২২ বছরেও শেষ হয়নি শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার বিচার

২২ বছরেও শেষ হয়নি শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার বিচার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ফাইল ফটো

২০০১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সিলেটে আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল। এতে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার। এর আগের রাতে জনসভাস্থল আলিয়া মাদরাসা মাঠের পার্শ্ববর্তী এলাকায় এক বিএনপি নেতার বাসায় গ্রেনেড তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হয় দুই জঙ্গি। ওই গ্রেনেড তৈরি করা হচ্ছিল শেখ হাসিনার জনসভায় বিস্ফোরণের জন্য।

এই ঘটনায় হওয়া মামলাটি বর্তমানে সিলেটের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে আছে। আদালতে সর্বশেষ সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছিল গত বছরের ১৬ জুন। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। তবে চলতি বছরের ১৯ অক্টোবর মামলার শুনানির তারিখ ধার্য আছে। মামলার আসামি সাঈদ আহমদ, আবু ওবায়দা ও শাহজাহান কারাগারে রয়েছেন। যার বাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল, সেই বিএনপি নেতা ডা. আরিফ আহমদ জামিনে আছেন।

এদিকে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর হরকাতুল জিহাদের সদস্য ও শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি মাসুদ আহমেদ শাকিল ওরফে সুমনকে (৪৫) রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের বিশেষায়িত অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট। গ্রেপ্তার শাকিল নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামির (হুজি) সদস্য। জামিনে গিয়ে এক যুগের বেশি সময় পলাতক ছিল।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, হত্যাচেষ্টা মামলাটি ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ৪৭ জন সাক্ষী রয়েছেন। ইতিমধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানকে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

এই মামলায় উল্লেখযোগ্য সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল (কোতোয়ালি থানার সাবেক এসআই) ও অভিযোগপত্র দাখিলকারী সিআইডির পরিদর্শক সিলেট ক্যাম্পের সাবেক পুলিশ পরিদর্শক প্রণব কুমার রায়সহ চার জন। ২০০৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন আবদুল আউয়াল। এ ছাড়া সাক্ষ্য দিয়েছেন মিজানুর রহমান এবং ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. কামাল পারভেজসহ আরও তিন জন।

হত্যাচেষ্টা মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মফুর আলী বলেন, শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিচারকাজ আরও আগে নিষ্পত্তি হতো, যদি আসামিদের নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির করা যেতো। সাক্ষীদের কারণে মামলাটির কার্যক্রম এখন গতিহীন।

মামলার আসামিরা দেশের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছে উল্লেখ করে মফুর আলী বলেন, তাদের বিরুদ্ধে দেশের অন্যান্য আদালতে একাধিক মামলা বিচারাধীন। এজন্য দায়িত্বশীলরা যথা সময়ে তাদের সিলেটের ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে পারছেন না। পুরাতন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হলে এই মামলার কার্যক্রমে গতি আসবে।

মামলার তদন্তে ও গ্রেপ্তার জঙ্গিদের জবানবন্দিতে ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হিসেবে মুফতি হান্নান, আবু সাঈদ, শাকিল, আবু ওবায়দা, শাহজাহান, ডা. আরিফ, আকাশ, আবু মুসা, লোকমান, ফেঞ্চুগঞ্জের জাফর, আবুবকর, ডালিম, রাজু, অমিত, সবুজ, আলমগীর, এহ্তেশাম ও পুলিশ সদস্য নূর ইসলামের নাম উঠে আসে।