দরবেশ বাবা পরিচয়ে প্রতারণা, গ্রেফতার ২

দরবেশ বাবা পরিচয়ে প্রতারণা, গ্রেফতার ২

ছবিঃ সংগৃহীত।

‘দরবেশ বাবা’ পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতাররা হলেন- চক্রের মূল হোতা মো. হাসেম ও তার সহযোগী তানজিল আহমেদ। 

হাসেম নিজেকে সৌদি আরবের মসজিদে নববীর ইমাম পরিচয় দিয়ে মানুষের সমস্যার সমাধান করার কথা বলে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করেছেন। রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সিআইডি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, চক্রের মূল হোতা হাসেম প্রথমে মোবাইল ব্যাংকি অ্যাকাউন্ট বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে ছোট ছোট অংকের টাকা আত্মসাৎ করতেন। এরপর বড় অংকের টাকা নেওয়ার সময় তানজিল আহমেদকে ভুক্তভোগী সরকারি কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগমের কাছে পাঠিয়ে একসঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ লাখ হাতিয়ে নিতেন। এভাবে কয়েক ধাপে তারা আনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে প্রায় সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে হাসেমকে ভোলার বোরহানুদ্দিন থেকে গ্রেফতার করা হয়।

সিআইডি জানায়, আনোয়ারা বেগম (৫৯) একজন অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তার তিন ছেলে-মেয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত, যারা দেশের বাইরে থাকেন। তার স্বামী দেশের একজন নামকরা চিকিৎসক। চাকরি থেকে অবসরের পর আনোয়ারা দিনের অধিকাংশ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করেন। এমন অবস্থায় হঠাৎ একদিন ফেসবুক বিজ্ঞাপনে দেখেন- একজন সুন্দর সৌম্য চেহারার দরবেশ বেশধারী ব্যক্তি নিজেকে সৌদি আরবের মসজিদে নববীর ইমাম পরিচয় দিয়ে মানুষের সমস্যা সমাধানের কথা বলছেন। একপর্যায়ে তার প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তার বিকাশ নম্বরে একটা বড় অ্যামাউন্টের টাকা পাঠাতে বলেন। এবাবে আনোয়ারা বেগমকে ফোন করে বিভিন্ন অজুহাতে ও ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের প্রলোভন দেখিয়ে ধাপে ধাপে প্রায় ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এক সময় আনোয়ারা বেগম যখন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন, তখন প্রতিকার পাওয়ার জন্য মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন।

সিআইডি জানায়, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে হাসেম জানায়, তিনি  ২০০৫ সাল থেকে এ ধরণের প্রতারণার কাজ করছেন। প্রথম দিকে বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিতেন। ২০১৬ সাল থেকে পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি তিনি ইউটিউব ও ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করেন। ফেসবুকে চার লাখ টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন ও পোস্ট বুস্ট করেন। মূলত সৌদি আরব, দুবাই, ওমান, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত স্বল্প শিক্ষিত প্রবাসী বাঙালীরা তার টার্গেট। এছাড়াও ইউরোপের ইতালি ও ফ্রান্সে বিজ্ঞাপন প্রচার করতেন তিনি। এভাবেই অনেক মানুষের কাছে ‘দরবেশ বাবা’ পরিচয় দিয়ে কথা বলে তাদের ভয়-ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিতেন। হাসেম হিন্দি ও আরবিসহ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারেন, যা তিনি প্রতারণায় ব্যবহার করতেন।

সিআইডি জানায়, ফ্রান্স প্রবাসী ইমাম হোসেনের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকার লটারি জিতিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় হাসেম। এছাড়া এক ইতালি প্রবাসীর কাছ থেকে লটারি ও জুয়ায় টাকা জিতিয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।