ইউক্রেনের মানুষ-বিহীন ড্রোন বোট হামলার মুখে রুশ নৌবহর

ইউক্রেনের মানুষ-বিহীন ড্রোন বোট হামলার মুখে রুশ নৌবহর

ইউক্রেনের মানুষ-বিহীন ড্রোন বোট হামলার মুখে রুশ নৌবহর

রাশিয়া বলছে, কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবাহিনীর দুটি জাহাজে হামলা প্রচেষ্টার সময় ইউক্রেনের তিনটি দূর-নিয়ন্ত্রিত মানব-বিহীন নৌকা তারা ধ্বংস করেছে।প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরবেলায় ক্রাইমিয়ার সেভাস্তোপল থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঐ ঘটনা ঘটে।এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলছে: "রাতের বেলা কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরের সের্গেই কোটভ এবং ভ্যাসিলি বাইকভ দুটি টহল জাহাজ ইউক্রেনীয় তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে।“রুশ-অধিকৃত ক্রাইমিয়ার সংযোগকারী সেতুতে দু’সপ্তাহ আগে যে হামলাটি হয়েছিল তাতেও ইউক্রেনের সামুদ্রিক ড্রোন ব্যবহৃত হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে।

আকাশে ব্যবহারযোগ্য ড্রোনের পাশাপাশি এই “আনম্যানড সারফেস ভেসেল” বা “আনক্রুড সারফেস ভেসেল,” সংক্ষেপে ইউএসভি, আধুনিক যুদ্ধের গতি-প্রকৃতিকে অনেকখানিই পাল্টে দিচ্ছে।দ্যা ম্যারিটাইম এক্সেকিউটিভ নামের ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, ইউক্রেনে ইউএসভি’র সামরিক ব্যবহার শুরু হয় গত বছর।

ঐ বছর সেপ্টেম্বরে সেভাস্তোপল বন্দরে ইউক্রেন এরিয়াল ড্রোনের পাশাপাশি একাধিক বোমা-বাহী ইউএসভি ব্যবহার করেছিল।ঐ আক্রমণে বেশ ক’টি রুশ জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, এবং ইউএসভিগুলি বন্দরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করতে সক্ষম হয়েছিল।মানুষ-বিহীন নিয়মিত নৌবহরের তুলনায় ইউএসভি’র ব্যবহারে অনেকগুলি সুবিধা রয়েছে, যা নৌবাহিনীর কাছে বেশ আকর্ষণীয়। অনেক দেশের নৌবাহিনী সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইউএসভি তৈরি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে।

কৌশলগত সামরিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মাঝারি, বড় এবং বিশাল "মানবহীন জাহাজ" নির্মাণের জন্য এখন প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে বলে ওয়েবসাইটটি জানিয়েছে।এর তথ্য অনুযায়ী, ২০৫২ সালের মধ্যে মার্কিন নৌ বহরের অর্ধেকেরও বেশি জাহাজ মানব-বিহীন এবং দূর-নিয়ন্ত্রিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।এতে অন্যান্য দেশের নৌবাহিনীও পিছিয়ে নেই। ব্রিটেন, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য দেশও ক্রু-বিহীন এবং স্বচালিত ইউএসভি তৈরির কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

ইউএসভি কিংবা একই ধরনের প্রযুক্তি হাত করার আকাঙ্ক্ষা থেকে একটি বৈশ্বিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে নিউজ ওয়েবসাইট আইনিউজ।তারা বলছে, গত বছর অক্টোবর থেকে কৃষ্ণ সাগর এবং তার আশেপাশে রুশ নৌবাহিনী এবং অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুর ওপর অন্তত ছয়টি হামলা হয়েছে যাতে দূর-নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনীয় বোট ড্রোন ব্যবহৃত হয়। আর এসব ড্রোন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল জেট স্কি ইঞ্জিন।

একটি বোতাম টিপেই যদি দূর-নিয়ন্ত্রিত ড্রোন বোট তার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম হয় এবং তার সাথে যদি যোগ হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই, তাহলে মানুষের তদারকি ছাড়াই তারা সামরিক লক্ষ্য চিহ্নিত করতে এবং লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম হবে।মার্কিন নেভাল সারফেস ফোর্সের কমান্ডার ভাইস-অ্যাডমিরাল রয় কিচেনার ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মন্তব্য করেছিলেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরে ইউএসভির নিয়োগ ‘অনুঘটক’ হিসেবে কাজ করবে এবং এতে শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে “আমাদের যুদ্ধের সুবিধা”ও বেড়ে যাবে।

ড্রোন বোট কী

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ইউএসভিকে ড্রোন বোট বা ড্রোন শিপ নামেও ডাকা হয়।এগুলো হলো এমন এক ধরনের নৌকা কিংবা জাহাজ, যা কোন মানুষের সাহায্য না নিয়েই জলের ওপরে চলে।কোন কোন ইউএসভি জলের নিচেও কাজ করে। রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে এদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়।কোন কোন ইউএসভি সম্পূর্ণভাবে ‘অটোনমাস’ অর্থাৎ নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। এদের বলা হয় “অটোনমাস সারফেস ভেহিকেল” এসএসভি।তবে হামলা চালানোর জন্য না হলেও ইউএসভির ব্যবহার শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগ থেকেই।সে সময় রিমোট-কন্ট্রোল ইউএসভি ব্যবহার করে মার্কিন নৌবাহিনী মাইন অপসারণ করেছিল।

ইউএসভি ব্যবহারের সুবিধেগুলো হলো, সামরিক সংঘর্ষের সময় এগুলো ব্যবহার করলে সৈন্য মারা যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না।নৌবাহিনীর বিশাল জাহাজগুলোর তুলনায় এগুলো তৈরি করতে খরচ পড়ে খুবই কম।এর অনেক বেসামরিক ব্যবহারও রয়েছে। যেমন, বাণিজ্যিক শিপিং, পরিবেশ ও জলবায়ু পর্যবেক্ষণ, সমুদ্রতল ম্যাপিং, যাত্রী পারাপার, এবং সেতু কিংবা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর নজরদারির জন্য ইউএসভি ব্যবহার করা যায়।

সূত্র : বিবিসি