শরীরে ঢুকে যাওয়া সুই বের করতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

শরীরে ঢুকে যাওয়া সুই বের করতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

ছবিঃ সংগৃহীত।

বরিশাল নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছয় মাস বয়সি শিশুর নিতম্বে ঢুকে যাওযা সুই (সেলাইয়ের কাজে ব্যবহৃত) বের করতে অস্ত্রোপচার করার সময় অপারেশন টেবিলে তার মৃত্যু হয়েছে। 

মঙ্গলবার বিকালে নগরীর বান্দ রোডের রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে ।

মৃত শিশু তানজিম পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ডাউকা গ্রামের ফিরোজ খানের ছেলে। 

শিশুর মামা রাকিব জানান, ভাগ্নে তানজিমের নিতম্বে ছোট একটি সুই ঢুকে। গলাচিপায় এক্সরে করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পটুয়াখালীতে আসেন। সেখানে চিকিৎসক বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের কাছে গিয়ে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন।

রাকিব জানান, গলাচিপা থেকে গত সোমবার তারা প্রথমে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) এ আসেন। সেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ার ভয়ে চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের পরামর্শে তারা নগরীর আগরপুর রোডের মিডটাউন হাসপাতালে ভর্তি হয়। 

ডা. তৌহিদুল ইসলাম তাদের জানান, মিডটাউনে অস্ত্রোপচারের ভালো ব্যবস্থা নেই। রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে সেখানে পাঠিয়েছেন। ডা. তৌহিদুল ইসলামের পরামর্শে মঙ্গলবার সকালে অপারেশন করতে রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়। 

রাকিব বলেন, অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার আগেই ভাগ্নে খেলা করেছে। বরিশালে কয়েকবার এক্সরে করে সুইয়ের অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়েই এই অস্ত্রোপচারের সিদ্বান্ত নেন চিকিৎসক। 

রাকিব অভিযোগ করে বলেন, আমি ভেতরে ছিলাম। অস্ত্রোপচারের জন্য তানজিমের শরীরে ৭-৮ বার সুঁচ ফুটানো হয়। পরে কোমরে ইনজেকশন দেয়। এর পর সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। 

রাকিব বলেন, ডা. তৌহিদুল ইসলাম মেশিনে অস্ত্রোপচার করার কথা বলে হাতে করেছেন। অজ্ঞান শিশুকে কোনো অক্সিজেন দেননি। কাটা স্থান সেলাই করেননি। তাদের বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা কয়েকজন ওটি রুমে হাসিঠাট্টায় ব্যস্ত ছিলেন। পরে নিচে আমার পরিচিত ফার্মেসির একজনকে নিয়ে ফিরে এলে তাকে আর প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কিছুক্ষণ পরেই আমি ভেতরে বোনের চিৎকার শুনতে পাই। ওরা আমার ভাগ্নেকে মেরে ফেলেছে। 

ঘটনাস্থলে এসে পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ফজলুল করিম বলেন, আমরা ৯৯৯-এ সংবাদ পেয়ে এখানে ছুটে এসেছি। মৃত শিশু তানজিমের অপারেশন হয়েছিল। বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশুর অস্ত্রোপচার করেছেন ডা. তৌহিদুল ইসলাম। তাকে অজ্ঞান করেছে ডা. মনিরুল ইসলাম। 

শিশুকে এনেসথেসিয়া দেওয়া চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অনাকাঙিক্ষত ও হৃদয়বিদারক। ছয় মাস বয়সি একটি শিশুকে অজ্ঞান করা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু শিশুটির জরুরি অস্ত্রোপচারও প্রয়োজন। তাই ঝুঁকি নিতে হয়েছে। এ জন্য আমার ১৬ বছরের চিকিৎসা পেশায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু অস্ত্রোপচারের শেষ মুহুর্তে এসে শিশুর হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। আমরা হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। এখানে আমাদের চেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না। 

ডা. তৌহিদুল বলেন, অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছিল। অ্যানেসথেসিয়ায় প্রবলেম হয়েছে।