বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের প্রধান স্টেকহোল্ডার বাংলাদেশ : সমুদ্রবিষয়ক সচিব

বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের প্রধান স্টেকহোল্ডার বাংলাদেশ : সমুদ্রবিষয়ক সচিব

বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের প্রধান স্টেকহোল্ডার বাংলাদেশ : সমুদ্রবিষয়ক সচিব

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমুদ্রবিষয়ক সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো: খুরশেদ আলম বলেছেন, বঙ্গোপসাগর এলাকায় শক্তিশালী অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

তিনি বলেন, 'এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো বৈরী ও একচেটিয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণে অভ্যন্তরীণ বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য এই অঞ্চলের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।’সোমবার (২৮ আগস্ট) ‘ইন্দো-প্যাসিফিক-কানাডা’স স্ট্রাটেজি অ্যান্ড বাংলাদেশ’স আউটলুক : এ ডিপার লুক ইনটু দ্য কি এরিয়াস’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।সেমিনারে আলম বলেন, বাংলাদেশ এই অঞ্চলে প্রধান সামুদ্রিক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি ও বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকে অভিন্নতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস।

সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআজিজি) এবং বাংলাদেশে কানাডার হাইকমিশন যৌথভাবে সেমিনারটি আয়োজন করে। সেমিনারে কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি এবং বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকের ওপর আলোকপাত করে কৌশল এবং এর মধ্যে সম্ভাব্য সমন্বয় চিহ্নিত করা হয়। দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন মূল্যবোধ ও স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে অংশীদারিত্ব আরো জোরদার করার দৃষ্টিভঙ্গি এবং উপায় তুলে ধরা হয়।

খুরশেদ আলম বলেন, বিশ্বে এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ বর্তমানে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী দেশ এবং বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের একটি বড় স্টেকহোল্ডার।বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক তুলে ধরে সমুদ্র বিভাগের সচিব বলেন, ‘সবার অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ একটি অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, সুরক্ষিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের স্বপ্ন দেখছে।’

বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিকে দেশের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা’ বলে মনে করে। বঙ্গোপসাগরের একটি উপকূলীয় দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি আধুনিক জ্ঞানভিত্তিক, উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য রাখে।খুরশেদ আলম বলেন, আউটলুকে কোনো অসঙ্গতি নেই এবং আগের অবস্থান থেকে সরে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।বাংলাদেশের পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশেরই যেমন আমাদের প্রয়োজন, তেমনি আমাদেরও প্রয়োজন অন্যদের।’

তিনি আরো বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক তীব্র কৌশলগত প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আধিপত্যের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।এমএইউ সচিব বলেন, প্রথাগত নিরাপত্তার বাইরে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ক্ষেত্র উন্মুক্ত করেছে বাংলাদেশ। কারণ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া অনেক সমস্যার সমাধান করা অসম্ভব।

তবে ঐতিহ্যগত নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবসময় সতর্ক অবস্থান রয়েছে।১৪ কানাডার হাইকমিশনার বলেন, কানাডার ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির প্রধান উদ্দেশ্য হলো একটি সুষ্ঠু, উন্মুক্ত, স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিকাশ ঘটানো।কানাডা তার অংশীদারদের সাথে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় কানাডার স্বার্থও রক্ষা করবে এটি।’হাইকমিশনার নিকোলস ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কানাডার সম্পৃক্ততার কৌশলগত তাৎপর্যের উপর জোর দেন এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার পারস্পরিক সুযোগের কথা তুলে ধরেন।

সেমিনারে পিইউএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইমাইক্রোগ্রাফ বিজনেস সলিউশনের সিইও নূর মাহমুদ খান, মমতাজুল কে এন আহমেদ, হেড অব কর্পোরেট মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংক; সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদসহ বিশেষজ্ঞ প্যানেল তাদের মতামত তুলে ধরেন।সেমনিারের সভাপতি এনএসইউ এর ভিসি অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বিদেশে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত সুযোগ সৃষ্টি করতে শিল্প ও ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়নকদের গৃহীত কৌশলগত পদ্ধতির উপর আলোকপাত করে একটি বিস্তৃত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বিভিন্ন জাতির মধ্যে বহু-মেরুতা এবং বিশ্বায়ন অংশীদারিত্বের গতিশীলতা সম্পর্কে গভীর বিশ্লেষণ করেন।সেমিনার সঞ্চালনা করেন এনএসইউ'র সিপিএস ও এসআইপিজি'র পরিচালক প্রফেসর এস কে তৌফিক এম হক।কানাডার সদ্য চালু করা ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মূল অংশ বাংলাদেশ। উত্তর আমেরিকার দেশটি মনে করে এটি এই অঞ্চলে একটি দীর্ঘমেয়াদি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে নতুন যুগের সূচনা করবে এবং বাংলাদেশ সেই কৌশলটির একটি মূল অংশ।

বিশ্ব যখন একটি পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত গতিপথের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, কানাডা ও বাংলাদেশ তাদের মূল্যবোধের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে এবং তাদের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোকে প্রসারিত করছে।সেমিনারের বিষয়বস্তুর আলোকে পরিবর্তিত বিশ্ব বাস্তবতার ধারায় বাংলাদেশের সাথে দৃঢ় অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে কানাডার আকাঙ্ক্ষা গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশ-কানাডা অংশীদারিত্বকে আগের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল আগামী দশকে এই অঞ্চলে কানাডা সরকারের সম্পৃক্ততার জন্য একটি বিস্তৃত কাঠামো গড়ে তুলবে।

কৌশলটির প্রথম পাঁচ বছরে নতুন উদ্যোগ এবং প্রায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন বিনিয়োগ রয়েছে।কানাডা সরকার ২০২৬ সালে এ উদ্যোগের বিস্তারিত প্রকাশ করবে। এতে ২০২৭ থেকে ২০৩২ অর্থবছরের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ ও বিনিয়োগের বিষয়গুলো থাকবে।ইন্দো-প্যাসিফিক ৪০ টিরও বেশি অর্থনীতি নিয়ে গঠিত এবং এটি বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অঞ্চল।

এটি কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম আঞ্চলিক রপ্তানি বাজার এবং ব্যবসায়িক অংশীদার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে); ২০২১ সালে এটি বার্ষিক দ্বি-মুখী কৃষি-খাদ্য এবং সিফুড বাণিজ্যে ২৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, যা এই খাতে কানাডার মোট রফতানির ২৪ শতাংশ।ইন্দো-প্যাসিফিক সমস্ত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কার্যকলাপের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এবং বিশ্ব জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ।২০৩০ সালের মধ্যে এটি বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্তের দুই-তৃতীয়াংশের আবাসস্থল হবে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলটি বিশ্ব অর্থনীতির অর্ধেকেরও বেশি হবে।

সূত্র : ইউএনবি