পাইকগাছায় পরিত্যক্ত আদালত ভবনে চলছে বিচারকাজ

পাইকগাছায় পরিত্যক্ত আদালত ভবনে চলছে বিচারকাজ

ছবিঃ সংগৃহীত।

খুলনার পাইকগাছায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের প্রায় ১০ বছর আগের পরিত্যক্ত ভবনে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। একই ভবনেই রয়েছে হাজতখানা ও পুলিশ ব্র্যাক।

দীর্ঘ দিন ভবনটির ছাদের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে পলেস্তরা। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে এজলাসসহ বিভিন্ন স্থানে। এতে অসংখ্য মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রসহ জানমাল অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আদালতগুলোর মূল ভবনের পলেস্তরা খসে পড়াসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটল ধরেছে বারান্দায়, হাজতখানা এবং পুলিশ ব্র্যাকের বিভিন্ন স্থানে। বর্তমানে আদালত দুটিতে মামলার সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিচারপ্রার্থীসহ লোক সমাগমও বেড়েছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।

সূত্র জানায়, ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে পাইকগাছায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৯ সালে সরকার দেশের উপজেলা পর্যায়ের আদালতগুলো জেলাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলেও জেলা সদর থেকে অধিক দূরত্বের বিশেষ বিবেচনায় আদালত দুটি পাইকগাছাতেই রয়ে যায়। এতে বিশেষভাবে উপকৃত হন তৃণমূলের সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা। সময়, অর্থ ও হয়রানির হাত থেকে পরিত্রাণ পায় উপকূলীয় অবহেলিত জনপদের বঞ্চিত সাধারণ মানুষ। তবে আদালত প্রতিষ্ঠার পর বারবার সরকারের পটপরিবর্তনের বিভিন্ন সময়ে উপজেলার বিভিন্ন স্তরে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও পরিবর্তন হয়নি আদালত ভবনটির। প্রতিষ্ঠা পেয়েছে পৌরসভা। উন্নয়ন সোপানে শ্রেণি পরিবর্তন হয়েছে পৌরসভারও।

উপকূলীয় জনপদে জীবন মানেরও পরিবর্তন এসেছে। তবে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি আদালত দুটির। পুরোনো সেই পরিত্যক্ত ভবনেই চলছে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম। দুর্যোগপ্রবণ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ৪০ বছরেরও অধিক পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ আদালত ভবনগুলো পুননির্মাণে এখন পর্যন্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া আদালতের ১৫ জন কর্মচারী, ৭১ জন আইনজীবী ও ৯০ জন আইনজীবী সহকারী ও তাদের শিক্ষানবীশরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মরত রয়েছেন।

ভবন সংস্কারের জন্য আদালতের বিচারক ও আইনজীবি সমিতি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভবনের সংস্কারের আশ্বাস দিলেও আজও তার বাস্তবায়ন হয়নি।

প্রতি কর্ম দিবসে নতুন ১৫-২০টি মামলা ফাইলিং, ৩০-৪০টি বেল হেয়ারিং, ১৫-২০টি সাক্ষী শুনানি, ৩০-৪০টি চার্জ গঠরসহ অনন্য ৫০-৬০ মামলার কার্জক্রম চলে। দুটি আদালতে প্রায় ১১ হাজার মামলা চলমান রয়েছে। এদিকে বিচারাধীন ও নতুন মামলার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বাড়ছে মামলার জট। প্রয়োজনীয় ও যথোপযুক্ত স্থান না থাকায় দেওয়ানি, ফৌজদারি মামলার বিপুল সংখ্যক নথি স্তুপাকারে রাখতে হয় ছোট ছোট কক্ষের মেঝেতে। এতে ওই সব নথিপত্র নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাইকগাছায় আদালত দুটি ও আইনজীবীদের আধুনিক নতুন ভবন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। খুলনা জেলা সদরে অবস্থিত যুগ্ম জেলা জর্জ ৪র্থ আদালত পাইকগাছায় স্থাপন জরুরি কারণ দীর্ঘ ৭০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে খুলনায় গিয়ে মামলা পরিচালনা করা এই এলাকার মানুষের জন্য কষ্টকর। পাইকগাছা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শেখ তৈয়েব হোসেন নুর জানান, আইনজীবী ভবন ও আদালত ভবনের সর্বশেষ ভগ্নদশা নিয়ে এরই মধ্যে একাধিকবার বিচারক ও আইনজীবী সমিতি আইন মন্ত্রালয়সহ প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কেউ কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি।

পাইকগাছা আইনজীবী সমিতির সভাপতি পঙ্কজ ধর জানান, প্রতিনিয়ত জরাজীর্ণ আদালত ভবনে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে তারা নানা অজানা আশঙ্কায় কাজ করছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে সুষ্ঠুভাবে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনাসহ সার্বিক পরিবেশ বজায় রাখতে আইনজীবী ও আদালত ভবন পুনঃনির্মাণের পাশাপাশি পূর্ণ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।