ধূমপান সম্পর্কে ইসলাম যা বলে

ধূমপান সম্পর্কে ইসলাম যা বলে

প্রতীকী ছবি।

বিশ্বের বিপুলসংখ্যক মানুষ ধূমপানে অভ্যস্ত। ধূমপানের কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হয় এবং বহু মানুষ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে ধূমপানের বিধান নিয়ে কিছুটা মতভিন্নতা আছে। কেউ এটাকে মাকরুহ বলেছেন এবং কেউ সরাসরি হারাম বলেছেন।

আল্লামা ইউসুফ কারজাভি (রহ.) হারাম হওয়ার মতটিকে প্রধান্য দিয়েছেন। তিনি তাঁর মতের পক্ষে শরিয়তের নিম্নোক্ত দলিলগুলো পেশ করেছেন।

১. নিজের ক্ষতি : ইমাম ইবনে হাজম জাহেরি (রহ.) বলেন, প্রত্যেক ক্ষতিকর বিষয় পানাহার করা হারাম। কেননা নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে ইহসান আবশ্যক করেছেন।

যে ব্যক্তি নিজের ক্ষতি করল বা অন্যের সে ইহসান করল না। আর সে ইহসান করল না সে আল্লাহর বিধান মান্য করল না।’ (আল মানহিয়্যাতুশ শরইয়্যা : ২/১২)

২. অন্যের ক্ষতি : ধূমপানকারী শুধু নিজের ক্ষতি করে না; বরং অন্যেরও ক্ষতি করে। আর ইসলাম নিজের ও অন্যের ক্ষতি কোনোটাই অনুমোদন করে না।

ইরশাদ হয়েছে, ‘কারো ক্ষতি করা যাবে না এবং কারো ক্ষতি সহ্য করা হবে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৪১)

৩. আত্মঘাতী কাজ : ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে যেকোনো আত্মঘাতী কাজ হারাম বা নিষিদ্ধ। চিকিৎসকরা এ বিষয়ে একমত যে ধূমপান একটি আত্মঘাতী কাজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রশীল।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৯)

৪. রোগ-ব্যাধির কারণ : ধূমপানের কারণে মানবদেহে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ব্যাধি সৃষ্টি হয়, যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। আর পবিত্র কোরআনের নির্দেশ হলো, ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

৫. সম্পদের অপচয় : ধূমপানের মাধ্যমে সম্পদের অপচয় হয়। আর ইসলামে সম্পদের অপচয় নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা অপচয় কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৪১)

ক্ষতিকর জিনিস হারাম হওয়ার মূলনীতি : ইমাম নববী (রহ.) ক্ষতিকর জিনিসের পানাহার নিষিদ্ধ হওয়ার মূলনীতি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেক এমন জিনিস যার পানাহার ক্ষতিকর তা পানাহার করা হারাম। যেমন কাচ, পাথর ও বিষ। প্রত্যেক এমন পবিত্র জিনিস যা পানাহারে ক্ষতি নেই তা পানাহার করা হালাল। আর যে জিনিস পবিত্র কিন্তু নোংরা বিশুদ্ধ মতানুসারে তা পানাহার করা হারাম। এমন ওষুধ যাতে সামান্য ক্ষতিকর বিষয় আছে প্রয়োজনে তা পান করা জায়েজ।’ (রওজাতুত তালিবিন, পৃষ্ঠা ৫৪৮)

আল্লাহ সবাইকে ধূমপান পরিহারের তাওফিক দিন। আমিন।