ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় এককভাবে কেউ দায়ী নয়: চউক

ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় এককভাবে কেউ দায়ী নয়: চউক

ছবিঃ সংগৃহীত।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেছেন, পুরো চট্টগ্রাম নগরীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করার কাজ বা প্রকল্প শুধু চউক বাস্তবায়ন করছে না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডও (পাউবো) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অথচ চলমান জলাবদ্ধতার জন্য চউককে দোষারোপ করা হচ্ছে। যা দুঃখজনক। প্রকৃতপক্ষে নগরীর ভয়াবহ জলাবদ্ধতার জন্য এককভাবে কেউ দায়ী নয়। 

মহানগরীতে টানা কয়েকদিনের ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিয়ে জনমনে সৃষ্ট নানা প্রশ্ন এবং চসিক মেয়রের অভিযোগের জবাব দিতে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চউক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। 

চউকের কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ আরও বলেন, জলাবদ্ধতা মুক্ত করার কাজ বা প্রকল্প নিয়ে চসিক থেকে সেনাবাহিনীর কাজ নিয়ে ভিত্তিহীন দাবি তোলা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, চউক জলাবদ্ধতা প্রকল্পের যে কাজ করছে তার ডিপিপিতে খাল খনন, নালা পরিষ্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিন কোটি ঘনফুট মাটি তোলার কথা রয়েছে। বাস্তবে ছয় কোটি ঘনফুট তোলা হয়েছে। কিন্তু সিটি মেয়র কোথায় পেলেন-২০ কোটি ঘনফুট মাটি তোলার বিষয়। এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ যারা তোলেন তারা সেনাবাহিনীর কাজ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। 

তিনি আরও বলেন, জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। কিন্তু তারা পারছে না বলে দায়িত্ব চউককে দেওয়া হয়েছে। জলাবদ্ধতা দূরীকরণের কাজ সেনাবাহিনীর ৩৪ কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের মাধ্যমে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। মহেশখালে স্লুইস গেট নির্মাণের কারণে ওই এলাকায় এখন পানি ওঠে না। মা ও শিশু হাসপাতালেও পানি উঠে না। চাক্তাই খাল খননের কারণে এবার তুলাতলি, খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই এলাকায় পানি উঠেনি। এগুলো প্রকল্পের সুফল। 

সংবাদ সম্মেলনে ‘খাল খনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের পরিচালক ও ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে, খাল খননে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা না মিটলে এবং প্রকল্পের বাইরে থাকা বাকি ১৭ খাল খনন করা না হলে প্রকল্পের পুরোপুরি সুফল কখনোই মিলবে না। তিনি আরও বলেন, ১ হাজার ৩০০ মিটার নালা নিয়মিত পরিষ্কার করা না হলে এবং জনগণ সচেতন না হলে জলাবদ্ধতা সহজে কাটবে না। সংবাদ সম্মেলনে চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, বোর্ড সদস্য আলী শাহ, মোহাম্মদ ফারুক, জিনাত সোহানা চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের পরিচালক শাহ আলী আরও বলেন, নগরীতে ৫৭টি খাল রয়েছে। ৩৬টি খাল প্রকল্পের আওতায় খনন ও সম্প্রসারণের কথা রয়েছে। নগরীতে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৩০২ কিলোমিটার ড্রেন করা হচ্ছে। বাকি ১ হাজার ৩০০ মিটার ড্রেন চসিকের নিয়ন্ত্রণে। প্রকল্পের আওতাধীন ৩৬ খালের মধ্যে ১০টি পুরোপুরি খনন হয়েছে। ২৫টি খালে রিটেইনিং ওয়াল ও সড়ক নির্মাণ হয়েছে। তবে এর মধ্যে ১১ টি খালে খনন, রিটেইনিং ওয়াল ও সড়ক নির্মাণের কাজ বাকি আছে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে এসব কাজ করা যাচ্ছে না। ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব চউকের। 

তিনি আরও বলেন, একটি খাল আরেকটি খালের সঙ্গে সংযুক্ত, একটি নালা আরেকটি নালার সঙ্গে সংযুক্ত। বৃষ্টি বা পাহাড়ি ঢলের পানি কখনো নালা ও খাল হয়ে কখনো সরাসরি কখনও একাধিক খাল নালা বেয়ে নদীতে পড়ে। এখন প্রকল্পের বাইরে যে খালগুলো রয়েছে সেসব খাল খনন ও সম্প্রসারণ করা না হলে এবং চসিকের ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার নালা নিয়মিত পরিষ্কার করা না হলে সুফল পাওয়া যাবে না।