কোরবানির ফাজায়েল ও মাসায়েল

কোরবানির ফাজায়েল ও মাসায়েল

ফাইল ছবি

কোরবানি ইসলামের এক অন্যতম নিদর্শন ও গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব ইবাদত। এই ইবাদতটি শুধু মুসলমান উম্মতের জন্য নয় বরং পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও ছিল। কোরবানি শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, সান্নিধ্য, ঘনিষ্ঠতা, আত্মত্যাগ ইত্যাদি। পরিভাষায়, কোরবানি হলো জবাইকৃত পশু বা অন্য যা কিছুর মাধ্যমে আল্লাহপাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা হয় তাকেই কোরবানি বলা হয়। কোরবানিকে ফিকহের ভাষায় উজহিয়্যা বলা হয়। উজহিয়্যা শব্দের অর্থ হলো- ওই পশু যা কোরবানির দিন জবাই করা হয়। একমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ ১০, ১১ এবং ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে নির্দিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে নির্দিষ্ট পশু জবাই করাকে উজহিয়্যা বা কোরবানি বলে। হিদায়া, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৮২। কোরবানি সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, আর আপনার প্রভুর জন্য (ঈদের) নামাজ আদায় করুন আর আপনার কোরবানির পশু জবাই করুন (সুরা কাওসার-০২)। পৃথিবীর প্রথম কোরবানি ছিল আদম (আ.) এর আমলে দুই পুত্র হাবিল- কাবিলের। হাবিলের কোরবানি কবুল হয়েছিল। বনি ইসরাইলের যুগেও কোরবানি করা হয়েছিল। মূলত পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.), মাতা হজরত হাজেরা (আ.), আর সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.) এর ত্যাগের উজ্জ্ব¡ল স্বাক্ষর হলো পবিত্র কোরবানি। আল্লাহতায়ালা বলেন, অতঃপর যখন সে (ইসমাইল) তাঁর ইবরাহিমের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি করার বয়সে পৌঁছল, তিনি (ইবরাহিম) বললেন, হে আমার পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখি, আমি যেন তোমাকে জবাই করছি। তুমি চিন্তা করে বলো তুমি কী করবে? সে (ইসমাইল) বলল, হে আমার পিতা! আমাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা সম্পাদন করুন। আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন (সুরা সফফাত-১০২)।

হজরত জায়েদ বিন আরকাম (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবিরা রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.) (এই) কোরবানি কী? রসুল (সা.) উত্তরে বললেন, তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত (বুখারি)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যার কোরবানি করার সক্ষমতা আছে অথচ সে কোরবানি করছে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে (ঈদের নামাজে) না আসে (সুনানু ইবনু মাজাহ)। প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী যার কাছে জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ফজর হতে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা এর সমতুল্য কিংবা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা এর সমমূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকে এবং তা ঋণ বহির্ভূত হয়, এ সম্পদকে নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলা হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। যদি কারও কাছে কিছু স্বর্ণ ও কিছু টাকা আছে, যা সর্বমোট সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার মূল্য সমান হয় তা হলে তার ওপরও কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলি। ১. মুসলিম হওয়া। ২. স্বাধীন হওয়া। ৩. মুকিম হওয়া। ৪. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। ইসলামী শরিয়তে মৃত ব্যক্তিদের নামে বা পক্ষ থেকে কোরবানি করা জায়েজ। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকেও কোরবানি দেওয়া জায়েজ ও উত্তম। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোরবানি করা হারাম। শরিকানা তথা ভাগে কোরবানির ক্ষেত্রে সব বিষয়ে সমবণ্টন করা জরুরি। উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এই ছয় শ্রেণির প্রাণী দিয়ে কোরবানি করতে হয়। পশুর দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি না থাকা, অত্যন্ত দুর্বল, জীর্ণশীর্ণ পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। কোরবানি পশুর গোস্ত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের জন্য, এক ভাগ গরিব-দুঃখীদের বণ্টন করা উত্তম। বিসমিল্লাহ বলে কোরবানির পশু জবাই করতে হবে। সব ইবাদতই হতে হবে আল্লাহতায়ালার জন্য নিবেদিত।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ইমাম খতিব প্রথম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন