'নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না'

'নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না'

'নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না'

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ঘুরে গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। আগামী অক্টোবরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক–নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল ঢাকায় আসবে বলে জানিয়েছে দেশটি।নির্বাচন ঘিরে গুরুত্বপূর্ন দুটি প্রতিনিধি দলের তৎপরতা দেখা গেলেও ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষক’ হিসেবে এখনও কোন বিদেশি সংস্থা আবেদন করেনি। গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ কিংবা জানুয়ারি নাগাদ বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হবার কথা রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন বিদেশির পর্যবেক্ষক হিসেবে আবেদন না করার কারণ কী?বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে পর্যবেক্ষনে আবেদনের করার এখনও অনেক সময় বাকি আছে। তবে শেষ পর্যন্ত বিদেশির পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনে পর্যবেক্ষনে দেশে আসবেন কি না, তা নির্ভর করবে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর।

নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক

দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা এলেও ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোন বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিল না।নির্বাচন বিশ্লেষক আবদুল আলীমের মতে, নির্বাচন যদি প্রকৃত অর্থে অংশগ্রহণমূলক না হয় তাহলে সেই নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না।আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কারণেই এখনও বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আবেদন করেননি বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচনে এখন পর্যন্ত সব দলের অংশ নেয়ার বার্তা নেই। সব দল নিজ অবস্থানে অনড়। একারণেই তারা এখনও আবেদন করেনি। আমার মনে হয় তারা অপেক্ষা করছে”।একইসঙ্গে আবেদনের সময়ও এখনও শেষ হয়নি উল্লেখ করেন এই বিশ্লেষক।“তারা নানাভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করেছে। কেউ কেউ প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ শেষ করেছে। কেউ কেউ প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ করবেন। আবার কেউ কেউ দ্বিতীয় বার করবেন। এসব কারণে অপেক্ষা করছেন”।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেনও ‘নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা’ এবং ‘নির্বাচনে সময় থাকার’ বিষয়টিকে এখন পর্যন্ত বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আবেদন না করার কারণ হিসেবে দেখছেন।নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে আবেদন করার জন্য এখনও অনেক সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আগের দুই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক আসেনি। এইবার কী হবে তা নিয়ে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা আসবে না”।

বিদেশি পর্যবেক্ষক আসার প্রক্রিয়া

২০১৮ সালে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য একটি নীতিমালা করা হয়।এতে বলা হয়, বিদেশি কেউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে প্রথমে নির্বাচন কমিশনে দেয়া ফর্মে আবেদন করতে হয়।সেই আবেদন পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায় নির্বাচন কমিশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র পেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসার জন্য উদ্যোগ নেয়।সাধারণত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার কিছু সময় আগে থেকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা আবেদন করে বলে জানান মি. আলীম।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল নভেম্বরের দিকে ঘোষণা হবার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা এবং নির্বাচনে দলগুলোর অংশগ্রহণের মতো দিকগুলো মিলিয়ে সিদ্ধান্ত বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সিদ্ধান্ত নেবার সম্ভাবনা রয়েছে।ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কিছু সংস্থা আছে যারা বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষন করে থাকে। সেক্ষেত্রে প্রাক নির্বাচনী প্রতিনিধি দলের মূল্যায়নের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে ওই দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষনে প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে কি না।

গত জুলাইয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী প্রতিনিধি দল ঢাকায় বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি দল আসবে নির্বাচন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষনে।এই প্রতিনিধি দলের মূল্যায়নের ভিত্তিতে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবেইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পাঠানো নির্ভর করবে।

নির্বাচন বিশ্লেষক এম সাখাওয়াত হোসেনের মতে, অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধির পার্থক্যের জায়গা হলো ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’।তিনি বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র বা কমওয়েলথ থেকে যখন প্রতিনিধি আসে আর রিপোর্ট দেয় তখন বিষয়টা গুরুত্ব পায়। কিন্তু একজন আলাদা ব্যক্তি আসলে তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে”।“অপরিচিত কেউ মতামত দিক বা না দিক তাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মতামত দিলে, সেটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটা প্রভাব ফেলে”, বলেন তিনি।

বিদেশী পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা

মূলত একটি দেশে কতটা গণতান্ত্রিক চর্চা হচ্ছে তা বুঝতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হয়। সাধারণত নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হবার কিছুদিন পর পর্যবেক্ষক দল তাদের পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করে বা গণমাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়।

তবে এর ফলে নির্বাচনের ফলাফলে কোন প্রভাব পড়ে না। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেনের মতে, বিদেশিরা আসা মানে ভালো নির্বাচন হবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই।তবে আন্তর্জাতিক পরিসরে গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে নির্বাচন পর্যবেক্ষদের বিশেষ ভূমিকা আছে।সেক্ষেত্রে কোন দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা নেই মনে হলে, তাদের ওপর বিশেষ বিধিনিষেধ কিংবা ভিসানীতি দেয়ার ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকদের করা প্রতিবেদনের ভূমিকা থাকে বলে মন্তব্য করেন মি. হোসেন।

সূত্র : বিবিসি