ডলারের অগ্রিম বুকিংয়ের সীমা তিন মাস

ডলারের অগ্রিম বুকিংয়ের সীমা তিন মাস

ফাইল ছবি

ডলারের অগ্রিম বুকিংয়ের সীমা কমাল বাংলাদেশ বাংলাদেশ। গত রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ডলারের ভবিষ্যৎ দাম (ফরওয়ার্ড রেট) প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা ৩৫ পয়সা নির্ধারণের নতুন নিয়ম চালু করে তা এক বছরের আগাম বুকিংয়ের সুযোগ রাখা হয়। তবে এই সিদ্ধান্ত জানানোর একদিনের মাথায় তার এই ভবিষ্যত বুকিংয়ের সীমা ফের সংশোধন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আরো একটি নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ডলারের অগ্রিম বুকিংয়ে নির্ধারিত সীমা আগে এক বছর বলা হলেও এখন তা কমিয়ে তিন মাস নির্ধারণ করা হল। অর্থাৎ দেশের আমদানিকারকেরা সর্বোচ্চ ৩ মাসের জন্য ডলারের অগ্রিম বুকিং দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে উল্লেখিত সময় অনুযায়ীই ডলারের ভবিষ্যৎ দাম নির্ধারণ করবে ব্যাংকগুলো। বর্তমানে ডলারের দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারিত আছে।

এক্ষেত্রে তিন মাসের জন্য অগ্রিম বুকিংয়ের ক্ষেত্রে ডলার ক্রয়কারীকে দিতে হবে ১১৩ টাকা ৮৫ পয়সা। এদিকে, ভবিষ্যতের জন্য ডলার বুকিংয়ের সুযোগ একটি নিয়মিত কার্যক্রম উল্লেখ করে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ভয় বা শঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, সেটি পরিচিত স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। জুলাইয়ে স্মার্ট রেট ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। আগস্টে তা বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, যা চলতি সেপ্টেম্বরেও অপরিবর্তিত রয়েছে। 

তবে গত রোববার ডলারের ভবিষ্যত বুকিংয়ের ক্ষেত্রে জারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এক বছর পর ব্যাংক ডলারের দাম বর্তমানের চেয়ে স্মার্ট হারের সাথে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি নিতে পারবে।

জানা গেছে, ডলার ক্রয় ও বিক্রয়- উভয় ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ দাম নির্ধারণ করা যায়। তাই চাইলে কোনো আমদানিকারক এখনই ডলার কিনে রেখে পরে পণ্য আমদানি করতে পারেন। এ জন্য তাকে ডলারের বর্তমান দামের সাথে বাড়তি কমিশন দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে দাম কমে গেলেও আমদানিকারককে বর্তমান দামই দিতে হবে। আবার দাম বেড়ে গেলে তিনি সুবিধা পাবেন; অর্থাৎ বাড়তি দাম দিতে হবে না।

আমদানিকারকের মতো রফতানিকারকেরাও ডলারের ফরোয়ার্ড সেল বা অগ্রিম বিক্রি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ডলারের দাম বেড়ে গেলে ওই রফতানিকারককে লোকসান গুনতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের জোগান ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে সময়-সময় ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম প্রতি মাসেই বাড়ছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি মাস থেকে পণ্য বা সেবা খাতের রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের ডলার কেনায় দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা। আর আমদানিকারকদের জন্য ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।

ভবিষ্যত ডলার বুকিং নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার নির্দেশ: ভবিষ্যতের জন্য ডলার বুকিংয়ের সুযোগ একটি নিয়মিত কার্যক্রম। ডলার সঙ্কট যে আরো বাড়বে বিষয়টা এমন নয়। তাই এ বিষয়ে ভয় বা শঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: মেজবাউল হক সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আগাম ডলার বুকিংয়ের নির্দেশনায় জনমনে শঙ্কা সৃষ্টি হয়। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, আগামীতে ডলার সঙ্কট আরো বাড়বে। এজন্য আগে থেকে ডলার বুকিং দিতে বলা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, এক বছর পর ডলারের রেট ১২৩ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এমন সব তথ্য আর আলোচনা এখন সবার মুখে মুখে।

এমন পরিস্থিতিতে ডলার বুকিং নিয়ে শঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মুখপাত্র মো: মেজবাউল হক বলেন, ডলার বুকিং একটি নিয়মিত বিষয়। বড় বড় প্রতিষ্ঠান আমদানি মূল্য যথা সময়ে পরিশোধ করতে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। এর মানে ভবিষ্যতে ডলার সঙ্কট আরো বাড়বে বিষয়টা এমন নয়। কমতেও পারে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলেও জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র।