কুষ্টিয়ায় ভাঙনের মুখে ৫ যুগ আগের স্কুল

কুষ্টিয়ায় ভাঙনের মুখে ৫ যুগ আগের স্কুল

সংগৃহীত

কুষ্টিয়ায় পদ্মার চরাঞ্চলে শিক্ষার আলো জ্বালানো প্রথম স্কুল চর ঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে। পদ্মা নদী থেকে আর মাত্র ৫ মিটার দূরে আছে বিদ্যালয়টি। স্কুলের দুপাশে ইউ প্যাটার্নে ভেঙে বেশখানিক ঢুকে পড়েছে প্রমত্তা নদী। যেকোনও মুহূর্তে বিদ্যালয়টি ভেঙে নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা পরিস্থিতি ঘুরে দেখলেও পানি ও স্রোতের চাপ বেশি থাকায় এখন কিছুই করতে পারছেন বলে জানিয়েছেন। তবে স্কুলটি যেহেতু আগামী জাতীয় নির্বাচরে ভোটকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত সেই কারণেও এটি চালু রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছেন জেলা প্রশাসন। 

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে চর সাদীপুর ইউনিয়নকে আলাদা করে রেখেছে পদ্মা নদী। চরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য চর ঘোষপুরে ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৩ নং চর ঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। পদ্মা নদী থেকে বেশ দূরে প্রতিষ্ঠা করা হলেও গত ২০ বছর ধরে ভাঙতে ভাঙতে নদী এখন বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে। এরই মধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে স্কুলের পুরাতন ভবনটি। এখন যে ভবনটি দাড়িয়ে আছে এটি ২০০০ সালে নির্মাণ করা। এবছর ইউ প্যাটার্নে ভাঙতে ভাঙতে স্কুল গ্রাস করতে দুই পাশ থেকে এগিয়ে গেছে নদী। 

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান বলেন, আর মাত্র ৫মিটার দূরে আছে স্কুলটি। এখন নদীতে পানি ও স্রোত বেশি থাকায় জিও টিউব বা জিও ব্যাগ ফেলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন এখানে পানি পরিমাপ করে উচ্চতা ১০ মিটার আরএল পাওয়া গেছে। কমে আসলে জিও টিউব ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো। শুধু ঘোষপুরে এই বিদ্যালয়ের কাছেই নয়, কুষ্টিয়ার অন্তত: ১০টি পয়েন্টে পদ্মানদী ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসলি জমি। এসব ভাঙন প্রতিরোধে ব্যাবস্থা নিচ্ছেন তারা।

চর ঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল আওয়াল জানান, গত দুই দিনে পানি কিছুটা কমেছিল। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) আবার বেড়ে গেছে। স্কুলে আজও পাঠদান চালু রয়েছে, তবে কতদিন রাখা যাবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।

চর সাদীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেসের আলী খাঁ বলেন, শুধু এই স্কুল নয়, এখানে মসজিদ, রাস্তা ও কৃষকের জমি ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে নদী। এখানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মানের দাবি জানান তিনি।  স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার বলেন, আমাদের সন্তানদের পড়ার জন্য এই এলাকায় এই একটিই বিদ্যালয়। এটি ভেঙে গেলে ছেলেমেয়েরা কোথায় লেখাপড়া করবে? তাহমিনা খাতুন দাবি করেন স্কুলটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার। তিনি বলেন, নদীর ঠিক কূলে স্কুল থাকলে শিশুরা নদীতে পড়ে ঢুবে যেতেও পারে।

বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চিন্তা জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজার। তিনি বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র হিসেবে এটি নির্বাচন করা হয়েছে। এ কারণে এই বিদ্যালয়টি আমাদের কাছে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি যাতে জরুরি ভিত্তিতে এখানে কাজ করা হয়। পাশাপাশি আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি দরকার হলে বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।