মাদারীপুরে হত্যা মামলায় ৩ জনের ফাঁসি

মাদারীপুরে হত্যা মামলায় ৩ জনের ফাঁসি

সংগৃহীত

মাদারীপুরে মোটরসাইকেল চালক শাহাদাৎ ঘরামীকে (১৮) হত্যা মামলায় ১০ বছর পর ৩ জনকে ফাসির আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৮ আগস্ট) বেলা দুইটার দিকে মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক লায়লাতুল ফেরদৌস এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার রামনগর এলাকার সুলতান শরিফের ছেলে সেন্টু শরীফ (৩৫), কমলাপুর এলাকার মান্নান ফকিরের ছেলে মিরাজ ফকির (৩০) ও মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকার মৃত জিন্নাত শেখের ছেলে ফজেল শেখ (৫০)।

মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্র জানায়, বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার বড় দুলালী এলাকার মোকসেদ ঘরামীর সেজো ছেলে শাহাদাৎ ঘরামী ভাড়ায় একটি মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করতেন। গত ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে বার্থী যাওয়ার কথা বলে শাহাদাৎ ঘরামীকে ভাড়ায় নেন প্রতিবেশী মিরাজ ও সেন্টু। পরে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে সেদিন রাতে কোন এক সময় শাহাদাৎকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে মরদেহটি তাদের আত্মীয় ফজেল শেখের মাধ্যমে মাদারীপুরের মস্তফাপুর ইউনিয়নের সিকি-নওহাটা এলাকার একটি জমিতে ফেলে চলে যায়।

এ ঘটনায় দুদিন পর নিহতের বাবা মোকসেদ ঘরামী বাদী হয়ে মিরাজ ফকির ও সেন্টু শরীফসহ অজ্ঞাতনামা আরো বেশ কয়েকজনকে আসামী করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে সদর থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক শ্যামলেন্দু ঘোষ তদন্তের পর ২০১৪ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপর আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১০ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করে। পরে বিচারিক আদালতে দীর্ঘ ১০ বছর যুক্তিতর্ক শেষে উপযুক্ত স্বাক্ষী প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন। তবে আসামিরা পলাতক থাকায় রায় ঘোষণার সময় কেউ উপস্থিত ছিল না। রাতে পরিবার সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন।

মামলার বাদী মোকসেদ ঘরামী বলেন, ‘ছেলেকে মোটরসাইকেল কিনে দেয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না। একজনের কাছ থেকে প্রতিদিন আড়াই শ টাকা ভাড়া দেয়ার চুক্তিতে মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে পরিবারের হাল ধরেছিল। সেন্টু, মিরাজ আর ফজেল মোটরসাইকেলটি লুট করে ধরা পড়ার ভয়ে আমার ছেলেকে খুন করে। আজ আদালত ওদের ফাসির রায় দিয়েছে, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট। তবে একটাই দাবি, এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।’

নিহতের মা জাহুরা বেগম বলেন, ‘একটা মোটরসাইকেলের জন্য আমার পোলাডারে ওরা মেরে ফেলেছে। আমি আজ ছেলে হত্যার রায় পেয়েছি। মরার আগে অন্তত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা দেখে মরতে চাই।’

এ ব্যাপারে মাদারীপুর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. সিদ্দিকুর রহমান সিং বলেন, ‘এটি একটি নৃশংস হত্যা মামলা। একটি গরিব ঘরের সন্তানের ভাড়ায় চালানো মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে এ ঘটনা ঘটায় আসামিরা। এদের মধ্যে আসামি মিরাজকে গ্রেপ্তার করা আদালতে আনা হলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। আজ দীর্ঘ ১০ বছর যুক্তিতর্ক শেষে আদালত এই মামলার ৩ জন অভিযুক্তকে ফাসির আদেশ দেন। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ে সন্তুষ্ট।’