ঢাকার বাইরে থেকে শ্রমিক না আনার সরকারি নির্দেশ

ঢাকার বাইরে থেকে শ্রমিক না আনার সরকারি নির্দেশ

ছবিঃ সংগ্রহীত

করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে গার্মেন্টস কারাখানা খোলা রাখা নিয়ে অব্যাহত বিতর্কের মধ্যেই সরকার মঙ্গলবার কারখানা মালিকদের নির্দেশ দিয়েছে যে ঢাকার বাইরে থেকে যেন শ্রমিকদের আসতে উৎসাহিত না করা হয়।

তবে শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে অনেক শ্রমিক চাকরি হারানোর ভয়ে ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন।

কারখানা মালিকরা বলছেন, বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার সময়মত সরবরাহের তাগিদ থেকে সীমিত পরিসরে তাদেরকে কিছু কারখানা খুলতেই হচ্ছে এবং তারা দাবি করছেন শ্রমিকদের সুরক্ষার নিয়মকানুন নিশ্চিত করা হচ্ছে।

যদিও অনেক শ্রমিক নেতা বলছেন মালিকদের এই দাবি ঠিক নয়।

দেশে যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে, তখন ঢাকা, সাভার এবং গাজীপুরে বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানা আবার চালু করা হয়েছে গত কয়েকদিন ধরে।

ফলে লকডাউনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বা দূরদুরান্ত থেকে রাস্তায় নানা ভোগান্তি সহ্য করে শত শত শ্রমিককে কর্মস্থলে ফিরতে হয়েছে এবং এনিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান মঙ্গলবার এই খাতের মালিকদের সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন।

আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ঢাকার বাইরে থেকে শ্রমিকদের কর্মস্থলে মালিকদের পক্ষ থেকে আনা হয়নি। শ্রমিকদের অনেকে নিজে থেকেই এসেছেন। এমন তথ্য মালিকরা তাকে জানিয়েছেন।

তিনি জানিয়েছেন, শ্রমিকদের যারা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করছেন, তাদের যেন আনা না হয়, তিনি মালিকদের সেটা নিশ্চিত করতে বলেছেন।

"তারা (মালিকরা) আমাদের জানিয়েছেন, তারা কোন শ্রমিককে ইনভাইট করেননি। তারা ভবিষ্যতেও করবেন না যতক্ষণ না পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তারা স্পষ্ট করে আমাদের বলেছেন যে, তারা শ্রমিকের বেতনও নিশ্চিত করেছেন। কাজেই শ্রমিকদের অনাহুত ঢাকায় আসার কোন প্রয়োজন নাই। তারাও বলেছেন এবং আমরাও মনে করি।"

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, "যারা আসছেন, তারা ভুল করে এসেছেন। এর আগেও তারা একবার ভুল করেছিলেন। এই ভুল করা উচিত নয়। তারা এভাবে যদি চলে আসে, তাহলে আমরা এই ভাইরাস থেকে ঢাকাকে সুরক্ষা দিতে পারব বলে আমার মনে হচ্ছে না। সেজন্য আমরা ঢাকায় আসার ব্যাপারে লক্ষ্য রাখব, এরকম অনাহুতভাবে কেউ যেন ঢাকায় আসতে না পারে।"

এরআগেও এপ্রিলের শুরুতে একবার গার্মেন্টস কারখানা খোলা হচ্ছে, এই খবরে শত শত শ্রমিককে পায়ে হেঁটে বা রিক্সায় ভ্যানে করে ঢাকায় আসার সেই মহাসড়কের দৃশ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল। তখন সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সেই পরিস্থিতির দায় মালিক বা সরকার কেউ নেয়নি।

তবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গার্মেন্টস শ্রমিক যারা কর্মস্থলে ফিরেছেন, এমনই একজন গার্মেন্টস শ্রমিক ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় তার কর্মস্থলে মঙ্গলবার যোগ দিয়েছেন।

তিনি গত মাসে দেশে লকডাউন শুরু হলে এবং কারখানা বন্ধ করে দেয়া হলে গোপালগঞ্জে গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন।

তিনি কারখানা চালু হওয়ার খবর পেয়ে গতকাল অনেক কষ্ট করে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলেছেন, তার সাথেই তার অনেকে সহকর্মী এলাকা থেকে ঢাকায় এসেছেন।

"আমাদের বলছে যে অফিস খোলা, ডিউটি করা লাগবে। আমরা টাকা পয়সা পাই নাই। এখন ওনারা বলছে, আমরা অফিসে আসলে নাকি বেতন পাব। সেজন্য একশো টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা দিয়ে আসা লাগছে। এখনও আমাদের বেতনাদি দেয় নাই।"

কিছু কারখানা যখন চালু করা হয়েছে, তখন কয়েকটি এলাকায় কিছু কারখানার শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে বিক্ষোভও করেছেন গত কয়েকদিনে।

গাজীপুরের সফিপুরে জালালগেট এলাকায় মঙ্গলবার বিক্ষোভ করেছেন, এমন কয়েকজন গার্মেন্টস শ্রমিক বলছিলেন, করোনাভাইরাস দুর্যোগের মধ্যেও তারা বেতন না দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন।

"মার্চসহ দুই মাস থেকে বেতন পাই নাই। আমরা বেতন চাই। এই অবস্থায় পরিবার নিয়ে আমরা খুব নিরুপায় অবস্থায় আছি।"

বামপন্থী একটি শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী জলি আকতার বলছিলেন, গার্মেন্টস কারখানা সবই খোলার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং শ্রমিকের জন্য নানামুখী সংকট দেখা দিয়েছে।

"ভয়ের বিষয় হচ্ছে, করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে মিছিলের মতো শ্রমিকরা একসাথে কারখানায় ঢুকছে। সেটা বিরাট একটা সংক্রমণের জায়গা তৈরি করে ফেললো। আমরা দেখলাম, মজুরি দেয়া না দেয়া এবং লে-অফ বা ছাঁটাই-এসব ব্যাপক পর্যায়ে চলে গেলো। এই পরিস্থিতিটা আসলে মালিক এবং সরকার তৈরি করলো।"

তিনি পরিস্থিতির জন্য সরকার এবং মালিকদের দিকেই আঙুল তুলেছেন।

তিনি বলেছেন, "এই পরিস্থিতিটা আসলে ইতিহাসে জুলুম নির্যাতনের সাক্ষী হয়ে থাকবে। আর স্বাস্থ্যবিধির কথা যা বলা হচ্ছে তার কিছুই মানা হচ্ছে না। গাদাগাদি করেই কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করছেন।"

তবে সরকার এবং মালিকপক্ষ কেউই পরিস্থিতির দায় নিতে রাজি নয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মালিকরা কাজে না ডাকার পরও শ্রমিকরা ভুল করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কর্মস্থলে ফিরেছেন ।

আর মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ বলেছেন, "কর্মস্থল এলাকায় থাকা শ্রমিকদের দিয়েই সীমিত পরিসরে কারখানা চালু করা হয়েছে। খুব বেশি হলে ১০ বা ১২টা কারখানা, যারা রুগ্ন বা সাবকন্ট্রাক্ট কারখানা তাদের কিছু বেতন নিয়ে সমস্যা। এছাড়া মার্চের বেতন নিয়ে কোন সমস্যা নাই। যেটুকু সমস্যা আছে, সেটাও আমরা সরকারের সাথে মিলে সমাধানের চেষ্টা করছি।"

তিনি আরো বলেন, "সীমিত পরিসরে খোলা হচ্ছে কারখানাগুলো। সবার কারখানা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছু কারখানার বিদেশি অর্ডারের শিপমেন্টের সমস্যা হয়েছে। সেই কারখানাগুলো খুলেছে। এখনও সব কারখানা কিন্তু চালু হয়নি। ৫০০ বা ৬০০ কারখানা চালু হয়েছে।"

গার্মেন্টস মালিকরা দাবি করেছেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য টেলিচিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য বিধির বিষয়গুলো তারা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। বিবিসি।