পেটেন্ট আমলে না নিলে প্যারাসিটামলের দাম হবে ‘২ হাজার টাকা’

পেটেন্ট আমলে না নিলে প্যারাসিটামলের দাম হবে ‘২ হাজার টাকা’

সংগৃহিত ছবি।

মেধাসম্পদ নিয়ে সচেতন না হলে এবং পেটেন্ট আমলে না নিলে প্যারাসিটামলের দাম ২ হাজার টাকা হবে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা।

বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর আয়োজিত এক সেমিনারে একথা বলেন শিল্পসচিব।

তিনি বলেন,

মেধাসম্পদ নিয়ে সচেতন হতে হবে। না হলে প্যারাসিটামলের দাম হবে ২ হাজার টাকা। কারণ, এখন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে পেটেন্ট ফ্রি পায়। ২০২৬ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশন শেষ হলে এই পেটেন্ট সুবিধা পাওয়া যাবে না।

 

আগামী পাঁচ বছরকে সামনে রেখে ওষুধের এই পেটেন্ট নিয়ে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে শিল্পসচিব বলেন, ‘শুধু ফ্রি পেটেন্ট নিয়ে ওষুধ তৈরি করলে হবে না। এর পাশাপাশি গবেষণায়ও মনোযোগ দিতে হবে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘মেধাসম্পদ সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন এবং চর্চা করেন। বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে দেখতে চাইলে মেধাসম্পদ সংরক্ষণ করতে হবে।’

 

নতুন পণ্য আবিষ্কারের ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের কথা তুলে ধরে জাকিয়া সুলতানা বলেন,

পুরুষদের আবিষ্কার নিয়ে আমরা যা জানি, নারীদের অবদান ও আবিষ্কার নিয়ে আমরা তা ঠিক জানি না। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নারীদের অবদানকেই তুলে ধরা হয়েছে।

শিল্প সচিব বলেন, ‘মেধাসম্পদ দিবস উদযাপনের মাধ্যমে নয়, পরিপালনের মাধ্যমে এটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। ২০২৬ সালে এলডিসির আগে মেধাসম্পদের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে হবে। নাহলে বাংলাদেশকে বড় রকমের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।’

 

এছাড়া ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের পেটেন্ট অধিদফতর কাজ করতে পারছে না বলেও জানান জাকিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, দেশের পেটেন্ট আইন নিয়ে কাজ চলছে। এরইমধ্যে অনেকগুলো আইন প্রণয়ন হয়েছে। বাকি আইনগুলোও নতুন করে প্রণয়নের কাজ চলছে।

 

তিনি বলেন, ‘বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি নিয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য দেশে কোনো আদালত নেই। সেটি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। এ সংক্রান্ত একটি টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশের পুলিশ, প্রশাসন, কাস্টমস মেধাসম্পদ নিয়ে তেমন কিছুই জানেন না। তাদেরকেও প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

 

এর আগে বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে সাম্প্রতিক সময়ে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৭টি পণ্যের সনদ দেয়া হয়। নিবন্ধন পাওয়া সাতটি জিআই পণ্যের সনদ সংশ্লিষ্টদের হাতে তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

 

শিল্পমন্ত্রী বলেন,

বাংলাদেশ পেটেন্ট আইন, ২০২২, বাংলাদেশ শিল্প-নকশা আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এরইমধ্যে ইলিশ, জামদানি, রংপুরের শতরঞ্জজিসহ ১৭টি পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি লাভবান হতে পারে। বাংলাদেশে মেধাসম্পদ সংরক্ষণ ব্যবস্থা যত শক্তিশালী হবে, এদেশে বৈদশিক বিনিয়োগ তত বাড়বে।

 

 

তিনি বলেন, ‘নতুন উদ্ভাবন ও সৃষ্টিশীলতার প্রকাশই মেধাসম্পদ আর এই উদ্ভাবন ও সৃষ্টিশীলতাকে উৎসাহিত করার সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। জাতি হিসেবে আমরা যত বেশি জ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবন ও সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগাব, তত বেশি সমৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হতে পারব। একবিংশ শতাব্দীতে এসে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভুক্ত হয়েছি, এই উন্নয়নশীলতা ধরে রাখতে না পারলে আমরা আবার পিছিয়ে যাব।’

 

এতে টেকসই উন্নয়ন ও ধারাবাহিক অগ্রগতির জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করে উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহ দিতে হবে ও মানব কল্যাণের জন্য সৃষ্ট উদ্ভাবনকে সহজলভ্যভাবে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে বলে জানান শিল্পমন্ত্রী। সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমাকর্স অধিদফতরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।