‘৫ শতাধিক ফাইল গায়েব’ মায়ের সঙ্গে অফিসে গিয়ে জাহাঙ্গীর বললেন

‘৫ শতাধিক ফাইল গায়েব’ মায়ের সঙ্গে অফিসে গিয়ে জাহাঙ্গীর বললেন

ছবিঃ সংগৃহীত।

বৃহত্তম সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণের পর মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) প্রথম অফিস করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত প্রথম নারী মেয়র জায়েদা খাতুন। তিনি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন এবং অফিসের কাজের অগ্রগতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মকর্তা কর্মচারীদের পরামর্শ দেন। এদিন বেশকিছু ফাইলের খোঁজ পাননি তিনি। এসময় মায়ের সঙ্গে ছিলেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

 

কাধিক সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি শহরের নগর ভবনে তার কার্যালয়ে আসেন এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত দিন কাটান। এদিন তিনি অফিসে এসে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের কথা শুনেন। এসময় নগরবাসীর স্বার্থে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কার্যক্রম আরও বেগবান করার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জায়েদা খাতুন। এসময় তিনি কয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে অনুপস্থিত দেখতে পান। এ ছাড়াও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্রের খোঁজ পাননি সদ্য দায়িত্বভার গ্রহণ করা এই নগরমাতা।

নগর ভবনে নয়া মেয়রের আগমনের খবর পেয়ে আশপাশের নারী-পুরুষ নগরবাসী ভিড় জমান। এসময় মেয়র জায়েদা খাতুন তাদের সঙ্গেও কথা বলেন। পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন সমস্যা শুনে সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি। দিনভর অফিসে অবস্থানকালে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ফাইলে স্বাক্ষর করেন। এ ছাড়াও তিনি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন এবং অফিসের কাজের অগ্রগতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মকর্তা কর্মচারীদের পরামর্শ দেন। তিনি গাজীপুর সিটিকে আধুনিক ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে সবাইকে সততার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেন। বুধবার তিনি সিটি করপোরেশনের কর নির্ধারণ ও আদায়কারী কর্মকর্তা, লাইসেন্স অফিসারসহ সিআরও কর্মকর্তাদের সভা আহ্বান করেছেন। কীভাবে কাজ করলে কাজের আরও ভালো অগ্রগতি হবে সভায় সেসব বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এদিনের অফিসের কাজ শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি অফিস ত্যাগ করেন।

এসময় সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি ২০২১ সালে সিটি করপোরেশনের ফান্ডে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রেখে গেছি। আমার মা জায়েদা খাতুন দায়িত্ব নেওয়ার সময় তারা ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা রেখে গেছে। এর মধ্যে ৭শ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। গত ২১ মাসে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং লুটপাট হয়েছে। তদন্ত ও হিসাব করলে বিস্তারিত জানা যাবে। এ ছাড়াও ৫ শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গায়েব করা হয়েছে, যেগুলোর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমানের নেতৃত্বে তার লোকজন এসব অপকর্ম করেছে। এসব কারণে সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তা ছাড়া নয়া মেয়রের অফিস পরিচালনার প্রথম দিন মঙ্গলবার কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত রয়েছেন। তারা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের সম্পর্কেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। নগরবাসী পর্যায়ক্রমে সেসব বিষয়ে জানতে পারবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জায়েদা খাতুন নির্বাচিত হন। নির্বাচনে তিনি নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করেন। নির্বাচনে ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। জায়েদা খাতুন দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী মেয়র এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নারী মেয়র। এ ছাড়াও দেশের ইতিহাসে জায়েদা খাতুনই প্রথম যার পূর্বসূরি মেয়র ছিলেন তারই ছেলে জাহাঙ্গীর আলম।

এর আগে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন জায়েদা খাতুনের ছেলে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে মেয়র জাহাঙ্গীরকে ২০২১ সালের ১৯ নবেম্বর দল থেকে বহিষ্কার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় মামলা দায়ের করা হয়। এরপর ২৫ নবেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তাকে বহিষ্কারের পর নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তবে জাহাঙ্গীর আলম তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে বলেছেন একটি মহল চক্রান্ত করে তার বিরুদ্ধে এসব করেছে।