ঢাকার বাইরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, ভয়াবহ রূপ নেওয়ার শঙ্কা

ঢাকার বাইরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, ভয়াবহ রূপ নেওয়ার শঙ্কা

ফাইল ছবি

ডেঙ্গু জ্বরে কাঁপছে দেশে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারাদেশে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। ইতোমধ্যে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর চাপ। কিন্তু গত পাঁচ দিনে রাজধানীর চেয়ে বাইরের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। এতে চিকিৎসকদের যেমন হিমশিম খেতে হচ্ছে, তেমনি রোগীরাও পড়ছেন নানা ভোগান্তি আর বিড়ম্বনায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রাজধানীতে এতদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি থাকলেও টানা পাঁচদিন ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। ৩০ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজার ৩০৯ জন। এরমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৫ হাজার ৭১৪ জন। আর রাজধানীর বাইরে সারাদেশে ভর্তি হয়েছে ৭ হাজার ৫৯৫ জন। সব মিলিয়ে এ সময়ে শনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে ৫৭ শতাংশই ভর্তি হয়েছে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকার হাসপাতালে।

 

গত ৩০ জুলাই সারাদেশে ২ হাজার ৭৩১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরমধ্যে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে এক হাজার ১৮৪ জন এবং রাজধানীর বাইরে এক হাজার ৫৪৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ৩১ জুলাই ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৬৯৪ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে রাজধানীর এক হাজার ১৬৮ জন এবং বাইরের ছিল এক হাজার ৫২৬ জন।

এ ছাড়া ১ আগস্ট সারাদেশে দুই হাজার ৫৮৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরমধ্যে রাজধানীর ছিল এক হাজার ১৩১ জন এবং রাজধানীর বাইরের এক হাজার ৪৫৩ জন। ২ আগস্ট ২ হাজার ৭১১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরমধ্যে ঢাকার এক হাজার ১৩০ জন এবং বাইরের হাসপাতালগুলোতে এক হাজার ৫৮১ জন ভর্তি হয়েছেন। ৩ আগস্ট আক্রান্ত দুই হাজার ৫৮৯ জনের মধ্যে রাজধানীর এক হাজার ১০১ জন এবং রাজধানীর বাইরের ছিল এক হাজার ৪৮৮ জন।

চিকিৎসা খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর বাইরে টানা ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বিশেষায়িত চিকিৎসা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত নেই। ফলে রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু আরও প্রাণঘাতী হয়ে ওঠতে পারে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এতদিন রোগীর সংখ্যা রাজধানীতে বেশি ছিল। এখন গ্রামেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরে স্বাস্থ্য অবকাঠামো খুব একটা সাজানো না থাকলেও এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু গ্রামে ভালো অবকাঠামো থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জরুরি ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে। এমন বাস্তবতায় সামনের দিনগুলোয় অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু এখন সিজনাল নেই, সারা বছরই হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে এটা বাড়ছে। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ জুন মাস থেকে শুরু হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর মে মাস থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। একই সঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তাহলে হয়তো রক্ষা পাব, না হলে ডেঙ্গু এবার মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বছরব্যাপী নানা উদ্যোগ নিলেও কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর চৌধুরী বলছেন, মশা নিধনে শুধু জেল-জরিমানা আর জনসচেনতা বাড়িয়ে কাজ হবে না। সঠিকভাবে জরিপ চালিয়ে দক্ষ জনবল দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছর ৩ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৯ হাজার ৭১৬ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫০ হাজার ২২৩ জন। মারা গেছেন ২৮৩ জন, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ।