চার বছর পর ব্রিটেন সফর যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ

চার বছর পর ব্রিটেন সফর যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ

চার বছর পর ব্রিটেন সফর যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ব্রিটেন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে।ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের কর্মকর্তারা বলেছেন, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী তারা প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন, তবে এখন পর্যন্ত তার ডায়েরিতে কিছুই নেই।তবে আলাদা একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, তাই বলে সফরটি হবে না এমন মনে করারও কোনো কারণ নেই।

২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগজিকে হত্যার পর এটিই হবে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রথম ব্রিটেন সফর।এই আমন্ত্রণের খবরটি প্রথম প্রকাশ করেছিল লন্ডনের দ্য টাইমস পত্রিকা।সৌদি সরকারের একজন কঠোর সমালোচক খাশোগজির হত্যাকাণ্ডের পর সেই সময়ে পশ্চিমা দেশগুলো সৌদি যুবরাজের নিন্দা করেছিল।

এই ঘটনা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এই উপসংহারে পৌঁছেছিল যে যুবরাজ মোহাম্মদ অবশ্যই ওই হত্যাকাণ্ডের অনুমোদন দিয়েছেন, যদিও তিনি নিজে এর সাথে জড়িত থাকার কথাটি অস্বীকার করে আসছেন।বিবিসির নিরাপত্তা সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলেন, সৌদি সরকার অন্তত এক মাস আগে থেকে এই সফরের পরিকল্পনা করছে।

তিনি জানান, এই সফরটি সম্ভবত অক্টোবর মাসে হতে যাচ্ছে, যদিও সরকারি ডায়েরিতে এখনো কোনো তারিখ নেই।ব্রিটেনের মন্ত্রীরা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সৌদি আরবের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষার কথা ইঙ্গিত করেছেন।জ্বালানি তেল-ভিত্তিক অর্থনীতি থেকে দূরে সরে আসতে সৌদি সরকার তার ট্রিলিয়ন পাউন্ডের বিনিয়োগ তহবিলের জন্য লন্ডনে একটি অফিসও খুলেছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্রিটেনের জ্বালানি নিরাপত্তা মন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস মহাকাশ, প্রযুক্তি এবং জরুরি খনিজের মতো খাতে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে সৌদি আরব সরকারের সাথে আলোচনা করেছেন।ব্রিটেনের সরকার পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা জিসিসির সাথে বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে উপসাগরীয় দেশগুলোর সমর্থন আদায়েরও চেষ্টা করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি সম্প্রতি কাতার, কুয়েত এবং জর্দান সফর করেছেন।

রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরতার অবসান ঘটাতে উপসাগরীয় নেতাদের সাথে আলোচনার অংশ হিসেবে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত বছর সৌদি রাজধানী রিয়াদে গিয়ে যুবরাজ মোহাম্মদের সাথে দেখা করেন।ওই বৈঠকে তিনি গত সেপ্টেম্বরে রানি এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার একটি আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, এবং তার জায়গায় অন্য একজন সিনিয়র সৌদি কর্মকর্তাকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার হয়।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান শেষবার ব্রিটেনে গিয়েছিলেন ২০১৮ সালের মার্চ মাসে, খাশোগজি হত্যা ছয় মাস আগে।তখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তেরেসা মে। সফরকালে সৌদি যুবরাজ রানির সাথে লাঞ্চ এবং তৎকালীন প্রিন্স অফ ওয়েলস ও ডিউক অফ কেমব্রিজের সাথে ডিনার করেন।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তেল রফতানিকারক দেশের কার্যত শাসনকর্তা। রক্ষণশীল উপসাগরীয় ওই রাজ্যে মহিলাদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়াসহ বেশ কিছু সংস্কার কাজের জন্য তিনি পশ্চিমা নেতাদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।তবে জামাল খাশোগজি হত্যার কারণে তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২০১৮ সালে ২ অক্টোবর জামাল খাসোগজি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই মোহাম্মদ বিন সালমানের ভূমিকা নিয়ে নানা সন্দেহ তৈরি হয়।সে সময় সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলতে বাধ্য হন যে জামাল খাসোগজি নিখোঁজের সাথে সৌদি আরব সরকার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের ‘কঠোর শাস্তি’ পেতে হবে।এর জবাবে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বলেছিলেন, তারাও এর পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত। বৈশ্বিক তেলের বাজারে সৌদি আরবের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

সৌদি রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের ক্রমাগত প্রচারণার কারণে সে দেশের অনেক মানুষ এখনো সরকারকে সমর্থন দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। সে দেশে এমন গুঞ্জনও তৈরি করা হয়েছিল যে- সৌদি আরবের নির্দোষ রাজতন্ত্রের বদনাম ঘটানোর লক্ষ্যেই ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে কাতার এবং তুরস্ক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। সূত্র : বিবিসি