বিনয় জান্নাতের সোপান

বিনয় জান্নাতের সোপান

ফাইল ছবি।

রবের প্রকৃত বান্দা হতে চাইলে জীবনের সর্বক্ষেত্রেই প্রয়োজন- বিনয়। ইবাদত-বন্দেগি থেকে শুরু করে ঘরে-বাইরে সবার সঙ্গে আচরণে সে বিনয় অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি কামনায় নিজেকে নিচু করে দেয়ার এ প্রশিক্ষণে যে প্রশিক্ষিত হতে পারবে, দুনিয়া ও আখেরাতে অযাচিতেই সম্মান তার কাছে এসে ধরা দেবে। দুনিয়ার মানুষের ভালোবাসায় সে সিক্ত হবে। মানুষ তাকে খুব সহজেই আপন করে নিবে, কাছে টানবে। কারণ বিনয়ী মানুষকে সবাই ভালোবাসে। আর এ বিনয় যার যতটা হাসিল হবে, বান্দা হিসেবে সে ততটাই সফল হবে। আল্লাহ পাকের বিধিবিধানের সামনে সে ততটাই নিজেকে সঁপে দিতে পারবে। শোকর আর কৃতজ্ঞতায় তার হৃদয়-মন ততটাই আপ্লুত হবে। বাহ্যত নিজের শ্রমে-ঘামে কিংবা অর্থ-মেধায় অর্জিত সফলতাকেও তখন সে আল্লাহর দান বলে বিশ্বাস করবে। এ বিনয় যখন কারও হাসিল হবে, তখন তার ওঠা-বসায় কথা-বার্তায় এমনকি হাঁটা-চলায়ও এ বিনয় প্রকাশ পাবে। আল্লাহ তাআলার প্রকৃত সেই বান্দাদের বৈশিষ্ট্যাবলি পবিত্র কুরআনে এভাবে উল্লেখিত হয়েছে- রাহমান’-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে... । (সূরা ফুরকান (২৫) : ৬৩)।

আমাদের প্রিয় নবিজি, মানুষের মাঝে তিনি ছিলেন অনেক বিনয়ী। বিনয়ের সর্বোচ্চ মাত্রা প্রদর্শন করে মানুষের সাথে মিলিত হতেন। তিনি তাঁর আচার -আচরণে বিনয় ও নম্রতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। জায়গা করে নিয়েছেন মানুষের হৃদয়ে। এই রুগ্ন পৃথিবীকে বারবার তাঁর কাছেই ফিরে আসতে হবে। তাঁর আদর্শের সাহচর্য গ্রহণ করতে হবে। কেমন ছিলেন তিনি? কী ছিল তাঁর জীবনাদর্শ? এককথায় এ প্রশ্নের জবাব- তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। (সূরা কলাম (৬৮) : ৪)। সমাজের অসহায় ও ন

রবের প্রকৃত বান্দা হতে চাইলে জীবনের সর্বক্ষেত্রেই প্রয়োজন- বিনয়। ইবাদত-বন্দেগি থেকে শুরু করে ঘরে-বাইরে সবার সঙ্গে আচরণে সে বিনয় অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি কামনায় নিজেকে নিচু করে দেয়ার এ প্রশিক্ষণে যে প্রশিক্ষিত হতে পারবে, দুনিয়া ও আখেরাতে অযাচিতেই সম্মান তার কাছে এসে ধরা দেবে। দুনিয়ার মানুষের ভালোবাসায় সে সিক্ত হবে। মানুষ তাকে খুব সহজেই আপন করে নিবে, কাছে টানবে। কারণ বিনয়ী মানুষকে সবাই ভালোবাসে। আর এ বিনয় যার যতটা হাসিল হবে, বান্দা হিসেবে সে ততটাই সফল হবে। আল্লাহ পাকের বিধিবিধানের সামনে সে ততটাই নিজেকে সঁপে দিতে পারবে। শোকর আর কৃতজ্ঞতায় তার হৃদয়-মন ততটাই আপ্লুত হবে। বাহ্যত নিজের শ্রমে-ঘামে কিংবা অর্থ-মেধায় অর্জিত সফলতাকেও তখন সে আল্লাহর দান বলে বিশ্বাস করবে। এ বিনয় যখন কারও হাসিল হবে, তখন তার ওঠা-বসায় কথা-বার্তায় এমনকি হাঁটা-চলায়ও এ বিনয় প্রকাশ পাবে। আল্লাহ তাআলার প্রকৃত সেই বান্দাদের বৈশিষ্ট্যাবলি পবিত্র কুরআনে এভাবে উল্লেখিত হয়েছে- রাহমান’-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে... । (সূরা ফুরকান (২৫) : ৬৩)।

আমাদের প্রিয় নবিজি, মানুষের মাঝে তিনি ছিলেন অনেক বিনয়ী। বিনয়ের সর্বোচ্চ মাত্রা প্রদর্শন করে মানুষের সাথে মিলিত হতেন। তিনি তাঁর আচার -আচরণে বিনয় ও নম্রতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। জায়গা করে নিয়েছেন মানুষের হৃদয়ে। এই রুগ্ন পৃথিবীকে বারবার তাঁর কাছেই ফিরে আসতে হবে। তাঁর আদর্শের সাহচর্য গ্রহণ করতে হবে। কেমন ছিলেন তিনি? কী ছিল তাঁর জীবনাদর্শ? এককথায় এ প্রশ্নের জবাব- তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। (সূরা কলাম (৬৮) : ৪)। সমাজের অসহায় ও নি¤œশ্রেণির লোকদের কাছেও তিনি ছিলেন আপনজনদের চেয়েও বড় আপন। খুব সাধারণভাবে তিনি মানুষের সাথে মিলিত হতেন। যে কেউ যখন তখন তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। কেউ কথা বলতে গিয়ে ভয় পেলে তিনি তাকে অভয় দিতেন। আবু মাসউদ রা. বলেন, এক লোক নবীজীর সাথে কথা বলতে এল। তখন ভয়ে সে কাঁপছিল। নবীজী বললেন, শান্ত হও। আমি কোনো রাজা-বাদশা নই। আমি একজন সাধারণ নারীর সন্তান। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৩১২)।

তিরমিজির একটি বর্ণনায় উঠে এসেছে তাঁর মহানুভবতার কথা, বর্ণিত হয়েছে তার কোমলতার কথা। ‘তিনি ছিলেন প্রশস্ত হৃদয়-মহানুভব। সত্যবাদিতায় সর্বাগ্রে, নম্রতা আর কোমলতায় অনন্য, আচার- আচরণে অভিজাত। প্রথম যে তাঁকে দেখত ভয় করত, কিন্তু যে-ই তাঁর সঙ্গে মিশতো তাঁকে ভালোবাসত। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৬৩৮)।

বিনয় জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য : জান্নাতী ও জাহান্নামীদের স্বভাব-চরিত্রের পরিচয় দিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতবাসীদের ব্যাপারে বলব না? তারা হচ্ছে দুর্বল, নরম লোক, তাদের কেউ যদি আল্লাহ তাআলাকে কসম দিয়ে কিছু বলে, আল্লাহ অবশ্যই তার কসম রক্ষা করবেন। আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে বলব না? ওরা হচ্ছে রূঢ় ও কর্কশ স্বভাবের, উদ্ধত, আত্মম্ভরী লোক। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৯১৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৫৩)।

তাচ্ছিল্য অহংকারের অন্তর্ভুক্ত : রাসুল সা. বলেন, যার মধ্যে এক কণা পরিমাণ কিবির আছে সে জান্নাতে যাবে না। একজন জিজ্ঞাসা করলেন, মানুষ পছন্দ করে- তার কাপড়টা সুন্দর হোক, জুতাটা সুন্দর হোক? তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা সুন্দর, সৌন্দর্য তিনি পছন্দ করেন। কিবির হচ্ছে সত্যকে অস্বীকার করা আর মানুষকে তাচ্ছিল্য করা। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯১)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারেরা! তোমাদের এক সম্প্রদায় যেন অন্য সম্প্রদায়কে তাচ্ছিল্য না করে। হতে পারে এরা ওদের চেয়ে ভালো। (তোমাদের) নারীদেরও এক শ্রেণি যেন অপর শ্রেণিকে তাচ্ছিল্য না করে। হতে পারে এরা ওদের চেয়ে ভালো। তোমরা পরস্পরকে দোষারোপ করো না। একে অপরকে মন্দ উপাধীতে আখ্যায়িত করো না। ঈমানের পর ফাসিক-নাম কতই না মন্দ! যারা তাওবা করে না, তারাই তো জালিম। (সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১১)।

বদমেজাজিদের কেউ পছন্দ করে না : যারা উগ্র, বদমেজাজি। নিজের স্বার্থরক্ষায় অনড়-অটল। নিজের বড়ত্ব প্রমাণে ব্যস্ত। বড়কে সম্মান করে না। ছোটদের স্নেহ করে না। তারা নিজেরা নিজেদের হিরো ভাবলেও পরিবার-পরিজন, আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধব কারও প্রিয়পাত্র হতে পারে না। সবাই তাদের আড়চোখে দেখে, যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। তাই নির্জনে তারা মানসিক অস্থিরতায় ভোগে। অতএব আমাদের জীবনকে সুখময় করে তুলতে, সবার প্রিয় পাত্র হতে, সবশেষে জান্নাতিদের দলে শামেল হতে অবশ্যই আমাদের বিনয়ী হতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুক।