দৌড়ঝাঁপের পরেও শেষ রক্ষা পেলেন না তাজুল

দৌড়ঝাঁপের পরেও শেষ রক্ষা পেলেন না তাজুল

ফাইল ছবি।

অর্থবিত্ত, প্রভাব আর সব ধরনের কুটকৌশল ব্যবহার করেও শেষ রক্ষা হলো না ড. তাজুল ইসলামের। বহুল বিতর্কিত এই কাস্টমস অফিসার যেকোনো মূল্যে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে নিজের বাহাদুরী বহাল রাখতে গ্রুপিং-লবিং, আভ্যন্তরীণ কোন্দলের সূত্রপাত ঘটিয়েও ক্ষ্যান্ত হননি। একপর্যায়ে আদালতের আদেশ গোপন করে গত বছর ২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক সদস্য পদে নির্বাচন করে বিজয়ীও হন।

কিন্তু উচ্চ আদালত ড. তাজুল ইসলামের সদস্য পদ স্থগিতের আদেশ প্রদান করেন, তবুও থেমে যাননি তিনি। এরপর তাজুল ইসলাম সেই আদেশের ব্যাপারে বিশেষ বিবেচনা প্রার্থনা করে চেম্বার জজ আদালত থেকে ফুল বেঞ্চ পর্যন্ত ছোটাছুটি করেন।

শেষ আর্তি হিসেবে তিনি শুধু ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের মিটিংসমূহে হাজির থাকার আবেদন করেন। কিন্তু ফুলকোর্ট বেঞ্চ সে ব্যাপারে কোনো রকম সিদ্ধান্ত না দিয়ে গত ২১ জুন মামলা হাইকোর্টেই ফেরত পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। ফলে আবেদন, নিবেদন, আব্দার প্রাপ্তিতে ব্যর্থ হয়ে রীতিমত মূষঢ়ে পড়েছেন দাপুটে ওই সরকারি কর্মকর্তা।

শীর্ষ পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক সদস্য পদ স্থগিত হওয়ায় এবার ভর্তি বাণিজ্যের নামে তার কোটি কোটি টাকা লুটে নেয়ার অভিযোগ খবর চাউড় হয়ে উঠেছে। বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বেশুমার ভর্তি বাণিজ্য ও স্বার্থের দ্বন্দ্বে ঐতিহ্যবাহী ভিকারুননিসা নূন সুনাম ধ্বংসের নেপথ্য কাহিনী।

অভিযোগ উঠেছে, ২০১৭-১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক প্রতিনিধি থাকাবস্থায় বহুল বিতর্কিত ধনাঢ্য কাস্টমস অফিসার ড. তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে থ্রি স্টার সিন্ডিকেট যে সীমাহীন অপকর্ম ঘটিয়েছে তার জেরেই ভিকারুননিসা নূন নিয়ে বেহাল পরিস্থিতির সূত্রপাত ঘটে। ওই সময় ৪৪৩ জন শিক্ষার্থীকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

সেখান থেকেই স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানামুখী দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে শিক্ষক, অভিভাবক থেকে কর্মকর্তা পর্যায়ে। এসব ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি, প্রধান শিক্ষক শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছে অথচ নাটের গুরু কাস্টমস কর্মকর্তা আজও রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

ড. তাজুলের নেতৃত্বাধীন ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় অতিরিক্ত ৪৪৩ জন ছাত্রী ভর্তিসহ যাবতীয় অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাটের সকল তথ্য ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে মাউশি’র তদন্তে প্রমানিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।

তদন্তে প্রকাশ পায়, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছিল গভর্নিং বডির নির্দেশে। কিন্তু গভর্নিং বডির ড. তাজুলসহ তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারায় অধ্যক্ষের এমপিও বাতিল করে মন্ত্রণালয়। অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তির সময়ে প্রতিষ্ঠানটিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হাসিনা বেগম (মূলপদ : সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি) এবং এ সময়ে গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি মুস্তারি সুলতানা এবং ড. ফারহানা খানম দায়িত্ব পালন করেন।

দীর্ঘদিন ধরে ভর্তি নিয়ে নানা সংকট তৈরি হলেও দায়ী গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে কোনো সময়ই ব্যবস্থা নিতে পারেনি মন্ত্রণালয়। অভিযোগকারীদের বক্তব্য- নীতিমালা বহির্ভূত ভর্তির বিষয়টি হালাল করতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের তদবিরের সুপারিশ রক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় মাস্তান এমনকি শিক্ষা বিভাগের কোনো কোনো ব্যক্তি ভাগ পেয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।

তাজুলসহ যে তিনজনের সদস্যপদ স্থগিত হয়েছে
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালে ঢাকা ডিসি অফিসের এডিসি শিক্ষা বিতর্কিত কাস্টমস কর্মকর্তা ড. তাজুল ইসলামের নমিনেশন পেপার বাতিল করে দেন। অতঃপর ডিসি বরাবর আবেদন করা হলে তাও নামঞ্জুর হয়। এর প্রেক্ষিতে

হাইকোর্টে রিট করেও তাজুল ইসলাম নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুমতি লাভে ব্যর্থ হন। আদালতের এ তথ্য গোপন করে ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত গভর্নিং বডির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ীও হয়। তার সঙ্গে ওই নির্বাচনে অপর অভিযুক্ত সিদ্দিকী নাসিরউদ্দিন ও ওয়াহিদউজ্জামান মন্টুও অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।

পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানসহ অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী ওই তিন অভিভাবক সদস্যের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করলে হাইকোর্ট তিন জনেরই সদস্যপদ স্থগিত করে। চেম্বার জজে আবেদন করলে স্ট্যাটাস্কো প্রদান করে এবং ফুলকোর্ট শুনানি দেয়। পরবর্তীতে উক্ত তিনজন গভর্নিং বডির মিটিংয়ে আসার জন্য অনুমতি চেয়ে এপিলেট ডিভিশনে পিটিশন দেয়। প্রধান বিচারপতি পিটিশন আমলে না নিয়ে হাইকোর্টে শুনানি করে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আদেশ দেন।

ফলে উক্ত তিনজন সদস্যের সদস্য পদ নিশ্চিতভাবে স্থগিত হওয়া ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ গভর্ণিং বডির কোন কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।