ফ্রিজের বাজার এখন দেশি ব্র্যান্ডের হাতে

ফ্রিজের বাজার এখন দেশি ব্র্যান্ডের হাতে

রাজধানীর একটি ফ্রিজের শরুম থেকে নেওয়া ছবি।

সমাজের উচ্চ ও মধ্যবিত্তের পাশাপাশি বর্তমানে নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরেও জায়গা করে নিয়েছে রেফ্রিজারেটর। বাংলাদেশে প্রায় দুই দশক ধরে ফ্রিজের বাজার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। মধ্য ও উচ্চবিত্তের দ্রুত বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়ন এবং কিস্তিতে ক্রয়ের সুবিধা থাকায় ফ্রিজের বাজারে দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বর্তমানে এ বাজারে আধিপত্য দেশীয় কম্পানিগুলোর।

দেশের শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। আবার দেশীয় কম্পানি ফ্রিজ উৎপাদন শুরু করায় পণ্যটির আকাশচুম্বী দামও কমেছে অনেকটা। ফলে শখের পরিবর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে ফ্রিজ।

বছরে ৩২ থেকে ৩৫ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হচ্ছে। তার মধ্যে দেশীয় কম্পানির ফ্রিজ বিক্রি হয় ৮০ শতাংশের বেশি। 

বিশ্ববাজারে কাঁচামাল ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে গত এক বছরে ফ্রিজের দাম কম্পানিভেদে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তা ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কিছুটা কমেছে।

সে জন্য গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার বিক্রি খুব বেশি না বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে কোরবানির ঈদ ঘিরে দেশি-বিদেশি সব প্রতিষ্ঠানই ক্রেতা টানতে মূল্যছাড়সহ বিভিন্ন অফার দিয়েছে।
উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারে একাধিক ফ্রিজের ব্যবহার রয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে ফ্রিজের বাজার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার। বছরে ৩২ থেকে ৩৫ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হচ্ছে।

দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বছরে দুই লাখ ফ্রিজ রপ্তানিও হচ্ছে। বাজারে ফ্রিজের ২৫০টিরও বেশি মডেল রয়েছে। বর্তমানে দেশের চাহিদার ৯৫ শতাংশই দেশে উৎপাদিত হচ্ছে, বাকি ৫ শতাংশ ফ্রিজ আমদানি হচ্ছে। দেশি-বিদেশি ১৩টি কম্পানি দেশে ফ্রিজ উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। বছরে ১৫ শতাংশ হারে ফ্রিজের বাজারে প্রবৃদ্ধি হলেও গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কম ছিল। 

২০২১ সালে প্রকাশিত মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশের (এমডাব্লিউবি) এক গবেষণা বলছে, ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশের ফ্রিজের বাজার বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো নিয়ন্ত্রণ করত। বর্তমানে দেশে ফ্রিজের বাজারের বেশির ভাগই দেশীয় ব্র্যান্ডের দখলে। এর মধ্যে এককভাবে দেশি ব্র্যান্ড ওয়ালটনের দখলে অনেকখানি অংশ। বাকিগুলো মিনিস্টার, ভিশন, যমুনা, মার্সেলসহ অন্যদের দখলে। আর বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে সিঙ্গার, স্যামসাং, কনকা, শার্প, এলজি উল্লেখযোগ্য। মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশের এক জরিপে বলা হয়, দেশি-বিদেশি মিলে মোট ফ্রিজের চাহিদার ৯৫ শতাংশই দেশে উৎপাদিত হয়। এর বাইরে বিদেশ থেকে সরাসরি আমদানি হয় ৫ শতাংশ।

দেশে রেফ্রিজারেটর উৎপাদনের প্রথম উদ্যোগ নেয় দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। তারপর একে একে যমুনা, মিনিস্টার, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ভিশন, ট্রান্সকম ও ওরিয়ন কারখানা স্থাপন করে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দেশে ফ্রিজ উৎপাদনের কারখানা গড়ে তুলেছে বিদেশি ব্র্যান্ড স্যামসাং, সিঙ্গার, ওয়ার্লপুল, কনকাসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড।

১৯৯৯ সালে চীন থেকে আমদানি করা টেলিভিশন বিক্রির মাধ্যমে ওয়ালটন ইলেকট্রনিকসের বাজারে যাত্রা শুরু করে। ২০০৫ সালের শেষ দিকে তারা গাজীপুরের কালিয়াকৈরে নিজস্ব জমিতে কারখানা নির্মাণ শুরু করে। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ২০০৮ সালে, ফ্রিজ দিয়ে। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি ফ্রিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কম্প্রেসর উৎপাদন শুরু করে। দেশের পাশাপাশি রপ্তানি বাজারে ভালো অবস্থান তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি দুই লাখ ফ্রিজ রপ্তানি করেছে।

জানতে চাইলে ওয়ালটন রেফ্রিজারেটর চিফ বিজনেস অফিসার তোফায়েল আহমেদ  বলেন, ‘ফ্রিজ এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে। ওয়ালটন আমদানি করা ফ্রিজের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে পণ্যটি সরবরাহ করায় সেটি অনেকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসে। ফ্রিজের বাজারের ৭০ শতাংশের বেশি ওয়ালটনের দখলে রয়েছে। আমরা এরই মধ্যে ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়ার প্রায় ৪০টিরও বেশি দেশে ফ্রিজ রপ্তানি করে আসছি। দেশের বাইরেও ফ্রিজের উল্লেখযোগ্য মার্কেট দখল করতে চাই।’