হরিয়ানার দাঙ্গায় যেভাবে বাঁচলেন নারী বিচারক

হরিয়ানার দাঙ্গায় যেভাবে বাঁচলেন নারী বিচারক

হরিয়ানার দাঙ্গায় যেভাবে বাঁচলেন নারী বিচারক

হরিয়ানার সাম্প্রতিক দাঙ্গার সময়ে তিনবছরের কন্যাকে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে যেভাবে দাঙ্গাকারীদের হামলার মুখে পড়েছিলেন এক নারী বিচারক, সেই কাহিনী ঘটনার তিনদিন পরে প্রকাশ পেয়েছে।

হরিয়ানার নূহ্-এর অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জলি জৈনের দেহরক্ষী বুধবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার পরে জানা যায় বিষয়টি।সংবাদ সংস্থা পিটিআই বলছে, মিজ জৈনের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর আর গুলি ছোঁড়া হয়। তারা কোনমতে একটা কারখানায় লুকিয়ে থাকেন, সেখান থেকে কয়েকজন আইনজীবী তাদের উদ্ধার করে আনেন।

যেভাবে দাঙ্গার মধ্যে পড়েন বিচারক

নূহ্-তে কর্মরত বিচারক অঞ্জলি জৈন তার কন্যাকে নিয়ে নলহরের এসকেএম মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তার দেহরক্ষী সিয়ারামও।গত সোমবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দল আয়োজিত ‘জলাভিষেক যাত্রা’য় অংশগ্রহণকারীদের ওপরেই হামলা হয় নূহ্-তে। ওই যাত্রায় অংশ নেওয়া মানুষরা পালিয়ে নলহরের মহাদেব মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে চারদিক থেকে পাথর ছোঁড়া হতে থাকে ও তারপরে গুলি চালানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন।

নলহরের ওই মন্দিরের সামনেই অভিষেক নামে এক বজরং দল সদস্য নিহত হন বলে বিবিসিকে জানিয়েছিলেন তার ভাই মহেশ কুমার।পিটিআই জানিয়েছে, থানায় দায়ের করা এফআইআরে লেখা হয়েছে যে নলহর মেডিক্যাল কলেজ থেকে বিচারক অঞ্জলি জৈন ওষুধ কিনে তার গাড়িতেই আসছিলেন। দিল্লি-আলোয়ার রোডে নলহরের পুরনো বাস-স্ট্যান্ড এলাকায় বেলা একটা নাগাদ পৌঁছতেই তাদের ওপরে হামলা করে একশো দেড়শো দাঙ্গাকারী।

“দাঙ্গাকারীরা গাড়িতে পাথর ছুঁড়ছিল। কয়েকটা পাথরের আঘাতে গাড়ির পিছনের কাঁচ ভেঙ্গে যায়। তারপরেই দাঙ্গাকারীরা গুলি চালাতে শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে আমরা পালিয়ে যাই। পুরনো বাস স্ট্যান্ড এলাকার একটা কারখানায় লুকিয়ে থাকি আমরা। পরে কয়েকজন আইনজীবী এসে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে যান,” এফআইআর উদ্ধৃত করে জানিয়েছে পিটিআই।পরের দিন ওই বিচারক এবং তার সঙ্গীরা ফিরে গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে।“আমরা গিয়ে দেখি গাড়িটি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে,” লেখা হয়েছে এফআইআরে।পুলিশ বলছে তারা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা, বেআইনি জমায়েত, আঘাত করার অভিপ্রায় নিয়ে গুলি চালানো এবং খুনের চেষ্টার মতো ভারতীয় দণ্ডবিধির নানা ধারায় মামলা করেছে।

নূহ্-তে কার্ফু চলছে

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে বুধবার মাঝরাতে নূহ্-র দুটি মসজিদ লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়।পুলিশ জানিয়েছে ওই দুটি ঘটনায় কেউ আহত হন নি। আবার পালওয়াল জেলায় একটি দোকানেও হামলা হয় বলে জানিয়েছে পিটিআই।নূহ্-তে কার্ফুও চলছে দাঙ্গার পর থেকেই। রাস্তায় নিরাপত্তারক্ষীদের দল রুট মার্চ করছে।

সোমবার থেকে নূহ-তে আর তারপরে গুরগাঁওতে যে দাঙ্গা হয়েছে, তাতে এখনও পর্যন্ত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে।নিহতদের মধ্যে হিন্দু আর মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ যেমন আছেন, তেমনই আছেন দুজন হোমগার্ডও। নিহতদের মধ্যে একটি মসজিদের নায়েব ইমামও রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত হরিয়ানা পুলিশে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চারটি জেলা থেকে মোট ১৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর থেকে নূহ, গুরগাঁও, ফরিদাবাদ আর পালওয়াল জেলাগুলির অনেক এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে একটা আসন্ন চাকরি পরীক্ষার পরীক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে তিন ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট চালু রাখা হয়।

বজরং দল নেতার ভিডিও

সোমবার দাঙ্গা শুরু হওয়ার আগের দুদিনে সামাজিক মাধ্যমে তিনটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। দুই বজরং দল নেতা ও স্বঘোষিত গোরক্ষক বাহিনীর নেতা মনু মানেসর ও বিট্টু বজরঙ্গীর ওই ভিডিওগুলি থেকেই দাঙ্গার সূত্রপাত বলে পুলিশের সূত্রগুলি জানিয়েছে।মনু মানেসরের বিরুদ্ধে এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে দুই মুসলমানকে গরুপাচারকারী সন্দেহে পুড়িয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ আছে।

তিনিই নূহ্-র দাঙ্গার আগে ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন যে সোমবার নূহ্-তে যে জলাভিষেক যাত্রা হতে চলেছে, সেখানে তিনি সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে যোগ দেবেন।এতেই মুসলমানদের মধ্যে বিক্ষোভ ছড়ায় বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ।তবে মনু মানেসর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে তিনি ওই জলাভিষেক যাত্রায় অংশ নেন নি, আর ফেব্রুয়ারি মাসে দুই মুসলমানের হত্যার ঘটনাতেও তিনি জড়িত ছিলেন না।

সূত্র : বিবিসি