যুক্তরাজ্যে সাত শিশুকে হত্যা করা সেই নার্সের আমৃত্যু কারাদণ্ড

যুক্তরাজ্যে সাত শিশুকে হত্যা করা সেই নার্সের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ছবিঃ সংগৃহীত।

সাত শিশুকে হত্যার দায়ে ব্রিটিশ নার্স লুসি লেটবিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২১ আগস্ট) ম্যানচেস্টারের ক্রাউন আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিচারক বলেছেন, সাত শিশুকে হত্যার ‘বেদনাদায়ক’ ঘটনায় লুসিকে আজীবন কারাগারে কাটাতে হবে। তিনি কোনো দিনই ছাড়া পাবেন না।

৩৩ বছর বয়সী লুসি লেটবি তৃতীয় জীবিত ব্রিটিশ নারী, যাকে যুক্তরাজ্য আমৃত্যু কারাদণ্ড দিল। লুসি লেটবি রায় ঘোষণার দিন আদালতে হাজির হতে অস্বীকার করেছিলেন। আদালতে উপস্থিত ছিলেন না তিনি। তাই বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন, এই রায়ের একটি কপি যেন তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

তিনি শিশুদের শোকার্ত পিতা-মাতার ক্ষোভ ও যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে চাননি। তাকে ব্রিটিশ আইনের অধীনে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বিচারক গোস বলেছেন, ‘এটি ছিল সবচেয়ে ছোট ও দুর্বল শিশুদের বিরুদ্ধে হত্যার অমানবিক, পরিকল্পিত নিষ্ঠুরতা। লুসি জানতেন তার এই ধরনের নিষ্ঠুরতা শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করবে।

বিচারক রায়ে আরো বলেছেন, লুসি যা করেছেন তা নার্সিং ও শিশুদের যতেœর ক্ষেত্রে মানুষের যে সহজাত প্রবৃত্তি রয়েছে তার পরিপন্থী। বিচারপ্রক্রিয়া চলার সময় লুসি দাবি করেছেন, তিনি শিশুদের কোনো ক্ষতি করেননি। যা ছিল সুস্পষ্ট একটি মিথ্যাচার। চেস্টার হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটের সাবেক এ নার্সকে আধুনিক ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য শিশু সিরিয়াল খুনি হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সাত শিশুকে হত্যা ছাড়াও ছয় শিশুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে।

লুসি লেটবি প্রথম পাঁচটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন ২০১৫-এর জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে এবং তখন তার সম্পর্কে সতর্কতা দেওয়ার পরও, ২০১৬ সালের জুনে আরো দুই শিশুকে হত্যা করেন তিনি। ওই ইউনিটের আরো ছয় শিশুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগেও তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। খুবই মর্মান্তিকভাবে শিশুদের হত্যা করেন তিনি। প্রতিটি শিশুকে তিনি ভিন্ন ভিন্ন পন্থায় হত্যা করেছেন, এর উদ্দেশ্য ছিল ধরা না পড়া। তিনি কোনো শিশুকে হত্যা করতে তাদের ধমনি বা শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে বাতাস প্রবেশ করিয়ে দিয়েছিলেন, কাউকে অতিরিক্ত দুধ পান করিয়েছিলেন আবার কারো শরীরে ইনসুলিন প্রবেশ করিয়ে বিষক্রিয়া ঘটিয়ে হত্যা করেছিলেন। তার অধীনে যেসব শিশু ছিল তাদের বেশির ভাগই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ফলে সহজেই সবাইকে বোকা বানাতে পেরেছেন তিনি। সবাই ভাবত প্রাকৃতিক কারণে শিশুদের মৃত্যু ঘটেছে। লুসি যে নবজাতকদের আক্রমণ করেছেন, তাদের কেউ কেউ যমজ ছিল। একটি মেয়েশিশুকে তিনি চারবারের চেষ্টায় হত্যা করেন।

ভুক্তভোগীদের পরিবার বলেছে, তারা হয়তো কখনোই সত্যিটা জানতে পারবে না কেন এমন হয়েছে। অভিভাবকদের একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘একটি শিশু হারানো মানে একটি হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা, যেটির মধ্য দিয়ে কোনো অভিভাবকই যেতে চান না।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘কিন্তু এই বিশেষ পরিস্থিতিতে একটি শিশু হারানো বা একটি শিশুর ক্ষতি করা অকল্পনীয়।’ মামলার রায়ের দিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে অস্বীকার করেন লুসি। ২০২২ সালের অক্টোবরে লুসি লেটবির বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই বিচারকে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘতম হত্যাসংক্রান্ত বিচার বলা হচ্ছে।

সূত্র : এপি