নারী মাদক কারবারির কাছে ঘুষ চাওয়া চারঘাটের ওসি প্রত্যাহার

নারী মাদক কারবারির কাছে ঘুষ চাওয়া চারঘাটের ওসি প্রত্যাহার

নারী মাদক কারবারির কাছে ঘুষ চাওয়া চারঘাটের ওসি প্রত্যাহার

রাজশাহীর চারঘাট থানা ওসির ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার পর টনক লড়ে প্রশাসনের। অবশেষে তাকে প্রত্যাহার করে রাজশাহী পুলশি লাইনসে সংযুক্ত করা হয়ছে।মাদক কারবার করতে দেয়ার জন্য ৭ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন রাজশাহী চারঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুল আলম। তাকে এক আদেশে চারঘাট থানা থেকে প্রত্যাহার করে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এক গৃহবধূর কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে ফাঁস হয়। পরে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।

এছাড়া অভিযোগসহ পেনড্রাইভে করে সেই অডিও রেকর্ড পুলিশ সুপারে কাছে দাখিল করা হয়। পরে ওসি মাহবুবুল আলমকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়।

রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো: রফিকুল আলম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, ঘটনাটি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে চারঘাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছয় মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের কথোপকথনের ওই অডিও রেকর্ড সরাসরি ও ডাকযোগে পুলিশের আইজিপি ও রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির কাছেও পাঠানো হয়েছে। 

ওই নারীর নাম সাহারা খাতুন (২৮)। তিনি চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের চামটা গ্রামের আবদুল আলিম ওরফে কালুর স্ত্রী। কালু জেলা ডিবি পুলিশের একটি মামলায় ছয় মাস ধরে কারাগারে আটক আছেন।

সাহারা খাতুনের অভিযোগ, তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করেন। চারঘাট উপজেলায় তার স্বামীর দেয়া তথ্যে অনেক মাদক কারবারিকে র‍্যাব ও পুলিশ আটক করেছে। এতে তার স্বামী ও পরিবারের ওপরে চারঘাটের মাদক কারবারিরা ক্ষিপ্ত হন। তার স্বামীকে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্বামীকে গ্রেফতারের পর মাদক কারবারিরা তাদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। 

গত ১২ সেপ্টেম্বর ওসিকে ফোন দিয়ে তিনি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। ওসি তাকে পরদিন থানায় আসতে বলেন। থানায় গেলে ওসি পাশেই তার কোয়ার্টারে ডেকে নেন তাকে। এ সময় ওসি তার সাথে ওইসব কথা বলেন। কথোপকথন কালে ওই নারী তা কৌশলে রেকর্ড করে রাখেন।

৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনে ওই নারীর উদ্দেশে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, 'নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া কারো কথা শুনি না। ' চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক কারবারিদের ধরে মামলা দেয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসির সমালোচনা করেন তিনি। এরপর বলেন, ২ লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেবো। এরপর গৃহবধূ সাহারাকে ওসি বলেন, আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছেন (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়াতে পারব না। 

এরপর ওসি বলেন, এখনো তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছো। ৭ লাখ টাকা লাগবে, কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সে রকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই। 

ওসি আরো বলেন, মুক্তা (চারঘাটের মাদক সম্রাট নামে পরিচিত) অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবেন না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেবো। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করবো। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে। 

রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের আবারও সমালোচনা করে ওসিকে বলতে শোনা যায়, 'নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারব না। কথা সব ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও ২ লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে। 

ওসি মাহবুবুল আরো বলেন, ৫ লাখ আর ২ লাখ ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দু'জনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দু'জনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেবো। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই ওপরে কাজ করবে।অডিওতে গৃহবধূ সাহারার 'সুন্দর চেহারা' নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় চারঘাট থানার এই ওসিকে।