তামিম না ফিরলে অধিনায়ক লিটন

তামিম না ফিরলে অধিনায়ক লিটন

ফাইল ছবি

কান্নাভেজা চোখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের অবসরের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বৃহস্পতিবার রাতে এক জরুরি সভার পর এই আহ্বান জানান নাজমুল হাসান পাপন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাজধানীর গুলশানের একটি পাঁচতারকা হোটেলে বিসিবি জরুরি সভা ডেকেছিল। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। সভা শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন বোর্ড কর্তারা। সেখানেই তামিমের অবসর পত্র না পাঠানোর বিষয়টি জানান তিনি।

তারা জানান, তামিম সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলে তাকে নিয়েই বিশ্বকাপের দল গড়া হবে। সভায় চলমান আফগানিস্তান সিরিজে নতুন করে আগামী দুই ওয়ানডের জন্য দলে জায়গা পেয়েছেন রনি তালকুদার। আর অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন লিটন দাস। এর আগে সহ অধিনায়ক ছিলেন তিনি।

নাজমুল হাসান পাপন বলেন, আজকে বসার পেছনে কারণ একটা। হঠাৎ করে তামিম মিডিয়াতে বলেছেন অবসর নিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য একেবারে অপ্রত্যাশিত। এ কারণে তার সঙ্গে আমার সব সময় যোগাযোগ আছে। যেহেতু তিনি ওয়ানডে অধিনায়ক, তিনদিন আগেও কথা হয়েছে স্কোয়াড নিয়ে। কালকেও তার সঙ্গে কথা বলেছি।

তিনি আরও বলেন, আমার পক্ষে কোনোভাবেই বোঝার উপায় ছিল না, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছি তার ভবিষ্যৎ নিয়ে। তিনি বলেছেন, পরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অবধি খেলবেন। এরপর বিশ্বকাপের অধিনায়কত্ব নিয়ে জালাল ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি তিনিই ক্যাপ্টেন। বিশ্বকাপটা যেহেতু সামনে, ক্যাপ্টেন্সি বদল নিয়ে কোনো কথা হয়নি। এ ধরনের প্লেয়ারদের কাছ থেকে যে অবাক হই, এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক।

পাপন বলেন, তামিমের সংবাদ সম্মেলনের পর যোগাযোগ করেও তাকে পাইনি। তার পর তার ভাই নাফীসের মাধ্যমে বার্তা দিয়েছি। কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি। আমরা তার উত্তরের অপেক্ষায়। উত্তর পাওয়া পর্যন্ত বিসিবির কাছে তামিমই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। আমরা চাই তামিম সিদ্ধান্ত বদল করে ফিরে আসুক। তাহলে খুশি হবো।

এক প্রশ্নের উত্তরে বিসিবি সভাপতি বলেন, আমাদের এই অল্প সময়ে অধিনায়ক পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। বিশ্বকাপ এবং এশিয়া কাপে তামিমকেই অধিনায়ক হিসেবে ভাবনায় রেখেছিলাম। কিন্তু হুট করে সে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কি কারণে তামিম অবসর নিয়েছেন সে ব্যাপারে কিছু জানি না। কিছু একটা ফ্যাক্টর তো আছে। যদি সেটা বেড় করতে পারি, তবে শুধু তামিম ইকবাল না সবকিছুর সমাধান হবে।

তামিমের অবসরে আফগানিস্তান সিরিজে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিবি প্রধান বলেন, দলে ইতোমধ্যে প্রভাব পড়ে গেছে। সামনে এশিয়া কাপ, তারপর বিশ্বকাপ। এবারই আমরা আশা করেছিলাম ভালো ফল করব। কিন্তু মাত্র তিন মাস আগে এমন সিদ্ধান্ত দেশের ক্রিকেটের ক্ষতি হয়েছে। আমার ধারণা সে আবেগপ্রবণ হয়ে করেছে। যদিও সে বলেছে, একদিনে সিদ্ধান্ত না। কয়েকদিনে নিয়েছে।

তামিমের আগের মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পাপন বলেন, তবে আবার বলছি, যতবার এমন পরিস্থিতি আসবে, যেকোনো খেলোয়াড়, যদি সে মনে করে খেলার দিন সে সিদ্ধান্ত নেবে খেলবে কি খেলবে না- এগুলো চলবে না। হয় আপনি ফিট, অথবা নন। ফিট থাকলে দলে থাকবেন, না হলে না। এটাই সবার কাছে বার্তা। আমার মনে হয় না পৃথিবীর কোনো দেশে এর ব্যত্যয় ঘটে। এটা আমি করবই।

এর আগে সংবাদ সম্মেলন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তামিম ইকবাল। সংবাদ সম্মেলনের শুরু থেকেই দেখা যায় তার চোখে পানি। বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মিনিট দশেক পর কথা শুরু করেই তামিম জানান, গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচটিই ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেকদিন ধরেই আমি এটা নিয়ে ভাবছি। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।

আফগানদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বর্তমানে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ দল। সিরিজের প্রথম ম্যাচে বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে হেরেছে টাইগাররা। প্রথম ওয়ানডের আগে শতভাগ ফিট না হয়েই খেলার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন তামিম। পুরোপুরি ফিট না থাকায় ব্যাট হাতে মাত্র ১৩ রান করেই আউট হয়েছেন তিনি। এসব নিয়েই আলোচনা-সমালোচনায় সরগরম ছিল দেশের ক্রিকেটাঙ্গন।

প্রসঙ্গত, ৩৪ বছর বয়সী তামিম তার ১৬ বছরের বর্ণিল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২৪১টি একদিনের ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬.৬২ গড়ে ৮ হাজার ৩১৩ রান করেছেন, সেঞ্চুরি ১৪টি, ফিফটি ৫৬টি। টেস্টে ৭০ ম্যাচে ৩৮.৮৯ গড়ে ৫ হাজার ১৩৪ রান করেছেন তামিম। সেঞ্চুরি ১০টি ও ফিফটি ৩১টি। এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি করেছেন তামিম। টি-টোয়েন্টিতে ৭৪ ম্যাচে ১৭০১ রান করেছেন তামিম। এই সংস্করণে দেশের হয়ে শুধু তামিমই সেঞ্চুরি করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫ সেঞ্চুরি করা তামিম তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজারের বেশি রান করেছেন।