফসি লিমিটেডের এমডি মো. গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের এমডি ও সিইও খাজা শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পরিচালক ও লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী, আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের এমডি ও সিইও মমিনুল ইসলাম, আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. আফিকুর রহমান, আকিজ গ্রুপের পরিচালক (এইচ.আর.এম এন্ড কোম্পানী অ্যাফেয়ার্স) মো. তারিকুল ইসলাম মুকুল, আকিজ গ্রুপের পরিচালক (নিরীক্ষা) মো. কামরুজ্জামন, আকিজ গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) মো. শাহিন মিয়া এফসি, আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ ও নার্সিংসমূহের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. নাহিদ ইয়াসমিন, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি মো. আবদুল কাদের, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের অ্যাডভাইজার ফর স্ট্রাটেজি অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট খন্দকার রাশেদ মাকসুদ প্রমুখ।