রাজধানীতে সংগ্রহ করা কোরবানির মাংসের পসরা

রাজধানীতে সংগ্রহ করা কোরবানির মাংসের পসরা

সংগৃহিত ছবি।

বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ত্যাগের মহিমায় দেশব্যাপী পশু কোরবানির মাধ্যমে ঈদুল আযহা পালন করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। মহান আল্লাহ সন্তষ্টির আশায় পশু কোরবানি করছেন ধর্মপ্রাণ মুসরমানরা। ত্যাগের মাধ্যমে আনন্দ এই বিশ্বাসে মুসলমানেরা ফজরের নামাজের পর ঈদগাহে গিয়ে দুই রাকাত ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন। এরপর আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী কেনা গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও উট আল্লাহর নামে কোরবানি করছেন।

তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে অনেকেই কোরবানি দিতে পারেননি। শহরের বিভিন্ন স্থানে কোরবানি করা গরুর মাংস, মাথা, পা ইত্যাদি সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকেন পশু ব্যবসায়ী ও কসাইরা। মূলত আর্থিকভাবে অসচ্ছল ক্রেতাদের জন্যই তাদের এ আয়োজন। সংগ্রহ করা এসব মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে।

ঈদের দিন বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে সংগ্রহ করা কোরবানির মাংসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেকে। অনেক ক্রেতা ভিড় জমাচ্ছেন আশপাশে।

 

ক্ষণিকের জন্য সড়কে দোকান বসিয়েছেন ব্যবসায়ী জব্বার। কথা হলে তিনি বলেন, যেসব জায়গায় কোরবানি হয়, আমরা সেখান থেকে মাংস, আস্ত পা, মাথা এসব কিনে নিয়ে আসি। পরে এখানে এনে তা বিক্রির জন্য প্রস্তুত করি। অনেকেই আছে কোরবানি দিতে পারে না বা বাজার থেকে মাংস কিনতে পারে না, তারা আমাদের এখান থেকে মাংস কেনে।

 

সুলতান মিয়া নামে আরেক মাংস ব্যবসায়ী বলেন, পরিচিত নানা জায়গা থেকে মাংস কিনে এনে আমরা এখানে বিক্রি করি। মোটামুটি কম দামে এখান থেকে কাস্টমাররা তাজা কোরবানির মাংস কিনতে পারেন।

 

এখানে মূল মাংস বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যেই। ৪টা পা একত্রে বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকায়। ফ্যাপসা বা এ জাতীয় জিনিস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকার মধ্যেই।

 

কেনার জন্য আসতে দেখা যায় একজন রিকশাচালককে। তার নাম ইসমাইল। তিনি বলেন, কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য তো নাই, কিন্তু মাংস খাইতে মন চায়। তাই এখানে কিনতে আসছি। বাজারের চাইতে কম দামেই এখানে পাওয়া যায়।

 

আরেক ক্রেতা ফরহাদ হোসেন একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, এখানে একটু কম দামেই তাজা কোরবানির মাংস পাওয়া যায়। তাই কিনতে আসা।

 

এসব ক্ষণিকের দোকানের পাশাপাশি অনেকে পলিথিনে ভরে মাংস নিয়ে বসেছেন বিক্রির জন্য। তবে সেসব মাংসের দাম হাঁকানো হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এমনই একজন বিক্রেতা জসীম উদ্দিন বলেন, এখানে যেসব মাংস বিক্রি হচ্ছে তাতে মাংসের সাথে চর্বিও থাকে। কিন্তু আমারটা একেবারে খাঁটি মাংস। কোনো চর্বি বা হাড্ডি নাই। তিনি এসব মাংস কোরবানি দেয়া বিভিন্ন বাড়ি থেকে সংগ্রহ করেছেন বলে জানান।

 

এদিকে রাজধানীর মগবাজারের ওয়ারলেছ রেইলগেট, মালিবাগ ও খিলগাঁও রেলগেটসহ বিভিন্ন স্থানেও বসেছে মাংসের ভাসমান দোকান। বিক্রেতারা নগরির বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে এসব কোরবানির মাংস সংগ্রহ করেছেন। নিজের প্রয়োজনের অংশটুক রেখে বাকিটুকু বিক্রির জন্য বসেছেন। ক্রেতাও পাচ্ছেন তারা।

 

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকার বাসিন্দা দুলাল কসাই। গাজীপুরে মাংসের দোকান রয়েছে তার। ঈদ উপলক্ষে ঢাকার মগবাজারে দুলাল কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে তিনটি গরু কেটেছেন। আর গরু কেটে পাওয়া মাংস ও চর্বি কেটে রাস্তার পাশেই দোকান বসিয়েছেন।

 

ঈদের দিন বিকেলে চন্দ্রিমা হাউজিংয়ের প্রধান সড়কে দুলাল ও তার ছেলে অল্প কিছু মাংস ও চর্বি কাটছেন। আর তাকে ঘিরে অনেকেই দাঁড়িয়ে। কেউ দরদাম করছেন।

 

মাংস কাটতে কাটতে দুলাল বলেন, মগবাজারের একটি বাড়িতে তিনটি গরু কাটার কাজ করেছি। টাকার পাশাপাশি কিছু মাংসও পেয়েছি। আর সেগুলো বিক্রির জন্য নিয়ে বসলাম।

 

তিনি আরও বলেন, সারাবছর মাংস নিয়েই আমার কাজ। গাজীপুরে দোকান আছে। কোরবানির ঈদে চেষ্টা করি ৩-৪টা গরুর কাজ করতে। এবারও তিনটা কাটতে পেরেছি। সেখান থেকে পাওয়া (১৫ থেকে ২০ কেজির মতো) সাইড মাংস ও চর্বি প্রতি কেজি ৪০০ টাকা করে বিক্রি করছি।

 

বাসায় থাকা দুই সন্তানের জন্য দুলালের দোকান থেকে এক কেজি মাংস কিনেছেন রাবেয়া বেগম। পেশায় গৃহপরিচারিকা রাবেয়া বলেন, ছেলে-মেয়েদের চাইলেও মাংস কিনে দিতে পারি না। ৮০০ টাকা কেজি মাংস কিনে খাওয়ানোর সামর্থ আমাদের নাই। এখানে দেখলাম ৪০০ টাকা করে বিক্রি করছে তাই এক কেজি নিলাম।

 

দুলালের দোকানের পাশেই একটি ভ্যান গাড়িতে করে ৭৫০ টাকায় মাংস বিক্রি করছিলেন রাসেল কসাই। সকালে গরু জবাই করার পর প্রথমে ৮০০ করে বিক্রি করলের বেলা গড়ানোর পর দাম কমিয়ে রাখেন ৭৫০ করে।

 

দাম কমানোর বিষয় রাসেল বলেন, অনেকেই কোরবানি দিতে পারেনি। তাদের জন্য আমরা গরু কেটেছি। কিন্তু সকালে বৃষ্টি হওয়ার কারণে মাংসগুলো সাদা হয়ে গেছে। তাই প্রথমে ৮০০ করে বিক্রি করলেও পরে ৫০ টাকা কমিয়ে বিক্রি করছি।