সর্বজনীন পেনশন চালুর প্রথম দিনে ৮ হাজার নিবন্ধন

সর্বজনীন পেনশন চালুর প্রথম দিনে ৮ হাজার নিবন্ধন

ফাইল ছবি

চার শ্রেণির নাগরিককে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনতে দেশে প্রথমবারের মত সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে এ কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

এদিকে, সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রথম দিন বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) ৮ হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৭০০ জন আবেদনের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন।

শুক্রবার জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য (অতিরিক্ত দায়িত্ব) গোলাম মোস্তফা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধনের দিন বিকেল পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছেন। রাত ১২টা পর্যন্ত সেটি বেড়ে ৮ হাজারে দাঁড়ায়। তবে প্রথম দিন সব মিলিয়ে ১ হাজার ৭০০ জন পেনশনের চাঁদা পরিশোধ করেছেন। যেহেতু পেনশনের নিবন্ধন থেকে শুরু করে চাঁদা পরিশোধের পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই করা যাচ্ছে, সেহেতু আবেদনকারীর সংখ্যা প্রতি মুহূর্তেই বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রথম দিনে আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি। সামনের দিনগুলোয় সর্বজনীন পেনশনে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে।

জানা গেছে, চারটি স্কিমে ব্যক্তির ৬০ বছর পূর্ণ হলে মিলবে এই সুবিধা। স্কিম চারটি হলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাস’, বেসরকারি কর্মচারী-প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্ম ও অ-প্রাতিষ্ঠানিক কর্মীর জন্য ‘সুরক্ষা’ এবং স্বল্প আয়ের ব্যক্তিদের জন্য ‘সমতা’।

এসব স্কিমে অংশ নিতে পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে (www.upension.gov.bd) প্রবেশ করে পেনশনার হিসেবে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর এবং ইমেইলে আইডিসহ বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। পরে এসএমএস বা ইমেইলের মাধ্যমে আবেদনকারী একটি ওটিপি পাবেন। যার মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পূর্ণ করতে হবে।

সফলভাবে নিবন্ধনের পর সুবিধাভোগীরা ব্যাংকের শাখায় বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, অনলাইন ব্যাংক ট্রান্সফার বা ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। পেনশন কর্তৃপক্ষ এসএমএসের মাধ্যমে কিস্তি পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

ওটিপি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সুবিধাভোগী তার জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ জানতে পারবেন। বর্তমানে সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ছাড়া ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের যে কেউ সার্বজনীন পেনশনের আওতায় ৪টি স্কিমের একটিতে অংশ নিতে পারবেন।

এ ছাড়া এসব পেনশন স্কিমে অংশ নিতে সুবিধাভোগীকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিতে হবে। মাসিক চাঁদা ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। পেনশন সুবিধা পেতে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে।

পাস হওয়া ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ অনুযায়ী, ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক নির্ধারিত হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পূর্তির পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন। এ ছাড়া বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। আজীবন বলতে পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়েছে।

তবে পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কেউ মারা গেলে তার নমিনি মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। এ ছাড়া চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে তার জমা করা অর্থ মুনাফাসহ নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতে গত ২৪ জানুয়ারি সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস হয়।