পাবিপ্রবির সাংবাদিককে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বেধড়ক মারপিট, তদন্ত কমিটি গঠন

পাবিপ্রবির সাংবাদিককে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বেধড়ক মারপিট, তদন্ত কমিটি গঠন

পাবিপ্রবির সাংবাদিককে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বেধড়ক মারপিট, তদন্ত কমিটি গঠন

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) দৈনিক নয়া শতাব্দীর প্রতিনিধি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বেধড়ক মারপিটের ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্বদ্যিালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যেই তদন্তের কাজ শুরু করেছে। প্রক্টর মোঃ কামাল হোসেনকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছেন ভিসি ড. হাফিজা খাতুন। এছাড়াও পুলিশও ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে।

এর আগে বোববার পাবিপ্রবির ক্যাফেটেরিয়াতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি মিনহাজুল ইসলাম প্রান্তর নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহত সাংবাদিক মামুন বর্তমানে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রবিবার দুপুর দুটার দিকে খবর পাই যে, ক্যাম্পাসের সহকর্মী এক সাংবাদিককে কে বা কারা ক্যাফেটেরিয়াতে আটকে রেখেছে। খবর পেয়ে আমি ক্যাফেটেরিয়ার দিকে গেলে প্রথমে কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাকে বলে, তুই কে? আমি আমার পরিচয় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা আমাকে টেনে ভেতরে নিয়ে যায়। কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এলোপাথারীভাবে কিল-ঘুষিসহ পেটে লাথি মারতে থাকে।

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম প্রান্ত, সাবেক সহ সভাপতি মাসুদ রানা, সাবেক প্রচার সম্পাদক একরামুল ইসলাম সাগর ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আহমেদ হৃদয়, ছাত্রলীগকর্মী জহুরুল ইসলাম পিয়াসসহ তার দলবল নিয়ে তাকে মারধর করেন। তার চিৎকার শুনে কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী এগিয়ে এলে, এ সময় তাকে ফেলে রেখে ক্যাফেটেরিয়ার ওপর তলায় চলে যায় তারা। পরে তার সহকর্মী ও বন্ধুরা উদ্ধার করে সাংবাদিক মামুনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। হামলাকারীরা বেশিরভারই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর অনুসারী।

পাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির আহ্বায়ক উজ্জল কুমার বিশ্বাস জানান, মামুন সম্প্রতি ছাত্রলীগের অপকর্ম ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার কারণে তার ওপর এই হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতকর্মীরা। আমরা এই হামলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। সংবাদ প্রকাশ হলেই তারা ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। ক্যাম্পাসে মাদক বেচা-কেনা ও সেবন করে তারা। এর আগে মাদক নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে আমাদের ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হয় তারা।এ বিষয়ে অভিযুক্ত মিনহাজুল ইসলাম প্রান্তর সঙ্গে মোবাইল ফোনে বার বার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয় নি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল্লাহ বলেন, আমি গ্রামে এসেছি, তাই বিষয়টি জানা নেই। তবে এরা আমার সঙ্গের কেউ নয়।বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবু বলেন, কোনো সাংবাদিককে মারপিটের ঘটনা আমার জানা নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এমনটি হতে পারে।

এ বিষয়ে পাবিপ্রবির প্রক্টর ড. কামোল হোসেন বলেন, আব্দুল্লাহ আল মামুনকে মারপিট করার বিষয়টি শুনে আগে তাকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেই। ঘটনাটির তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত শেষে দোষি প্রমাণিত হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাবিপ্রবি রেজিষ্ট্রর বিজয় কুমার ব্রহ্ম জানান, ইতোমধ্যেই ঘটনাটি তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হাফিজা খাতুন প্রক্টর মো. কামাল হোসেন কে আহবায়ক এবং রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রতন কুমার পালকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন ও দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, আমরা একটি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।