ঈদকে কেন্দ্র করে কঠোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ঈদকে কেন্দ্র করে কঠোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ফাইল ছবি।

একদিকে নির্বাচনের বছর, অন্যদিকে অনলাইনে জঙ্গিদের তৎপরতা; এসব বিষয় মাথায় রেখে যে কোনও ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারীদের বিষয়ে আগে থেকেই নজরদারি শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি ইউনিট।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটাই শেষ ঈদ।  সে পরিপ্রেক্ষিতে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কেউ যেন কোনও ধরনের গুজব, উসকানিমূলক বা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সাইবার মনিটরিং জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো। এছাড়াও দেশব্যাপী বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কোনও জঙ্গি হামলার কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে এজন্য আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন না তারা। মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি সাইবার জগতে মনিটরিং বৃদ্ধির মাধ্যমে জঙ্গিদের যেকোনও ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যেকোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কিংবা অসঙ্গতি দেখতে পেলে ৯৯৯ মাধ্যমে জানানোর পরামর্শ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখারও সুযোগ থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের প্রধান প্রধান ঈদ জামাত কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিকল্পনা এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ, দিনাজপুর এবং শোলাকিয়ায় দেশের বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এসব ঈদ জামাতগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এর জন্য জেলা পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব কিছুই মনিটরিং করা হচ্ছে।

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঈদগাহ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সুইপিং পরিচালনার পাশাপাশি থাকবে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। ঈদের ছুটিতে বিনোদন কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করতে জেলা পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা টুরিস্ট পুলিশকেও এসব বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ সকল মেট্রোপলিটন শহর জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এবং ঢোকার মুখে চেকপোস্ট পরিচালনা করা হবে। সকল মেট্রোপলিটন শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরে যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় রিজার্ভ ফোর্স থাকবে।

র‌্যাবের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদুল আজহা উদযাপনে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম, স্ট্রাইকিং ফোর্স, ফুট ও মোবাইল পেট্রোলিং, ভেহিকেল স্ক্যানার, অবজারভেশন পোস্ট, চেকপোস্ট ও সিসিটিভি মনিটরিং থাকবে দেশব্যাপী। যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত রিজার্ভ ফোর্স মোতায়েন থাকবে। এছাড়া সিসিটিভি কাভারেজও থাকবে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেকোনও উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত র‌্যাবের সদস্যরা। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। যেকোনও নাশকতা বা হামলা মোকাবিলায় র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্স-এর কমান্ডো টিমকেও সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেকোনও পরিস্থিতিতে র‌্যাবের হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মনজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের বিষয় মাথায় রেখে দেশব্যাপী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সাইবার মনিটরিং। ঈদ করতে যারা গ্রামে যাবেন, তাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট মাঠে থাকা পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। হাইওয়েতে ফিটনেসবিহীন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল যেন করতে না পারে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হাইওয়ে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস শাখার পুলিশ সুপার আসলাম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেকোনও ধরনের গুজব বা মিথ্যা তথ্য ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সাইবার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঈদগাহসহ বিভিন্ন জায়গায় এটিইউয়ের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। সাইবার স্পেসে জঙ্গিদের কার্যক্রম সম্পর্কে যখন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেসব বিষয় মনিটরিং করা‌ হচ্ছে।’