বৈরী আবহাওয়ায় জোয়ারে তিন জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

বৈরী আবহাওয়ায় জোয়ারে তিন জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ফাইল ছবি

নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টির মাত্রাটা বেশি। এমন আবহাওয়ার কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল রয়েছে সাগর। ইতোমধ্যে জোয়ারের পানিতে তিন জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আবহাওয়া অধিদফতরে সর্বশেষ সামুদ্রিক সতর্কবার্তয় বলা হয়েছে, পূর্ণিমা ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

পূর্ণিমার জোয়ারে বাগেরহাটের ভৈরব, পানগুছি, পশুর, দড়াটানাসহ বিভিন্ন নদীতে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার অন্তত সহস্রাধিক বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে।

ভৈরব নদীর তীরে থাকা হাড়িখালি ও মাঝিডাঙ্গা এলাকার অন্তত ২০টি ঘর প্লাবিত হয়েছে। কারও কারও ঘরে পানি উঠেছে। পানির কারণে রান্না করতে পারছেন না অনেকে। বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প মাঝিডাঙ্গা এলাকাও মাঝে মাঝে প্লাবিত হয়েছে। শুধু হাড়িখালি-মাঝিডাঙ্গা নয়, বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর, কলাবাড়িয়া, পানিঘাটসহ বেশকিছু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

পানগুছি নদীর পানিতে মোরেলগঞ্জ উপজেলা সদরের প্রধান বাজার, পৌরসভার একাংশ, উপজেলা পরিষদ চত্বর প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া মোরেলগঞ্জ উপজেলার খাউলিয়া, বহরবুনিয়া, পঞ্চকরণ, তেলিগাতি, হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকা জোয়ারের পানি ঢুকেছে। এতে অন্তত সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, জোয়ারের কারণে স্বাভাবিকের থেকে দড়াটানা নদীতে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পাউবোর যে বাঁধ রয়েছে, সেগুলো ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। তবে বাঁধ না থাকা কিছু এলাকায় পানি ওঠার খবর পেয়েছি।’

ভোলা: নিম্নচাপ এবং জোয়ারের কারণে ভোলায় নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে অন্তত ১৫টি গ্রাম। এতে ওই সব গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

জানা গেছে, ভোলা সদরের ইলিশা, রাজাপুর ও ধনিয়া ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে বসবাস করেন ৩০ হাজারের অধিক মানুষ। আর নিম্নচাপ ও জোয়ারে তলিয়ে গেছে এ তিন ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের বেশির ভাগ নিচু এলাকা। ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। এতে রান্না-বান্না, চলাচলসহ বিঘ্নিত হচ্ছে জীবনযাত্রা।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মু. হাসানুজ্জামান জানান, মেঘনার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে সাগরে রয়েছে নিম্নচাপ। ফলে বেশিরভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পটুয়াখালী: পটুয়াখালী পৌর শহরের বেশ কিছু এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ও চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বুধবার (২ আগস্ট) দুপুরের দিকে শহরের মহিলা কলেজ, জুবিলি স্কুল সড়ক, পুরাতন হাসপাতাল সড়ক, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পিটিআই সড়কসহ নিম্ন এলাকায় জোয়ারের পানিতে ঢুকে পড়ে। এসব সড়কে এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত পানি উঠতে দেখা গেছে।

গতকাল সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, জোয়ারের পানি যাতে শহরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য শহরের বিভিন্ন খালের মুখে নির্মাণ করা স্লুইস গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরও অনেক এলাকায় পানি উঠেছে। তবে নদীতে ভাটার সঙ্গে সঙ্গে পানি যাতে নেমে যেতে পারে সেজন্য স্লুইস গেটগুলো খুলে রাখা হবে। মেয়র আরও বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি আমরা মনিটরিং করছি।