টেস্টের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে যেখানে লায়নই প্রথম

টেস্টের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে যেখানে লায়নই প্রথম

টেস্টের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে যেখানে লায়নই প্রথম

টসের সময় অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বললেন, ‘অসাধারণ অর্জন।’ অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের এই কথায়ও আসলে পুরোপুরি ফুটে উঠল না সবকিছু। ন্যাথান লায়ন যে কীর্তিটি গড়লেন, টেস্ট ইতিহাসেই তো এটি অনন্য। টেস্টের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে পারেননি আর কেউ।

বুধবার (২৮ জুন) শুরু হওয়া ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টের একাদশে থেকেই এই রেকর্ডে নাম লেখা হয়ে গেছে লায়নের। অ্যাশেজের এই ম্যাচটি অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনারের টানা শততম টেস্ট। টানা ১০০ টেস্ট খেলার কৃতিত্ব আগেও দেখিয়েছেন ৫ ক্রিকেটার। তবে লায়নই প্রথম বিশেষজ্ঞ বোলার হিসেবে ধারাবাহিকতার এমন নজির গড়লেন। ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লায়নের টেস্ট অভিষেক। গলে সেই ম্যাচে প্রথম বলেই কুমার সাঙ্গাকারাকে আউট করে ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে তার পথচলা শুরু। প্রথম ইনিংসে শিকার করেন ৫ উইকেট।

অভিষেক থেকে টানা ৯ টেস্ট খেলার পর প্রথমবার একাদশে জায়গা পাননি তিনি ২০১২ সালের জানুয়ারিতে। ভারতের বিপক্ষে পার্থের বাউন্সি উইকেটে ওই ম্যাচে চার পেসার নিয়ে একাদশ সাজায় অস্ট্রেলিয়া। পরের টেস্ট থেকেই আবার টানা ১১ ম্যাচে তার ওপর ভরসা রাখে দল। দ্বিতীয়বার তিনি একাদশ থেকে বাদ পড়েন ২০১৩ সালের ভারত সফরে। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে হায়দরাবাদে দল বেছে নেয় বাঁহাতি স্পিনার জেভিয়ার ডোহার্টিকে।

এবারও এক টেস্ট পরই তিনি দলে ফেরেন। এরপর আবার তার একাদশে জায়গা না পাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় ২০১৩ অ্যাশেজের শুরুতে। ইংল্যান্ডে সেবার প্রথম দুই টেস্টে অস্ট্রেলিয়া সেবার বেছে নেয় বাঁহাতি স্পিনার অ্যাশটন অ্যাগারকে। লায়ন ফেরেন তৃতীয় টেস্টে। এরপর আর পেছনে তাকাতাকি নেই। ২০১৩ সালের ১ অগাস্ট ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্ট থেকে এবার এই লর্ডস টেস্ট, টানা ১০০ টেস্টে তাকে ছাড়া একাদশ গড়ার সুযোগ তিনি দেননি দলকে।

টানা ১০০ টেস্টে খেলার কীর্তি প্রথম গড়েন সুনিল গাভাস্কার। ১৯৭৫ সালে ২৩ জুন থেকে ১৯৮৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১০৬ টেস্ট খেলেন ভারতীয় কিংবদন্তি। পরে রেকর্ডটিকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যান অ্যালান বোর্ডার। অস্ট্রেলিয়ান এই কিংবদন্তি ১৯৭৯ সালের ১০ মার্চ থেকে ১৯৯৪ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত খেলেন টানা ১৫৩ টেস্ট। পরে অস্ট্রেলিয়ারই মার্ক ওয়াহ খেলেন টানা ১০৭ টেস্টে, নিউ জিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ১০১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারের সব ম্যাচই খেলেন টানা। বোর্ডারের টানা ১৫৩ টেস্ট খেলার রেকর্ডটি ভাঙা একসময় অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু সেটিকেও সম্ভব করে ছাড়েন অ্যালেস্টার কুক।

২০০৬ সালের মার্চে ভারতের বিপক্ষে ৬০ ও ১০৪ রানের দুটি ইনিংস খেলে তার টেস্ট অভিষেক। টানা দুই ম্যাচ খেলার পর চোটের কারণে খেলতে পারেননি ওই সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ। ব্যস, ক্যারিয়ারে ওই একবারই তিনি ছিলেন না একাদশে। ওই বছরের মে মাস থেকে ২০১৮ সালে ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত টানা ১৫৯ টেস্ট খেলে অবসর যান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। বয়স তখনও তার কেবল ৩৩, চাইলে আরও কিছুদিন চালিয়ে যেতে পারতেন। রেকর্ডটিও সমৃদ্ধ হতে পারত আরও। এই পাঁচ ব্যাটসম্যানের সঙ্গে এবার প্রথম বোলার হিসেবে যুক্ত হলেন লায়ন।

বিশেষজ্ঞ বোলারদের মধ্যে টানা টেস্ট খেলার রেকর্ডে লায়নের পরের নামটি কপিল দেবের। ভারতীয় কিংবদন্তি খেলেন টানা ৬৬ টেস্ট। যদিও লায়নের রেকর্ডটি হতে পারত কপিলেরই। ১৯৭৮ সালে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত টানা ৬৬ টেস্ট খেলার পর একটি টেস্টে বিতর্কিতভাবে তাকে বাদ দেওয়া হয়। তুমুল সমালোচনার মুখে পরের টেস্টে তাকে ফেরানো হয়। সেই ম্যাচ থেকে ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত আবার টানা ৬৫ টেস্ট খেলেন তিনি।

পেসার হয়েও ১৩১ টেস্টের ক্যারিয়ারে চোটের কারণে একটি ম্যাচও বাইরে থাকতে হয়নি, ক্রিকেট ইতিহাসেই এমন নজির আর নেই। লায়নের কৃতিত্ব অবশ্য তাতে কমছে না। স্পিনারদের মধ্যেও তো তার মতো আর কেউ নেই। কত গ্রেট বোলারদেরও কখনও চোটে পড়তে হয়েছে, কখনও ফর্মের কারণে বাদ পড়তে হয়েছে, কখনও দলীয় কম্বিনেশনের কারণে।

লায়নের মাইলফলক টেস্টে অধিনায়ক কামিন্স তাই যথার্থই বললেন, শুধু ফিটনেসের দিক থেকেই নয়, টানা ১০০ টেস্ট ধরে বিশ্বের সব কন্ডিশনে একাদশে জায়গা করে নেওয়াটাও অসাধারণ কিছু। অধিনায়ক হিসেবে আমি সৌভাগ্যবান তার মতো একজনকে পেয়ে।

এই টেস্টে আরও একটি মাইলফলকের হাতছানি আছে লায়নের সামনে। আর স্রেফ ৫ উইকেট পেলেই ইতিহাসের দ্বিতীয় অফ স্পিনার হিসেবে পূর্ণ করবেন ৫০০ টেস্ট উইকেট