সাভারে বেড়েছে কুকুরের উপদ্রব

সাভারে বেড়েছে কুকুরের উপদ্রব

সংগৃহীত

ঢাকার সাভারে হঠাৎ করে কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় কুকুরের কারণে লোকজন রাস্তায় বের হলেই ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। প্রতিদিন কুকুরে আক্রান্ত রোগী ভিড় করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পৌর এলাকাসহ এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কুকুরের কামড় ও আঁচড়ে আক্রান্ত হয়ে মানুষ চিকিৎসার জন্য আসছেন।

উপদ্রব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রতিদিনই ৫ থেকে ১০ জন পর্যন্ত কুকুরে কামড়ে আক্রান্ত রোগী আসছে চিকিৎসা নিতে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ৭৪০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। আইনি বাধ্যবাধকতায় কুকুর নিধন করতে না পারা এবং সময়মতো টিকার আওতায় না আনার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জলাতঙ্ক রোগের আতঙ্ক ভর করছে। তাই তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন তারা।

বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত সাভারের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩ জন কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, দিনে গড়ে ৫ থেকে ১০ জন কুকুরে আক্রান্ত রোগী আসে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক বলেন, ইদানীং রোগী বেশি আসছে। অনেক সময় ৮-১০ জন রোগীও আসে। বেশিরভাগ রোগীই পৌর এলাকার বাসিন্দা।

সরেজমিনে সাভার পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, সম্প্রতি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নামা বাজার খেয়া ঘাট এলাকায় একদিনে ১১ জনকে কামড়ে দেয় ৪-৫টি কুকুরের একটি দল। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাদেরকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। এছাড়া সাভারের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর। অধিকাংশের শরীরে লোম নেই। শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত রয়েছে।

 

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. জুয়েল নামে স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ী ঢাকা মেইলকে বলেন, গত সপ্তাহের শেষের দিকে আমাদের এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একদিনে অন্তত ১১ জনকে কুকুরের একটি দল কামড়ে দিয়েছে। এদের মধ্যে ৭-৮ বছরের বেশ কয়েকজন শিশু ছিল। যাদের নাকে ও মুখে কামড়ে দিয়েছে কুকুরের দল।

আহত দক্ষিণ দরিয়ারপুর এলাকার বাসিন্দা শম্পা বালা (২৮) ঢাকা মেইলকে বলেন, সেদিন বিকেলে হেঁটে যাইতেছে। দেখি একটা কুকুর আরেকটা কুকুররে কামরাইতাছে। আমি এইডা দেইখা তাড়াতাড়ি হাঁটা দিছি। হুট কইরা পেছন থেইকা একটা কুকুর আমার পায়ে কামড় দিয়া মাংস ছিড়া নিয়া দৌড় দিছে।

 

এদিকে, পৌরসভা সংলগ্ন গেন্ডা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই এলাকার ওয়াই ডব্লিও সি স্কুল সংলগ্ন সড়ক, গাবতলা, পুকুর পাড় কাজি অফিস, আন্দপুর ও ইমান্দিপুর সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৮ থেকে ১০টি কুকুরের দল রয়েছে। এই প্রতিটি দলে ৫ থেকে ৮টি কুকুর রয়েছে। বিভিন্ন অলিগলিতে সকাল থেকেই ঘুরে বেড়ায় এসব কুকুরের দল। অন্ধকার নামলে এগুলোর উপদ্রব বেড়ে যায়। পথচারীদের রীতিমতো তাড়া করে কুকুরগুলো। যদি কোনো মহল্লায় কোনো অনুষ্ঠান থাকে তাহলে তো কথায় নেই! কুকুরদের দাপাদাপিতে আমন্ত্রিত ব্যক্তিরাই আতঙ্কে ভোগেন।

স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম ফয়েজউদ্দিন খান শিহাব ঢাকা মেইলকে বলেন, কুকুরের উপদ্রবে আমরা সবাই ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ ছোট ছোট বাচ্চারা এক প্রকার ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ভয়ে একা বাসার নিচে নামতে ভয় পাচ্ছে তারা। সন্ধ্যার পর একা সড়কে বের হলেই ধাওয়া দিচ্ছে কুকুর। সাইকেল, মোটরসাইকেল দেখলে দল বেঁধে ছুটে আসে। আমার খামারের মুরগী ও ছাগলের ওপরও হামলা চালিয়েছে কয়েকদফা। এ এক ভীতিকর পরিবেশ। সংশ্লিষ্টদের প্রতি দ্রুত বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি। অন্যথায় এটি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।

 

এদিকে, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা ঢাকা মেইলকে বলেন, সাভার পৌর এলাকাসহ এর আশপাশ থেকে প্রতিদিনই কুকুরের কামড়ে আহত অন্তত ৫-৮ জন ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। এরমধ্যে গত মে মাসে ১৭৫ জন, জুন মাসে ১৫৮ জন, জুলাই মাসে ১৮২ জন এবং চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ২২৯ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আমাদের কাছে আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন রয়েছে।

কুকুরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে সাভার পৌরসভার মেয়র আবদুল গনি ঢাকা মেইলকে বলেন, পৌরসভা একসময় কুকুর নিধন কর্মসূচি চালাত। কিন্তু আদালতের নির্দেশের কারণে তা আর করা যাচ্ছে না। তবে কুকুরের উপদ্রব খুব বেশি আকারে বেড়েছে। কুকুরের বংশবিস্তারও রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আক্রান্ত কেউ আমাদের কাছে ভ্যাকসিন নিতে আসলে আমরা তাদের ভ্যাকসিন দিয়ে দিচ্ছি। কেউ ফেরত যাচ্ছেন না।

সূত্র: ঢাকা মেইল