সন্তানকে হাফেজে কুরআন তৈরি করার গুরুত্ব

সন্তানকে হাফেজে কুরআন তৈরি করার গুরুত্ব

ফাইল ছবি।

মহান আল্লাহ তায়ারা কোরআনের হাফেজদের দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করেছেন। এ সম্মানের অংশীদার তার মা-বাবাও। তাই সন্তানকে কোরআনের হাফেজ বানানোর স্বপ্ন দেখেন বহু মা-বাবা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং তদনুযায়ী আমল করে, কিয়ামতের দিন তার মা-বাবাকে এমন মুকুট পরানো হবে, যার আলো সূর্যের আলোর চেয়েও উজ্জ্বল হবে।

ধরে নাও, যদি সূর্য তোমাদের ঘরে বিদ্যমান থাকে (তাহলে তার আলো কিরূপ হবে?)। তাহলে যে ব্যক্তি কোরআন অনুযায়ী আমল করে তার ব্যাপারটি কেমন হবে, তোমরা ধারণা করো তো!’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪৫৩)

 

দক্ষ হাফেজ বানাতে করণীয়

প্রাজ্ঞ আলেম ও হাফেজরা সন্তানকে দক্ষ হাফেজ বানাতে নিম্নোক্ত পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

১. গর্ভবর্তী মায়ের তিলাওয়াত : মা যত বেশি তিলাওয়াত করবেন, কোরআনের প্রতি তত বেশি ভালোবাসা নিয়ে গর্ভের সন্তান জন্মগ্রহণ করবে। কোরআনে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহ তোমাদের নির্গত করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে এমন অবস্থায় যে তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৭৮)
ধর্মতাত্ত্বিক আলেমরা বলেন, যেহেতু মাতৃগর্ভে সন্তানের শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও হৃদযন্ত্র সক্রিয় থাকে, তাই মায়ের তিলাওয়াত তাকে উপকৃত করে।

 

২. ঘরে তিলাওয়াত করা : সন্তান জন্মগ্রহণের পর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণের আগ পর্যন্ত ঘরে তিলাওয়াত করা প্রয়োজন।

কখনো কখনো নন্দিত কারি ও হাফেজদের তিলাওয়াতের রেকর্ড বাজালে শিশুরা কোরআনের প্রতি উদ্বুদ্ধ হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা ঘরকে কবরে পরিণত কোরো না।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২০২৪)

 

আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) হাদিসের অর্থ এভাবে করেছেন, ‘তোমরা ঘরকে নামাজ ও তিলাওয়াতশূন্য কোরো না।’ (উমদাতুল কারি : ১/৩৬৮)

৩. মুখে মুখে শিক্ষাদান : শিশুর বয়স আট মাস হওয়ার পর তারা যখন বিভিন্ন শব্দ শিখতে শুরু করে, তখন মা-বাবা শিশুকে আল্লাহর নাম, কালিমা ও কোরআনের নির্বাচিত আয়াত-সুরা শেখানোর চেষ্টা করবেন। বিশেষত শিশুর বয়স তিন বছর হওয়ার পর তাকে মুখে মুখে প্রয়োজনীয় দোয়া, ছোট ছোট সুরা শেখানো প্রয়োজন।

 

৪. ঠিক বয়সে হিফজ শুরু করা : মেধা ও স্মরণশক্তির ভিত্তিতে শিশুরা পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে কোনো কিছু মুখস্থ করার সক্ষমতা অর্জন করে। সুতরাং এই বয়সেই তার কোরআন হিফজ করার প্রাতিষ্ঠানিক প্রচেষ্টা শুরু করতে হবে। প্রথমে সে কোরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শিখবে। অতঃপর হিফজ শুরু করবে। এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করাই উত্তম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতি আল্লাহর ওহি সম্পূর্ণ হওয়ার আগে কোরআন পাঠে তুমি ত্বরা কোরো না এবং বোলো, হে আমার প্রতিপালক, আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ কোরো।’ (সুরা তাহা, আয়াত : ১১৪)

৫. প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু পর যা লক্ষণীয় : শিশু যখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করবে, তখন মা-বাবা ও অভিভাবক কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখবেন। তা হলো, ক. শিশু আরবি হরফের পরিচয় ও হরফের বৈশিষ্ট্যগুলো ঠিকমতো শিখছে কি না, খ. হরফের মাখরাজ তথা উচ্চারণ বিশুদ্ধ হচ্ছে কি না, গ. তিলাওয়াতের সময় মদ্দ-গুন্নাহসহ অন্যান্য নিয়ম রক্ষা করছে কি না, ঘ. তিলাওয়াতের সময় তারতিল রক্ষা করছে কি না, ইত্যাদি।

৬. হিফজ করার সহজ পদ্ধতি : সহজে কোরআন হিফজ করতে চাইলে অভিজ্ঞ হাফেজরা নিম্নোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলেন—ক. ছোট সুরা দিয়ে শুরু করা, খ. উচ্চ আওয়াজে পাঠ করা, গ. বাক্য বা বাক্যাংশ বার বার পাঠ করা; কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ বার, ঘ. বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শোনা, ঙ. মুখস্থ অংশ নামাজে তিলাওয়াত করা, চ. শিশুদের ভেতর প্রতিযোগিতা তৈরি করা।

৭. সন্তানের মনোবল ও মেধা দুর্বল হলে : সন্তানের যদি কোরআন হিফজ করার মতো মেধা থাকে; কিন্তু মনোবল কম থাকে, তবে তাকে সাহস জোগাতে হবে এবং উৎসাহিত করতে হবে। যেমন আল্লাহ কোরআন সহজ করার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘কোরআন আমি সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?’ (সুরা কামার, আয়াত : ১৭)

আর সন্তানের মেধা ও স্মরণশক্তি দুর্বল হলে তাকে হিফজ পড়ানো উচিত নয়। কেননা কোরআন মুখস্থ করার পর তা স্মরণ রাখা ওয়াজিব। আর কোরআন স্মরণ রাখা খুব সহজ কাজ নয়। আল্লাহ সব মা-বাবার নেক ইচ্ছা ও স্বপ্নগুলো পূরণ করুন। আমিন