ইউপি চেয়ারম্যান ও শ্রমিকলীগ নেতার বিরুদ্ধে লীজের নামে পুরো বিল দখলের অভিযোগ

ইউপি চেয়ারম্যান ও শ্রমিকলীগ নেতার বিরুদ্ধে লীজের নামে পুরো বিল দখলের অভিযোগ

ইউপি চেয়ারম্যান ও শ্রমিকলীগ নেতার বিরুদ্ধে লীজের নামে পুরো বিল দখলের অভিযোগ

ব্রিজের মুখ আটকে প্রায় ৮শ’ বিঘা জমিতে জোরপূর্বক মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান, শ্রমিকলীগ নেতার বিরুদ্ধে। দিগন্তজোড়া সবুজ আমন ধানের দৃশ্য চোখ জুড়ালেও; হাজারো কৃষকের বুক ফাঁটা কান্না।পাবনার চাটমোহর উপজেলার মান্নাননগর আ লিক সড়কের বিলচলন ইউনিয়নের চরসেন গ্রামের বিলে এ অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন, ইউপি সদস্য ও উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আলী এবং তাদের সহযোগিরা জোরপূর্বক ওই বিলে মাছ চাষ করছেন বলে অভিযোগ কৃষকদের। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এক হাজারের বেশি কৃষক। চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে কৃষকদের আমন আবাদ ও নৌ-চলাচল। বাধা দিতে গেলেই করা হচ্ছে মারধর, দেয়া হচ্ছে নানান ধরণের হুমকি ধামকী।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাটমোহর থেকে মান্নাননগর আ লিক সড়কের বিলচলন ইউনিয়নের চরসেন গ্রামের বিলে প্রবেশ করেছে বর্ষার পানি। কিন্তু ব্রিজের মুখ বাঁশ, তালাই ও জাল দিয়ে আটকে দেয়ার কারণে দিগন্তজোড়া সবুজ আমন ধানের দৃশ্য চোখ জুড়ালেও; হাজারো কৃষকের বুক ফাঁটা কান্না। বিলের একপাশে দু’টি ব্রিজের মুখ বাঁশ, বাঁশের তালাই, বাদাই জাল দিয়ে আটকিয়ে জোরপূর্বক সেখানে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বিলের একপাশের কিছু কৃষকের খাল লীজ নেয়ার নামে তারা পুরো বিলই দখলে নিয়ে মাছ চাষে নেমেছেন। গত ৭ ও ৮ জুলাই তারা ব্রিজের মুখ বাঁশ, তালাই ও জাল দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে।

 চরসেন গ্রামের গ্রামের কৃষক আবু জাফর, মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সেখানে সরকারি কোনো জলাশয় বা জলকর নেই। বিলচলন ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন, উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আলী, আজমত আলী ও তাদের সহযোগিরা জোরপূর্বক অবৈধভাবে মাছ চাষ করছেন। কেও কিছু বললে তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। অতি সমম্প্রতি তিনজন কৃষককে তুলে নিয়ে মারধর করেছে চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনী।

ভুক্তভোগী কৃষক কালাম ফকির, জেলহক হোসেন, তফিজ উদ্দিনসহসহ অন্যান্য কৃষকরা জানান, ব্রিজের মুখ আটকে মাছ চাষ করায় কৃষকের প্রায় আটশ’ বিঘা জমির আমন আবাদ ক্ষতির মুখে পড়েছে। মাছ সব ধানের গাছ খেয়ে ফেলে। নৌকা চলাচল করতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে পাট জাগ দেয়ার কাজ। বর্ষার শেষে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ার সাথে বিলম্বিত হবে রবি শস্য আবাদ। প্রতিকার চেয়ে ১০ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।

সোমবার (৩০ জুলাই) ভুক্তভোগী কৃষকরা চাটমোহরের নবাগত ইউএনও’র কাছে তাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে ব্রিজের মুখ থেকে দ্রুত বাঁশ, জালের বাধা অপসারণ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

ভূক্তভোগী কৃষকদের সাথে কথা বলার সময় উপস্থিত অভিযুক্ত আজমত আলী বলেন,‘তাদের মারধর করা হয়নি। এটা মিথ্যা কথা। আমরা কয়েকজন মিলে জমি লীজ নিয়ে মাছ চাষ করছি। হুমকি ধামকি দেবো কেনো। এসময় কৃষকরা সবাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তিনি সটকে পড়েন।’

অভিযুক্ত উপজেলা শ্রমিকলীগগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য সুরুজ আলী বলেন,‘ওই বিলে অনেকগুলো কৃষকের জমি লীজ নিয়ে মাছ চাষের মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে। এতে দোষের কিছু আছে বলে মনে হয় না।’

অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেনের দাবি, ‘মাছ চাষের সাথে তিনি জড়িত নন। এলাকার কিছু বেকার ছেলে মাছ চাষ করে খায়। ওরা মসজিদ মাদ্রাসা গোরস্তানে কিছু টাকা দিয়ে এটা করে। ষড়যন্ত্রমুলকভাবে আমাকে জড়ানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি ইউএনও সাহেবকে বলেছি। তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা এবং কৃষকের জমি জোর করে দখলে নিয়ে মাছচাষের সুযোগ নেই। যদি ওই বিলের সকল কৃষক একসাথে একমত হয়ে সমবায় ভিত্তিতে মাছচাষ করেন এবং সবাই লাভবান হন; তাহলে সম্ভব মাছ চাষ। তা না হলে জোর করে পানি প্রবাহ আটকে মাছ চাষ অবৈধ।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেদুয়ানুল হালিম বলেন, ‘কৃষকরা আমার কাছে এসেছিলেন। তাদের সাথে কথা বলে অভিযোগ শুনেছি। তাদের আরেকটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে’ বলে কৃষকদের আশ্বস্ত করেন তিনি।