লোক দেখানো ইবাদত থেকে বাঁচার উপায়

লোক দেখানো ইবাদত থেকে বাঁচার উপায়

সংগৃহীত

ইবাদত হতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই। তাতে যদি থাকে লৌকিকতার গন্ধ তাহলে সে ইবাদত প্রকৃত অর্থে আর ইবাদত থাকে না। কারণ, তখন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার পরিবর্তে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় মানুষকে দেখানোর বিষয়টি। আরবিতে একে বলে রিয়া।

‘কেউ ইবাদত করে আর তার উদ্দেশ্য থাকে মানুষকে দেখানো কিংবা লোকে যাতে বলে, এই ব্যক্তি একজন সৎ মানুষ। এখানে মূলত মানুষের সন্তুষ্টি লাভই মুখ্য থাকে। আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার বিষয়টি পাওয়া যায় না। ইবাদতে যখন ইখলাস থাকে না তখনই এমনটি হয়।’ (লিসানুল আরব : ৮/১৬৬)

সঙ্গে সঙ্গে এটা মুনাফিকের আলামতও। কোরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মতো, যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মতো, যার ওপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর ওপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ওই বস্তুর কোনো সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।’ (সুরা বাকারা : ২৬৪)

আরেক জায়গায় এসেছে, ‘অবশ্যই মুনাফিকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সঙ্গে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুত তারা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায়, একান্ত শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।’ (সুরা নিসা : ১৪২)

রাসুল (সা.) বলেছেন হাদিসে রিয়াকে ছোট শিরক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের প্রতি সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা করি ছোট শিরক তথা রিয়ার ব্যাপারে।’ (ফাতহুল গফফার : ০৪/২১০৪)

হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ বলেন, ‘আমি অংশীবাদিতা (শিরক) থেকে সকল অংশীদারের তুলনায় বেশি মুখাপেক্ষীহীন। যে কেউ কোনো আমল করে এবং তাতে অন্য কাউকে আমার সঙ্গে শরিক করে, আমি তাকে ও তার আমল উভয়কেই বর্জন করি। (মুসলিম : ২৯৮৫)

যেহেতু এখানে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদতের পাশাপাশি মানুষকে দেখানোর বিষয়টি রয়েছে কেমন যেন তাতে নিয়তের ভেতর শিরক ঢুকে গেছে।

লোক দেখানো ইবাদত বন্দেগি কবুল হয় না

কোরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেছে, ‘সুতরাং বড় দুর্ভোগ সেসব নামাজির, যারা তাদের নামাজের ব্যাপারে বেখবর। যারা তা আদায় করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে।’ (সুরা মা'উন : ৪–৬)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রচারের জন্য ইবাদত করে, আল্লাহ তাকে প্রচার পর্যন্তই দেবেন। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদত করে, আল্লাহ তাকে লোক দেখানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবেন (বুখারি : ৬৪৯৯)

লোক দেখানো ইবাদত থেকে বাঁচুন

কারও যদি নিজের অনিচ্ছায় রিয়ার বিষয়টি চলে আসে, প্রকৃতপক্ষে সে তেমনটির ইচ্ছা করে না বরং তা থেকে বাঁচতে চায় তাহলে তার ইবাদত কবুল হবে। রিয়া থেকে বাঁচতে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি যত্নশীল হলে আশা করা যায় অন্তর থেকে রিয়ার মন্দ প্রভাব দূর হয়ে যাবে।

এক. রিয়ার পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করা। রিয়ার সঙ্গে ইবাদত করলে পরিণতি কী হবে তা ভাবা।

দুই. অন্তর থেকে সম্মান প্রীতি দূর করা।

তিন. নিজেকে অতি ক্ষুদ্র ভাবা।

চার. ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করা। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য।

পাঁচ. মৃত্যুর কথা অধিক থেকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করা।

ছয়. সৎ ও খোদাভীরু মানুষের সংস্পর্শে থাকা। তাঁদের থেকে নিয়মিত দীক্ষা নেওয়া।

সাত. শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে সর্বদা আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া।

আট. রিয়ামুক্ত জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা।

এই কয়েকটি বিষয় অনুযায়ী চললে আশা করা যায় অন্তর থেকে রিয়ার মন্দ প্রভাব দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই সকল আমল করার তাওফিক দান করুন! আমিন!

লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।